দাঙ্গায় পণ্ড হলো যত ক্রিকেট ম্যাচ
- ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৮:০৫, আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৮:৪৫
দিল্লির রাজপথে সহিংসতায় এ পর্যন্ত অন্তত ৪২ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় দেশটিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষ ব্যথিত হয়েছেন। বিশ্বে মাঝে মধ্যেই ঘটছে এমন সহিংসতার ঘটনা। রাজপথের এমন সহিংসতা কখনো কখনো ক্রিকেট মাঠেও দেখা গেছে। প্রায়ই আবহাওয়ার কারণে যেমন ম্যাচ পরিত্যাক্ত হয়, মানবসৃষ্ট কারণে তেমনই বেশ কয়েকবার ক্রিকেট ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়েছে। সহিংসতার কারণে ক্রিকেট ইতিহাসে থেকে ৫টি ক্রিকেট ম্যাচ পরিত্যাক্তের ঘটনা তুলে ধরা হলো-
ইন্ডিয়া-ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ইডেন গার্ডেন, কোলকাতা, ১৯৬৬/৬৭
ক্রিকেটের ইতিহাসে কালো অধ্যায় হয়ে আছে এ দিনটি। স্বাগতিক ভারত ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যকার দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচ ছিল এটি। শক্তিশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম ম্যাচটি জিতে ১-০ লিড নিয়েছিল। মাঠ কর্তৃপক্ষ কালোবাজারে অনেক বেশি টিকিট ছেড়েছিল। ফলে প্রথম দিন এতো বেশি দর্শক সমাগম হয়েছিল যে কোলকাতার ইডেন গার্ডেন উপচে পড়েছিল দর্শকদের ভিড়ে। ৮০ হাজারে আসনেও সংকুলান হয়নি দর্শকের। ২য় দিন অবস্থা চরম খারাপ হয়েছিল। এদিন এতো দর্শক এসছিল যে গ্যালারি ছাপিয়ে মাঠে ঢুকে পড়ছিল। পুলিশ ও মাঠ কর্তৃপক্ষ কোনোভাবেই দর্শকদের থামাতে পারছিলেন না। দর্শকদের মাঠ থেকে বের করতে লাটি চার্জ শুরু করে তখনই পুলিশের সাথে দর্শকের দাঙ্গা বেধে যায়। সাগরের মতো উত্তাল জনতা চড়াও হয় পুলিশের ওপর। এ ঘটনায় ওই দিনের মতো খেলা স্থগিত করা হয়। পরের দিন এই পরিস্থিতিতে সফরকারীরা খেলতে রাজি হলে খেলা আবারও মাঠে গড়ায়। শক্তিশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ইন্ডিয়া পরাজিত হয়।
পাকিস্তান-ইংল্যান্ড, করাচি, ১৯৬৯
সম্ভবত ক্রিকেটের ইতিহাসে এটি সবচেয়ে বড় দাঙ্গার ঘটনা। পাকিস্তানের করাচিতে ইংল্যান্ড ও পাকিস্তানের মধ্যকার তিন ম্যাচ টেস্ট সিরিজের ৩য় ম্যাচের ঘটনা। এর আগে দুদলের সংঘর্ষের মধ্যেই দুটি টেস্ট সম্পন্ন হয়েছে।
পাকিস্তানে ছাত্র রাজনীতির অচলাবস্থা ইতোমধ্যে লাহোর ও ঢাকা ম্যাচকে প্রভাবিত করেছিল। ৩য় ম্যাচের দ্বিতীয় দিন শেষে ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংস ব্যাট করে ৬ উইকেটে ৪১২ রান করে। পরের দিন ইংল্যান্ডের অ্যালান কোট সেঞ্চুরির আগে ৪টি শর্ট হাঁকান। এরপরই দর্শকদের মাঝে রিয়োট ছড়িয়ে পড়ে। ছাত্ররা মাঠের মধ্যে ঢুকে পড়ে। মাঠের পিচ নষ্ট করে এবং ভিআইপি গ্যিালারিতে আগুন লাগিয়ে দেয়। অবস্থা এতোটা খারাপ হয় যে ম্যাচ বাতিল করতে হয়।
অস্ট্রেলিয়া-ওয়েস্ট ইন্ডিজ, স্যাবাইনা পার্ক, কিংস্টোন, জ্যামাইকা, ১৯৭৮
ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম বাজে ঘটনা হয়ে আছে এ ম্যাচটি। সেবার অস্ট্রেলিয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর করছিল। ফ্রাঙ্ক ওরেল ট্রফির পঞ্চম টেস্ট একেবারে শেষ পর্যায়ে ছিল। সে সময় দর্শক-হাঙ্গামায় পণ্ড হয়ে গিয়েছিল ওই দিনের ম্যাচটি। প্রথম চার টেস্টের তিনটিতে জিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তখন ৩-১ ব্যবধানে এগিয়ে। ৩৬৯ রানের লক্ষ্যে চতুর্থ ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে উইন্ডিজের অবস্থা তখন নাজেহাল। ৯ উইকেটে তুলেছে মাত্র ২৫৮ রান । ঠিক সে সময় স্যাবাইনা পার্কের দর্শকদের মধ্যে সহিংসতা দেখা যায়। গ্যালারি থেকে ইট-পাটকেল ছুড়তে শুরু করে তারা।
সহিংসতার কারণ ওয়েস্ট ইন্ডিজের নবম ব্যটসম্যান ভ্যানবার্ন হোল্ডারের আউট। তার বিরুদ্ধে দেওয়া কট বিহাইন্ডের সিদ্ধান্তটি মেনে নিতে পারেননি দর্শকরা। তার জন্যই এই দাঙ্গা। টেস্ট জয় তো দূরে থাক, দর্শকদের ইট-বৃষ্টির মধ্যে সে সময় অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটারদের মাথা বাঁচানোই মুশকিল হয়ে পড়েছিল। শেষ পর্যন্ত টেস্টটি জেতার আশা ত্যাগ করতে হয় তাদের। খেলাটি পরিত্যক্ত হয়ে যায়।
ইংল্যান্ড-পাকিস্তান, ন্যাটওয়েস্ট ট্রফি, হেডিংলি, ২০০১
এবারের ঘটনা একটি ত্রিদেশীয় সিরিজের। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও পাকিস্তানকে নিয়ে সেবার আয়োজিত হয়েছিল ত্রিদেশীয় ন্যাটওয়েস্ট ওয়ানডে সিরিজ। শুরু থেকে প্রতিটি ম্যাচেই দর্শকদের মাঠে ঢুকে পড়ার বিষয়টি বিতর্ক সৃষ্টি করে। ইংল্যান্ড ও পাকিস্তান ম্যাচে দর্শকদের আচরণ সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। ওয়াকার ইউনিসের দুর্দান্ত বোলিংয়ে সে ম্যাচে ইংল্যান্ড ১৫৬ রানে গুটিয়ে যায়।
জেতার জন্য ছোট লক্ষ্য। পাকিস্তান ম্যাচটা হেসেলেই জিততে পারত। কেননা পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানরা দারুণভাবেই শাসন করছিলেন ইংলিশ বোলারদের। পাকিস্তান যখন জয়ের দ্বারপ্রান্তে তখনই ঘটে অকাঙ্খিত ঘটনা। অতি উৎসাহী দর্শকেরা মাঠে ঢুকে পড়ে। এদের বেশির ভাগই ছিল পাকিস্তানি সমর্থক। আতঙ্কিত ইংলিশ ক্রিকেটাররা এমন অবস্থায় মাঠে থাকার ঝুঁকিটা নিতে চায়নি। ব্যাপারটা খারাপ পর্যায়ে চলে যায় উচ্ছৃঙ্খল দর্শকেরা একজন পুলিশকে প্রহার করলে। সে ঘটনার পর ইংলিশ অধিনায়ক অ্যালেক স্টুয়ার্ট বাকি ম্যাচটি খেলতে রাজি হননি।
ইন্ডিয়া-শ্রীলঙ্কা, কোলকাতা,১৯৯৬
ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে লজ্জাজনক দিন ছিল এটি। ১৯৯৬ ক্রিকটে বিশ্বকাপ কোলকাতার ইডেন গার্ডেনে ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে সেমিফাইনাল ম্যাচ ছিল এটি। কোয়ার্টার ফাইনালে পাকিস্তানকে হারিয়ে শ্রলঙ্কার বিপক্ষে এদিন ভারই ফেভারিট ছিল। শুরুতে দারুণ বল করে শ্রীলঙ্কাকে ২৫১ রানে আটকে ফেলেছিল। শচিন দুর্দান্তভাবে ব্যাট করছিলেন। কিন্তু ৬৫ রানে লেগ সাইটে খেলতে গিয়ে আউট হন তিনি। ২ উইকেটে তখন ৯৮ রান। এরপর ৩২ রান নিতে গিয়ে ভারত হারায় ৬ উইকেট। অবস্থা তখন ৮ উইকেটে ১২০ রান। ভারতের দর্শকরা ভাবলেন আমাদের এখন কিছু করতে হবে। চরম হতাশা থেকে মাঠে মধ্যে তারা বোতল ছুড়ে মারতে শুরু করল। বসার স্টান্ডে আগুন লাগিয়ে দিল।
অবস্থা এতটাই খারাপ হলো যে বল আর মাঠে গড়ালো না। ম্যাচ পরিত্যাক্ত ঘোষণা করা হয়। এর সুবিধা পায় শ্রীলঙ্কা।
সূত্র: স্পোর্টস কিডা
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা