২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

বর্ণাঢ্য আয়োজনে ঢাবিতে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা:) পালিত

ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের মাগফিরাত কামনা
ঈদে মিলাদুন্নবী (সা:) উপলক্ষ্যে ঢাবির কেন্দ্রীয় মসজিদে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে বক্তব্য রাখছেন ভিসি ড. নিয়াজ আহমদ খান : নয়া দিগন্ত -


পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ জাঁকজমক ও বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হয়েছে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী সা:। কুরআন তিলাওয়াত ও গজল পরিবেশন অনুষ্ঠান, কাওয়ালি সন্ধ্যা ও নাতে-রাসূল, মাওলিদ মিছিলসহ ঢাবির বিভিন্ন মসজিদে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সময় সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের মাগফিরাত ও আহতদের সুস্থতা কামনা হয়।

ঢাবির মসজিদে মসজিদে দোয়া মাহফিল
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) আলোচনা সভা, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার দিনব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ, বিজনেস অনুষদ, কেন্দ্রীয় মসজিদ, হল মসজিদগুলোতে এ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে অনুষ্ঠিত দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) অধ্যাপক নিয়াজ আহম্মেদ খান বলেন, আমরা এ অনুষ্ঠানকে মসজিদকেন্দ্রিক করেছি। কারণ আমি মনে করি, এসব বিষয়ের সাথে জ্ঞানের একটা সংযোগ আছে। মসজিদ ইবাদতের পাশাপাশি জ্ঞানচর্চারও একটি কেন্দ্র হতে পারে। এ সংস্কৃতিটা আমরা গড়ে তুলতে পারি। সরকার ঈদে মিলাদুন্নবীকে আনুষ্ঠানিকভাবে পালনের জন্য আমাদের পরামর্শ দিয়েছে।
হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রাসূল সা: জীবনের মাঝেই রয়েছে অনুকরণীয় আদর্শ। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের যে মেসেজ, যে লক্ষ্য, তা রাসূলুল্লাহ সা:-ও দিয়েছেন। এই ন্যায্যতার প্রয়োজন সারা বিশ্বের সবার। এই ন্যায্যতার প্রয়োজন সব ধর্মেরই আছে। এ সময় তিনি বৈষমবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা ও আহতদের সুস্থতা কামনা করেন। ওই দোয়া মাহফিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি অধ্যাপক মামুন আহমেদসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

ইনকিলাব মঞ্চের ‘মাওলিদ মিছিল’
বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ সা:-এর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ইনকিলাব মঞ্চের আয়োজনে শতকণ্ঠে নাতে রাসূলের মূর্ছনায় ‘মাওলিদ মিছিল’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে মিছিলটি শুরু হয়। মিছিলটি রাজু ভাস্কর্য থেকে কেন্দ্রীয় মসজিদ, হলপাড়া, ভিসি চত্বর, নীলক্ষেত ঘুরে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে রাজু ভাস্কর্যে এসে শেষ হয়।
ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য মাসউদুর রহমান বলেন, ইনকিলাব মঞ্চের এটি একটি ভিন্নধর্মী আয়োজন। পূর্ববর্তী সরকারের আমলে আমরা এসব আয়োজন করতে পারতাম না। ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন আমাদেরকে নানাভাবে বিভিন্ন ট্যাগ দিয়ে দমিয়ে রাখত। এবার আমরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এটি আয়োজন করতে পেরে ব্যাপক আনন্দিত। তিনি আরো বলেন, গত ১৭ বছর ফ্যাসিবাদী সরকার আমাদের যে আবহমান ইসলামী সংস্কৃতি বিদ্যমান ছিল সেগুলো পালনের ক্ষেত্রে একটা বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তাই আমরা আজ নাতে রাসূল গাওয়ার মধ্য দিয়ে সেই হারানো দিনে ফেরার চেষ্টা করেছি।

আরবি সাহিত্য পরিষদের উদ্যোগে কুরআন তেলাওয়াত ও গজল পরিবেশন
আরবি সাহিত্য পরিষদের উদ্যোগে কুরআন তেলাওয়াত ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় এ অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। ওই অনুষ্ঠানে বিশ্বজয়ী হাফেজ নাজমুস সাকিব, হাফেজ বশির আহমদ, হাফেজ নাসরুল্লাহ আনাস ও আন্তর্জাতিক কারি আবু সালেহ মুহম্মদ মুসা কুরআন তেলাওয়াত করেন। এ ছাড়া সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ইসলামিক গান পরিবেশন বটতলা আকাশ-বাতাস মুখরিত করেন সাইমুম (শিশু বিভাগ), তাজকিরা, মুশায়েরা ও আবাবিল শিল্পীগোষ্ঠী।
অনুষ্ঠানের আয়োজকরা বলেন, পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী সা: উপলক্ষে আমরা এই আয়োজন করেছি। সুস্থ ধারার সংস্কৃতি বিস্তারে এটি আমাদের সামান্য প্রয়াস। এর আগেও স্বৈরাচার সরকারের আমলে আমরা এমন আয়োজন করতে গিয়ে অনেক অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করেছি। যাদের রক্তের বিনিময়ে আমরা আজ এই পরিবেশ পেয়েছি তাদের মাগফিরাত কামনা করি।

গণবিয়ে নিয়ে বক্তব্য
সম্প্রতি ঢাবি বিভিন্ন হলে গণবিয়ে সংক্রান্ত একটি খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও কিছু গণমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। বিষয়টি ঢাবি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এ ধরনের গণবিয়ে আয়োজনের কোনো অনুমোদন কর্তৃপক্ষ কাউকে দেয়নি বা এ ধরনের আয়োজনের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কেউ বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানায়নি। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের প্রচলিত রীতিনীতি এবং বর্তমান সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এ ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠানের সাথে বিশ^বিদ্যালয়ের কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা থাকার সুযোগ নেই। যে বা যেসব শিক্ষার্থী এই উদ্যোগ নিয়েছেন করেছেন, তা তাদের একান্ত ব্যক্তিগত উদ্যোগ। সর্বোপরি ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় একটি বিদ্যায়তনিক প্রতিষ্ঠান এবং বিদ্যা চর্চা করার স্থান। তাই বিশ^বিদ্যালয়ের যেকোনো পর্যায়ে এ ধরনের আয়োজন, অভ্যর্থনা বা গুজব ছড়ানো থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ জানানো হচ্ছে। বিজ্ঞপ্তি

 


আরো সংবাদ



premium cement