ভরা গ্রীষ্মেও কেন বিভিন্ন অঞ্চল কুয়াশাচ্ছন্ন?
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৮ মে ২০২২, ১২:০২
সম্প্রতি বিভিন্ন জেলায় কুয়াশা পড়ছে। সামাজিক মাধ্যমে অনেকে ছবি পোস্ট করছেন। গণমাধ্যমে এ নিয়ে সংবাদও প্রকাশিত হয়েছে।
নরসিংদী, গাইবান্ধা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, টাঙ্গাইল, মুন্সিগঞ্জ, নোয়াখালী জেলা থেকে জানা যাচ্ছে, সেখানে ঘনকুয়াশার দেখা মিলছে সকালে।
খোলা জায়গায়, ধানক্ষেত ও মহাসড়কে এমন কুয়াশা বেশি দেখা যাচ্ছে।
নওগাঁ জেলার স্থানীয় সাংবাদিক শামিনুর রহমান আজ রোববার সকাল ৬টার দিকে রাজশাহীর পথে রওয়ানা দিয়েছেন। জেলার সতিহাট এলাকায় মহাসড়কে পৌঁছে গ্রীষ্মের সকালে যে ধরনের কুয়াশা দেখা যায়, তিনি ঠিক তেমন কুয়াশা দেখতে পেলেন। তাতে বেশ অবাক হয়েছেন তিনি।
কুয়াশাচ্ছন্ন মহাসড়কের ছবি ফেসবুকে পোষ্ট করে লিখেছেন, ‘গতকাল গেলো ঝুম বৃষ্টি, আর আজ সকালে দেখি কুয়াশা। শীতকালের মতো না হলেও বেশ ঘন কুয়াশা। আবার অন্যদিকে গরমও আছে। খুব অদ্ভুত লাগলো কারণ গরমে এমন কুয়াশা চোখে পড়ে না।’
শেরপুরের নালিতাবাড়ি এলাকার ব্যাংক কর্মকর্তা মোঃ আউয়াল হোসেন বিবিসিকে বলছিলেন, ‘আমার বাড়ি থেকে অফিসে যাওয়ার সময় পথে মধুটিলা বলে একটা জায়গা পড়ে। বৃহস্পতিবার সকালে সেখানে দেখলাম বেশ ঘন কুয়াশা।’
গতকাল রাজধানী ঢাকাতেও হালকা কুয়াশা দেখা গেছে।
ওদিকে একই সাথে বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ তৈরি হয়েছে যেটি ধীরে ধীরে আরো শক্তি সঞ্চার করছে।
ঝড়টি আরো শক্তিশালী হলে সেটি নিম্নচাপে পরিণত হবে।
এরপর সেই সাইক্লোন বা ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কিন্তু এখন দেশের এত জায়গায় অসময়ে কুয়াশার কারণ কি?
আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলছেন, ‘মেঘ তাপমাত্রা ধরে রাখে। গরমকালে যখন মধ্যরাতের দিকে আকাশ পরিষ্কার থাকে, মানে মেঘ সরে যায় তখন শেষ রাতের দিকে স্থলভাগের তাপমাত্রা কমে আসতে থাকে। আকাশ পরিষ্কার থাকলে এটা হয়। একই সময়ে আবার বাতাসে যদি আর্দ্রতা অনেক বেশি থাকে সেটা নিচের দিকে চলে এসে কুয়াশা রূপ নেয়।’
তিনি বলছেন, এই মৌসুমে এমন কুয়াশা নজিরবিহীন না হলেও খুব একটা ঘটে না এমন।
এই কুয়াশা ভোর ৫টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত থাকছে।
সূর্য ওঠার সাথে সাথে এই কুয়াশা মিলিয়ে যায়।
এর আগে গত জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদফতর ফগ অ্যালার্ট বা কুয়াশা সতর্কতা জারি করেছিল।
কুয়াশা কিভাবে সৃষ্টি হয়?
কুয়াশাকে আবহাওয়াবিদরা 'লো ক্লাউড' বলে বর্ণনা করে থাকেন।
শীতের সময় তাপমাত্রা কম থাকে এবং মাটিতে থাকা আর্দ্রতা উপরে উঠে গিয়ে কুয়াশা তৈরি করে।
এছাড়া ‘অ্যাডভেকশন ফগ’ বা মাটির তুলনায় বাতাস উষ্ণ এবং আর্দ্রতা বেশি থাকার কারণে যে কুয়াশা তৈরি হয়ে ভেসে বেড়ায়।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের সাবেক পরিচালক ও আবহাওয়াবিদ মোহাম্মদ শাহ আলম বিবিসিকে বাংলাকে বলেছিলেন, কুয়াশা তৈরির পেছনে বাতাসের আর্দ্রতা ও তাপমাত্রার পার্থক্য দায়ী থাকে। তবে এবার রাতে তাপমাত্রা কমে যাওয়ার আগেই কুয়াশা তৈরি হয়ে যাচ্ছে। আর বাতাস কম থাকার কারণে কুয়াশা সরে যেতে পারছে না।
‘কুয়াশা আইসের (বরফের) একটা অংশ। এটা আমাদের দেশে ছোট থাকে, অন্যান্য দেশে তাপমাত্রা অনেক কমে যায় বলে সেটা বড় আকার ধারণ করে ঝড়ে পড়ে, যাকে স্নো বলে। আমাদের দেশে তাপমাত্রা কিছুটা বেশি থাকে বলে স্নো হয় না, তবে মাঝে মাঝে বৃষ্টির মতো ছোট ছোট ফোটা হয়ে ঝড়ে পড়ে,’ শাহ আলম বলেন।
বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতের বিস্তীর্ণ এলাকা এবং চীনেও কুয়াশা তৈরি হয়।
বাংলাদেশে ঘন কুয়াশার কারণ কী?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. হাফিজা খাতুন বলেন, পৌষ মাসে বা পৌষ মাসের শেষে কুয়াশা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে ঘন কুয়াশা তৈরির পেছনে কিছু কারণ রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘জলীয়বাষ্প ঘনীভূত হয়ে মেঘের মতো হয় কিন্তু নিচের মাটি ঠাণ্ডা থাকার কারণে এটি উপরে ওঠে না। এর সাথে যোগ হয় ধুলা এবং গাড়ির ধোঁয়া।’
ঢাকা দূষণের শহর হওয়ার কারণে এখানে ধুলা এবং ধোঁয়ার আধিক্য থাকে। যার কারণে কুয়াশাও ঘন হয়।
এক্ষেত্রে ভারতের রাজধানী দিল্লির উদাহরণ টেনে ড. হাফিজা খাতুন বলেন, ‘সেখানে ঘন কুয়াশার অন্যতম কারণ পরিবেশ দূষণ। আমাদের দেশেও বিশেষ করে ঢাকা শহরে একই ধরণের পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।’
এছাড়া যেখানে তাপমাত্রার উঠানামা বেশি থাকে সেখানেই কুয়াশা তৈরির সুযোগ বেশি থাকে।
একই বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. নাজনীন আফরোজ হক বলেন, ‘দূষণ বেশি হলে কুয়াশাও বেশি হবে।’
এশিয়াতে বাংলাদেশ এবং ভারতে ঘন কুয়াশা বেশি হয়। পাকিস্তানে কুয়াশা হলেও ঘন কুয়াশা কম হয় বলে জানান তিনি।
সূত্র : বিবিসি
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা