০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ অগ্রহায়ন ১৪৩১,
`

খাশোগি হত্যাকাণ্ড : সৌদি দূতাবাসে যা করতে যাচ্ছে তুরস্ক

তুরস্ক খাশোগির সন্ধানে সৌদি কনস্যুলেটে তল্লাশি চালাবে - ছবি : সংগৃহীত

ইস্তাম্বুলের সৌদি দূতাবাসের পাশে থাকা একটি ক্যামেরার ছবিতে দেখা যাচ্ছে, খাশোগি ২ অক্টোবর সৌদি দূতাবাসে প্রবেশ করছেন। এরপর থেকে তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি 
সৌদি আরবের ভিন্ন মতাবলম্বী সাংবাদিক, জামাল খাশোগির সন্ধানে ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে তল্লাশি চালাবে তুরস্ক। গতকাল মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় এ কথা জানিয়েছে। সৌদি আরব কর্তৃপক্ষ এতে সম্মত আছে বলেও জানিয়েছে তারা। 

এতে আরো বলা হয়, খাশোগির পরিণতি সম্পর্কে তুরস্ক সরকারের চলমান তদন্তের অংশ হিসেবে এই তল্লাশি চালানো হবে। মন্ত্রণালয় বলেছে, তুরস্ক এই অনুসন্ধান চালাচ্ছে স্বাগতিক দেশ হিসেবে কনসুলার সম্পর্কবিষয়ক ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী এবং সৌদি কূটনৈতিক মিশন প্রধানের অনুমতি নিয়ে। খাশোগি যেদিন নিখোঁজ হন, সেদিন থেকেই তার সম্পর্কিত খবর নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে তুরস্কের বিচার, নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা বিভাগ। 

তা ছাড়া, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান বলেছেন, সাংবাদিক জামাল খাশোগি সৌদি কনস্যুলেট থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হয়েছেন বলে রিয়াদ যে দাবি করছে, তার প্রমাণ দিতে হবে সৌদি সরকারকে। তিনি বলেন, খাশোগি কনস্যুলেট থেকে বের হয়ে থাকলে সেখানকার সিসিটিভি ক্যামেরায় তা থাকার কথা। সেটার প্রমাণ সৌদি আরবকে দিতে হবে।
গত সপ্তাহে ইস্তাম্বুলের ওই কনস্যুলেট ভবনে প্রবেশের পর থেকেই সৌদি নাগরিক খাশোগির আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন তার হবু স্ত্রী। সোমবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও নিখোঁজ এ সাংবাদিকের পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তুরস্কের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন, খাশোগিকে সৌদি কনস্যুলেট ভবনের ভেতরে হত্যা করার পর তার লাশ কেটে টুকরা করে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। রিয়াদ এ অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে এরদোগান বলেনÑ ‘তিনি ভবনটি ছেড়ে বেরিয়ে গেছেন’, এটুকু বলেই নিজেদের রক্ষা করতে পারবেন না কনস্যুলেট কর্মকর্তারা। তিনি যদি বেরিয়েই যান, ফুটেজসহ তার প্রমাণ দিতে হবে আপনাদের।

এর আগের দিন তুরস্কের কর্মকর্তারা জানান, খাশোগিকে যে হত্যা করা হয়েছে এ ব্যাপারে ‘সুনির্দিষ্ট প্রমাণ’ পেয়েছেন তারা। গত সপ্তাহে তুরস্কে আসা সৌদি আরবের ১৫ সদস্যের একটি দল এ হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত করেছে বলেও দাবি তাদের। তুরস্কের কর্মকর্তারাও অবশ্য এখন পর্যন্ত তাদের দাবির সপক্ষে কোনো ধরনের প্রমাণ হাজির করেননি।

সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান এর আগে বলেছিলেন, তুর্কি কর্মকর্তারা যদি কনস্যুলেটে তল্লাশি চালাতে চায়, তাহলে তাদের স্বাগত জানানো হবে। এ বিষয়ে ‘লুকানোর কিছু নেই’ বলেও মন্তব্য করেছিলেন তিনি। বছরখানেক ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বাস করা খাশোগি ওয়াশিংটন পোস্টের মতামত পাতায় লেখালেখি করতেন। কনস্যুলেটের ভেতর সাংবাদিক নিখোঁজের ঘটনায় সৌদি আরবের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের জবাব চাওয়া উচিত বলে দাবি জানিয়েছে মার্কিন এ গণমাধ্যমটি। পরে হোয়াইট হাউজে সাংবাদিকদের সাথে কথোপকথনে ট্রাম্পও খাশোগির অন্তর্ধানে উদ্বেগ জানিয়েছেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমি এতে উদ্বিগ্ন। এটি শুনতেও পছন্দ করছি না আমি। আশা করছি দ্রুতই এ রহস্য উদঘাটিত হবে। এখন পর্যন্ত কেউই এ সম্বন্ধে কিছু জানে না।’ সাংবাদিক নিখোঁজের ঘটনাটির বিস্তৃত তদন্ত করতে সৌদি কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। তদন্তের ফলাফল নিয়ে স্বচ্ছতাও চেয়েছেন তিনি। বাগদত্তা হেতিস সেনগিজকে বিয়ে করতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তুলতে গত সপ্তাহের মঙ্গলবার ইস্তাম্বুলের ওই কনস্যুলেটে গিয়েছিলেন খাশোগি। ভেতরে প্রবেশের আগেই কনস্যুলেট কর্তৃপক্ষের কাছে খাশোগিকে তার মোবাইল জমা দিতে হয় বলে জানান তার সাথে যাওয়া হেতিস। অনেক কূটনৈতিক মিশনেই মোবাইল জমা দিয়ে ভেতরে যাওয়ার রীতি রয়েছে।

দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পরও খাশোগি বেরিয়ে না এলে তুর্কি কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেন তার বাগদত্তা। কনস্যুলেট থেকে ফিরে না এলে তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোগানের এক উপদেষ্টাকে সে খবর জানাতেও খাশোগি বলে গিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন হেতিস। তুর্কি-আরব মিডিয়া অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান তুরান কিসলাকসি নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেন, কনস্যুলেট ভবনের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা তুর্কি পুলিশ কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা ক্যামেরাগুলোতেও খাশোগিকে পায়ে হেঁটে বেরিয়ে যেতে দেখা যায়নি। যদিও কূটনৈতিক যানবাহনের আসা-যাওয়া অব্যাহত ছিল। সৌদি আরব অবশ্য প্রথম থেকেই ‘সাংবাদিক নিখোঁজকাণ্ডে’ তাদের জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। খাশোগি যে কনস্যুলেটের ভেতর নেই তা দেখাতে সাংবাদিকদের কনস্যুলেট ভবনের ভেতরে প্রবেশেরও অনুমতি দিয়েছে তারা; ভেতরে থাকা বিভিন্ন আলমারি ও ক্যাবিনেটও খুলে দেখিয়েছে তারা।

বুধবার ব্লুমবার্গ নিউজকে দেয়া সাক্ষাৎকারে সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ জানান, তার সরকারও খাশোগির কী হয়েছে তা জানতে উদগ্রীব। কনস্যুলেটে প্রবেশের কয়েক মিনিট কিংবা এক ঘণ্টার মধ্যেই ওই সৌদি সাংবাদিক বেরিয়ে যান বলেও দাবি করেন তিনি।


আরো সংবাদ



premium cement