২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৬ পৌষ ১৪৩১, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

থামলেন মাহমুদউল্লাহ, শেষ হলো পঞ্চরত্নের যুগ

থামলেন মাহমুদউল্লাহ, শেষ হলো পঞ্চরত্নের যুগ - ছবি : সংগৃহীত

শেষটা মনে রাখার মতো হলো বটে, তবে এমন করে মনে রাখতে চাননি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। চেয়েছিলেন টেস্টের মতো মাথা উঁচু করে বিদায় নিতে, মনে রাখার মতো কিছু উপহার দিতে। তবে হলো না তার কিছুই। নেই কোনো প্রাপ্তি, আছে কেবল আক্ষেপ-হাহাকার।

গতকাল কেমন এক ইতিহাসের অংশ হয়ে গেল বাংলাদেশ, যা কখনোই চায় না কেউ। মাহমুদউল্লাহর বিদায়ী ম্যাচের আবহ ভুলিয়ে ভারত আগে ব্যাট করে তুলল ৬ উইকেটে ২৯৭ রান, যা আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টির ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

রান প্রসবা হায়দ্রাবাদে রান হবে জানাই ছিল। সেভাবেই প্রস্তুত ছিল দর্শক-সমর্থকেরা। তবে রানের এমন স্রোতে যে ভেসে যাবে বাংলাদেশ, তা হয়তো ভাবেনি কেউ। কেউ না ভাবলেও ঘটেছে তেমনই। সাঞ্জু স্যামসন ও সূর্য কুমার মিলে ‘মাহমুদউল্লাহর’ উপলক্ষটা করে দিলেন ভীষণ পীড়াদায়ক।

বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি টি-টোয়েন্টি খেলা সাবেক এই অধিনায়কের জন্য ভারতের বিপক্ষে এই ম্যাচটা জিততে চেয়েছিল দল। মাহমুদউল্লাহ নিজেও চেয়েছিলেন দলকে একটা জয় উপহার দিয়ে যেতে।

বিদায় বেলায় অবশ্য মাহমুদউল্লাহর জ্বলে উঠা নতুন কিছু নয়। ২০২১ সালে হারারেতে অপরাজিত ১৫০ রানের ইনিংস খেলে দলকে জিতিয়েই সাদা পোষাকের ক্রিকেট ছেড়ে ছিলেন মাহমুদউল্লাহ। আজও তেমন কিছু হয়তো চেয়েছিলেন তিনি।

তবে এদিন আর তার ইচ্ছে পূরণ হয়নি। মাহমুদউল্লাহর প্রাপ্তি বলতে এই ম্যাচে একটা উইকেট। বল হাতে ভারতীয় অধিনায়ক সূর্য কুমারকে ফেরান তিনি৷ যদিও নিজের দুই ওভারে দিয়েছেন ২৬ রান৷ ব্যাট হাতে যেতে পারেননি দুই অংকের ঘরে, থেমেছেন ৯ বলে ৮ রানে।

শেষ ম্যাচে না পারলেও মাহমুদউল্লাহ ক্যারিয়ার জুড়ে এমন কিছু করেছেন, যা তাকে মনে রাখতে বাধ্য করবে। বিশেষ করে নিদাহাস ট্রফির সেই ছক্কাটা হয়ে থাকবে ট্রেড মার্ক।

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে মাহমুদউল্লাহর অভিষেক হয় ২০০৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর। গতকাল শেষবার যখন মাঠে নামেন, তার মাঝে পেরিয়ে গেছে ১৭ বছর ৪১ দিন। সময়ের হিসাবে যা টি-টোয়েন্টিতে কোনো ক্রিকেটারের তৃতীয় দীর্ঘতম ক্যারিয়ার।

শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ডটা দখলে রেখেই টি-টোয়েন্টি ছাড়ছেন মাহমুদউল্লাহ। সব দেশ মিলিয়ে যা তৃতীয় সেরা। সংখ্যায় ১৪১। উপরে কেবল রোহিত শর্মা (১৫৯) ও পল স্টার্লিং (১৪৭)।

এই সময়ে ২৩.৫০ গড়ে মাহমুদউল্লাহ রান করেন ২৪৪৪। যা দেশের জার্সিতে কোনো ক্রিকেটারের দ্বিতীয় সেরা রান। এই সময়ে তার স্ট্রাইকরেট ছিল ১১৭.৩৪। ইনিংস সর্বোচ্চ করেন ৬৪* রান। সব মিলিয়ে ফিফটি সংখ্যা ৮টি।

বল হাতেও পরিসংখ্যান মন্দ নয়। আছে ৭.১৬ ইকোনমিতে ৪১ উইকেট। ১০ রানে ৩ উইকেট ইনিংস সেরা।

তাছাড়া দেশের হয়ে টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ডও তার দখলে। ৭৭টি ছক্কা হাঁকিয়েছেন তিনি। শুধু তাই নয়, আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ম্যাচসেরার দৌড়ে দেশের হয়ে দুইয়ে মাহমুদউল্লাহ। পাঁচবার জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার। ১২ বার ম্যাচসেরা হয়ে শীর্ষে সাকিব।

টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের ৪৯টি জয়ের অংশ ছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। যা দেশের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ক্যারিয়ারে মোট ২৬ বার অপরাজিত ছিলেন রিয়াদ। বাংলাদেশের ব্যাটারদের মধ্যে যা সর্বোচ্চ।

অধিনায়ক হিসেবেও রেকর্ড করেছেন মাহমুদউল্লাহ। দেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৪৩ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। ৩৯ ম্যাচে অধিনায়কত্ব করে দুইয়ে সাকিব আল হাসান। তবে ম্যাচ জয়ে দুজনেই সমানে সমান। তাদের নেতৃত্বে ১৬টি করে ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ।

মাহমুদউল্লাহর এই থেমে যাওয়ার মধ্য দিয়ে শেষ হলো বাংলাদেশ ক্রিকেটের একটা যুগ। পঞ্চরত্নের শেষ ক্রিকেটার হিসেবে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের জার্সি তুলে রাখলেন তিনি।

 


আরো সংবাদ



premium cement