১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

বিশ্বকাপ পেতে যাচ্ছে নতুন ফাইনালিস্ট, ভারতের স্মৃতিতে পুরনো ক্ষত

দক্ষিণ আফ্রিকা ও আফগানিস্তান মুখোমুখি হবে, ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোব্যাগোর তারৌবা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে - ছবি : বিবিসি

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২৪ প্রায় শেষ পর্বে চলে এসেছে। চারটি দল ফাইনালে খেলার জন্য বাংলাদেশ সময় অনুযায়ী বৃহস্পতিবার ভোরে ও রাতে মাঠে নামবে।

ভোর সাড়ে ৬টায় দক্ষিণ আফ্রিকা ও আফগানিস্তান মুখোমুখি হবে, ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোব্যাগোর তারৌবা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে।

আর রাত সাড়ে ৮টায় ভারত ও ইংল্যান্ড মুখোমুখি হবে গায়ানার প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামে।

দক্ষিণ আফ্রিকা ও আফগানিস্তানের জন্য বিশেষ একটা মঞ্চ এই সেমিফাইনাল, যেই জিতুক প্রথমবারের মতো ফাইনালে উঠবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের।

দক্ষিণ আফ্রিকা ২০০৯ সালে পাকিস্তান ও ২০১৪ সালে ভারতের কাছে হেরে সেমিফাইনাল থেকে ছিটকে পড়েছিল।

আফগানিস্তান পেছনে ফিরে তাকাবে না, তারা এখানে এসেছে ইতিহাস গড়ে, সামনে যা হবে সবই ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবে। মাত্র ২০০৪-০৫ সালের দিকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে শুরু করা দলটি অস্ট্রেলিয়াকে বিদায় করে সেমিফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে।

ভারত ১১ বছর ধরে আইসিসি ইভেন্টে জয় পায় না। প্রতিবারই ফেভারিট হয়ে আসে, বিশ্বের সেরা বোলার ও ব্যাটারদের নিয়ে কখনো সেমিফাইনাল, কখনো ফাইনাল ম্যাচে হেরে যায় দলটি।

২০২২ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে দক্ষিণ আফ্রিকা ও সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১০ উইকেটে হারের পর বিশ্ব ইভেন্টে একমাত্র অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হেরেছে ভারত, ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে।

সেই স্মৃতির ক্ষত এখনো ভারতের ক্রিকেটার তো বটেই, সমর্থকদের মনেও তাজা।

যেমন ২০২৩ বিশ্বকাপে রোহিত শর্মাকে আউট করতে অসাধারণ ক্যাচ নিয়েছিলেন ট্রাভিস হেড, এবারে সুপার এইট পর্বে ট্রাভিস হেডকে আউট করতে ক্যাচ নেন রোহিত শর্মা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই ৭ মাস আগের সেই ম্যাচের কথা মনে করিয়ে দেন।

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পারবে আফগানিস্তান?
আফগানিস্তান ২০ বছরের মধ্যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যে সমীহ আদায় করে নিয়েছে, অনেক ক্রিকেট দল সেটা ৫০ বছরেও পারেনি।

সেমিফাইনালের এই লড়াইয়ে কোনো বিশ্লেষকই আফগানিস্তানের বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকাকে এককভাবে ফেভারিট বলছেন না, আসলে বলতে পারছেন না।

যে দল প্রথম রাউন্ডে নিউজিল্যান্ড, দ্বিতীয় রাউন্ডে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে এখানে এসেছে তাদের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকাকে কায়দা করেই লড়াই করতে হবে।

আর দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট ইতিহাসে সেমিফাইনাল নিয়ে তেমন সুখস্মৃতি নেই।

১৯৯২, ১৯৯৯, ২০০৯, ২০১৫, ২০১৪, ২০২৩- ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে একের পর এক সেমিফাইনাল একের পর এক হার। বড় ব্যবধানে হার, জিততে থাকা ম্যাচে হার, অল্প ব্যবধানে হার, ডাকওয়ার্থ লুইস মেথডে হার, ভুল হিসেব করে হার এ সবই ঘটেছে দক্ষিণ আফ্রিকার সেমিফাইনালের ইতিহাসে।

এদিকে আফগানিস্তান অনেক বেশি নির্ভার, তাদের মনে যত ভার ছিল তা বাংলাদেশের বিপক্ষে ঝরে গেছে।

বছর ছয়েক আগে টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়া আফগানিস্তান এখন বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলবে, এই কথা টুর্নামেন্ট শুরুর আগে বলেছিলেন কেবল ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেট কিংবদন্তী ব্রায়ান লারা।

তথ্যটি অপ্রাসঙ্গিক বা কাকতালীয় হতে পারে, তবে আফগানিস্তান দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সেমিফাইনাল খেলবে ব্রায়াল লারা ক্রিকেট একাডেমির মাঠে।

আফগানিস্তানের শক্তির জায়গা তাদের বোলিং, দক্ষিণ আফ্রিকা টুর্নামেন্ট জুড়ে অলরাউন্ড পারফর্ম করেছে, কঠিন হয়ে আসা ম্যাচ জিতেছে।

এই ম্যাচটা হতে যাচ্ছে আফগানিস্তানের বোলারদের বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটারদের লড়াই, এটা মনে করছেন নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক স্টিভেন ফ্লেমিং।

ইএসপিএন ক্রিকইনফোতে ম্যাচের আগের বিশ্লেষণে ফ্লেমিং বলেন,‘ফারুকি আফগানিস্তানের জন্য বড় শক্তির জায়গা, যেহেতু আফগানিস্তান স্পিন নির্ভর দল।’

‘ফারুকি তাদের কাজটা সহজ করে দেয়, স্পিনাররা আক্রমণে আসার আগেই টপ অর্ডারের ১টি বা ২টি উইকেট নিয়ে তাদের কাজ সহজ করে দেন ফারুকি।’

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২৪-এর সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি এখন পর্যন্ত ফজলহক ফারুকি, মাত্র ৯ গড়ে ৭ ম্যাচে ১৬ উইকেট নিয়েছেন তিনি।

বাঁহাতি এই পেসারের এখন তুলনা হয় নিউজিল্যান্ডের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ফাস্ট বোলার ট্রেন্ট বোল্টের সাথে, দু’জনই ডান হাতি ওপেনারদের জন্য একরকম ত্রাস।

সাথে আছে আফগানিস্তানের এক ঝাঁক স্পিনার, যাদের নেতা রাশিদ খান। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে প্রায় সব দলই রাশিদ খানকে দলে চাইবে, ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের সবচেয়ে আলোচিত ক্রিকেটারদের একজন আফগানিস্তান দলের এই অধিনায়ক।

আছেন নূর আহমেদ, যিনি রাশিদ খানের মতোই বল করেন, তবে বাঁ হাতে।

আরো আছেন আফগানিস্তানের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মোহাম্মদ নবী। নবী ২০০৪ সাল থেকেই আফগানিস্তানের হয়ে ক্রিকেট খেলছেন, ৩৯ বছর বয়সী এই অলরাউন্ডারের ছেলেও এবারে আফগানিস্তানের হয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট খেলবেন।

আফগানিস্তানের ব্যাটিং অনেকটাই টপ অর্ডার নির্ভর, বাংলাদেশের বিপক্ষে আফগানিস্তান দল করে ১১৫ রান, দুই ওপেনার করেন ৫৯ রান। একই ভাবে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও আফগানিস্তানের করা ১৪৮ রানের মধ্যে ১১৮ রান আসে ওপেনারদের জুটি থেকে।

রহমানুল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরানের ওপর এখন অনেকটাই নির্ভর করবে আফগানিস্তানের সেমিফাইনাল কেমন হতে চলেছে।

ওদিকে দক্ষিণ আফ্রিকা এখনও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২৪-এ কোনো ম্যাচে হারেনি।

কখনো বাউন্ডারি লাইনে ছয় ঠেকিয়ে, কখনো ৪ রানে ৩ উইকেট থেকে জুটি গড়ে হলেও ম্যাচ জিতেছে দক্ষিণ আফ্রিকা।

এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকা শেষ দিকে রোমাঞ্চকর হয়ে ওঠা ম্যাচে হেরে বসত, কিন্তু এবারে সেটা উল্টো হচ্ছে।

তবে আফগানিস্তানের কোচ ইংল্যান্ডের সাবেক ব্যাটার জনাথন ট্রট মনে করেন সম্পূর্ণ চাপ দক্ষিণ আফ্রিকার ওপর থাকবে। ট্রট জন্মগতভাবে দক্ষিণ আফ্রিকান, কেপটাউনে জন্ম, ক্রিকেট খেলেছেন ইংল্যান্ডের হয়ে, কেভিন পিটারসেনের মতো।

দক্ষিণ আফ্রিকার কোচ রব ওয়াল্টার বলেন,‘টুর্নামেন্ট এমন একটা জায়গায় আছে যেখানে কেউ যদি চাপ নেই বলে সেটা মিথ্যা বলা হবে। আমাদের মাঝে এখন দুটি অনুভূতির মিশ্রণ আছে চিন্তা আছে, সাথে আছে উত্তেজনা!’

দক্ষিণ আফ্রিকার আক্রমণ ফাস্ট বোলার নির্ভর। কাগিসো রাবাদা, মার্কো ইয়ানসেন, বার্টমান আছেন, সাথে স্পিনার কেশাভ মহারাজ ও তাবরাইজ শামসি।

ব্যাটারদের মধ্যে ফর্মে ফিরেছেন কুইন্টন ডি কক, দুর্দান্ত ফর্মে আছেন হেইনরিখ ক্লাসেন।

ক্লাসেন হার্ড হিটার হিসেবে পরিচিত কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে তিনি উইকেটের মান ও পরিস্থিতি বুঝে খেলতে পারেন।

স্টিভেন ফ্লেমিং-এর মতে, ক্লাসেন কীভাবে আফগানিস্তানের স্পিনারদের সামলান এটার ওপর এই সেমিফাইনাল অনেকটা নির্ভর করতে পারে।

এছাড়া আছেন ডেভিড মিলার, রিজা হেনড্রিক্স।

তারৌবার এই উইকেট অসম বাউন্সের জন্য পরিচিত, যেটা দক্ষিণ আফ্রিকান ফাস্ট বোলারদের বাড়তি সুবিধা দিতে পারে।

এই পিচে ঘাস আছে, সাথে আছে ফাটল। ফাটল আবার আফগানিস্তানের স্পিনাররা ভালো কাজে লাগাতে পারেন।

তবে রানের হিসেব করলে এই উইকেট নিয়ে নিশ্চিত কোনো কথা বলা মুশকিল। ২০২৩ সালের এক সিরিজে এই মাঠে ইংল্যান্ড ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২৬৭ রান তুলেছিল ২০ ওভারে, ঠিক দুই দিন পরে একই উইকেটে ১৩২ রানে অলআউট হয়ে গিয়েছিল ইংল্যান্ড।

ভারত-ইংল্যান্ড সেমিফাইনালে আলোচনায় ১০ উইকেটের সেই হার
সাম্প্রতিক ইতিহাসে ভারতকে যে তিনটি হার সবচেয়ে বেশি পীড়া দেয় তার একটি পাকিস্তানের বিপক্ষে ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ১০ উইকেটে হার, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ১০ উইকেটে হার এবং ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হার।

আবারো তাদের প্রতিপক্ষ সেই ইংল্যান্ড, আবারো সেমিফাইনাল। এই সেমিফাইনালে দুটি দল দুটি ভিন্ন প্রেক্ষাপট থেকে উঠে এসেছে। ভারত সবাইকে হারিয়ে এসেছে, ইংল্যান্ড মনে হচ্ছিল গ্রুপ পর্ব থেকেই বাদ! সেখান থেকে সুপার এইটে উঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও আমেরিকাকে একরকম উড়িয়ে দিয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে ইংল্যান্ড।

ভারত এবারে বলা যায় ভিরাট কোহলির কোনো অবদান ছাড়াই বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে। একদম শুরু থেকেই ফ্লপ কোহলি, রোহিত জ্বলে উঠেছেন ঠিক সেমিফাইনালের আগে।

জসপ্রিত বুমরাহ অসাধারণ বল করছেন, আর ম্যাচ জয়ে অবদান রাখছেন অলরাউন্ডার হার্দিক পান্ডিয়া।

ওদিকে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ফর্ম ফিরে পেয়েছেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক জস বাটলারও।

ফিল সল্টও আছেন দারুণ ছন্দে, ইংল্যান্ডের দলটা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের জন্য একেবারেই উপযোগী একটা দল।

দুর্দান্ত সব ফাস্ট বোলার, দারুণ সব অলরাউন্ডার, সাথে বিশ্বের অন্যতম সেরা টপ অর্ডার ব্যাটিং নিয়ে ইংল্যান্ড সেমিফাইনালে ভারতের মুখোমুখি হবে।

তবে গায়ানার প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামের পিচে স্পিনাররা সুবিধা পান, তাই রাভিন্দ্রা জাদেজা, কুলদীপ ও আকসার প্যাটেলকে কীভাবে সামলান ইংল্যান্ডের ব্যাটাররা এটাই হতে পারে দেখার বিষয়।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement
বৈশ্বিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সংস্কারে জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের আহ্বান ফেনীতে মুক্তিপণ না দেয়ায় শিশু খুন, গ্রেফতার ৩ কিশোর ড. ইউনূসের সাথে এসএফও প্রতিনিধিদলের বৈঠক সিরিজ নিশ্চিত করতে চায় দক্ষিণ আফ্রিকা, সমতা লক্ষ্য পাকিস্তানের হালাল পণ্যের বাজার প্রসারে বাংলাদেশের সাথে কাজ করবে মালয়েশিয়া শমী কায়সারের জামিন স্থগিত দেড় যুগ পর সিলেটে জামায়াতের কর্মী সম্মেলন কাল হালাল পণ্যের বাজার প্রসারে একসাথে কাজ করবে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া ৫ বছর পর আফগানিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি জিতল জিম্বাবুয়ে জাহিদ-পলক-আজমসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলা দেশে এলো ইউক্রেন থেকে আমদানি করা গম

সকল