১৮ অক্টোবর ২০২৪, ২ কার্তিক ১৪৩০, ১৪ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

পর্যটক খাতে ১ সপ্তাহে ক্ষতি হাজার কোটি টাকা

-


কোটা আন্দোলন ঘিরে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ ও রাস্তায় অচল থাকায় এক সপ্তাহে দেশের পর্যটন খাতে প্রায় হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে শুধু কক্সবাজারেই ক্ষতি হয়েছে প্রায় দেড় শ’ কোটি টাকার। আর সিলেট, চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটিসহ অন্যান্য জেলা মিলে এর অঙ্ক প্রায় ৮৫০ কোটি টাকা।
পর্যটন খাতের সংগঠন টোয়াব বলছে, দেশের চলমান অস্থিরতায় যেসব পর্যটক বিভিন্ন জেলায় আটকা পড়েছিলেন তারা ফেরার পর বর্তমানে প্রায় সব পর্যটন এলাকা শূন্য। অগ্রিম সব বুকিংও বাতিল হয়েছে। এর মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও এ খাতে স্বস্তি ফেরাতে অনেক সময় লাগতে পারে।
সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারের ব্যবসায়ীরা বলছেন তারা এখন হতাশ। দেশের এমন অবস্থায় বিদেশী পর্যটক তো দূরে থাক, দেশী পর্যটকও ঘরের বাইরে বের হন না। তাদের দাবি, গেল এক সপ্তাহে কক্সবাজারের পর্যটনের সব খাতে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। এর প্রভাবে পর্যটন সংশ্লিষ্ট প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক বেকার হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্টহাউজ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার জানান, সেখানে সাড়ে চার শ’ হোটেল ও গেস্টহাউজ রয়েছে। কোটা আন্দোলন ঘিরে চলমান অচলাবস্থার সাত দিনে প্রায় এক শ’ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পাশাপাশি রেস্তোরাঁ ও অন্যান্য খাতে ক্ষতি ৫০ কোটি টাকা। এভাবেই চলতে থাকলে অনেক হোটেল শ্রমিক তাদের চাকরি হারাতে পারে।
কলাতলী মেরিন ড্রাইভ হোটেল মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান জানান, আটকে পড়া পর্যটক ফিরে যাওয়ার পর এই মুহূর্তে কক্সবাজারে পর্যটক নেই। চারদিকে সুনসান নীরবতা। হোটেলগুলোতে তালা ঝুলছে। দেশের পরিবেশ পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে প্রায় সব হোটেল-মোটেল বন্ধ হয়ে যাবে।

এদিকে পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটির অবস্থা একই। এ সময় রাঙ্গামাটির প্রতিটি ঝরনা থাকে পানিতে ভরপুর। প্রতি বছর এ সময় যান্ত্রিক শহর থেকে পর্যটকদের আনাগোনা থাকে পাহাড়ে। কিন্তু দেশে চলমান কারফিউতে গত সপ্তাহজুড়ে রাঙ্গামাটি জেলা পর্যটকশূন্য হয়ে পড়েছে। আগে যেসব পর্যটক এসে আটকা পড়েছিলেন তারাও কারফিউ শিথিল হওয়ার সাথে সাথে নিজ নিজ গন্তব্যে চলে গেছেন। ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, এ সময় রাঙ্গামাটিতে প্রচুর পর্যটক থাকার কথা। কিন্তু দেশের অস্থিরতার কারণে কোনো পর্যটক নেই।

একই অবস্থা সিলেটেও। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদুল আজহায় সময় বন্যায় পর্যটন খাতে ক্ষতি হয়েছে পাঁচশত কোটি টাকার ওপরে। অন্যদিকে গত এক সপ্তাহের আন্দোলনে লোকসান এখন সীমাহীন। এমন পরিস্থিতিতে সরকারি প্রণোদনার বিকল্প নেই। অন্যথায় এ ব্যবসা রক্ষা অসম্ভব।
সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এমদাদ হোসেন জানান, গেল তিন মাস ধরে সিলেটের পর্যটন খাত খুবই কঠিন সময় পার করছে। বন্যা ও আন্দোলনের কারণে সিলেট বিভাগে এই খাতে পাঁচশত কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। এই খাতকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে সরকারি প্রণোদনার প্রয়োজন। সহজ শর্ত ও স্বল্পসুদে ঋণ এবং একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ভ্যাট রেয়াত দেয়া হলে এই খাতের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা কিছুটা হলেও ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ পাবেন।

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের অবস্থাও ভয়ানক। বাংলাদেশ ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশনের (টোয়াব) শ্রীমঙ্গল শাখার সাধারণ সম্পাদক রাসেল আলম জানান, কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতা ও কারফিউ বলবৎ থাকায় মৌলভীবাজারে শ্রীমঙ্গল প্রায় পর্যটকশূন্য হয়ে পড়েছে। এতে লোকসানে পড়েছেন স্থানীয় পর্যটন ব্যবসায়ীরা। গত ১০ দিনে নতুন করে কোনো পর্যটক আসেননি। আগে যেসব পর্যটক এসেছিলেন তারা ফিরে গেছেন। এখন শ্রীমঙ্গলে পর্যটক নেই বললেই চলে।
এর আগে ঈদ ও পয়লা বৈশাখ ঘিরে পাঁচ দিনে দেশের পর্যটন খাতে ১২ হাজার কোটি টাকার ব্যবসার প্রত্যাশা করেছিলেন সংশ্লিষ্টরা। এ ছাড়া দেশের অভ্যন্তরে পর্যটকের সংখ্যা প্রায় ১৪ লাখ ছাড়িয়ে যাবে বলে জানিয়েছিলেন তারা। কিন্তু প্রত্যাশা অনুযায়ী ব্যবসা হয়নি।
বিরাজমান পরিস্থিতিত টোয়াবের সাবেক সভাপতি শিবলুল আজম কোরাইশী বলেন, এমনিতেই নানান সঙ্কটে বিদেশী পর্যটক আকৃষ্ট করা কঠিন হয়ে পড়েছে এর মধ্যে আন্দোলন ঘিরে গত এক সপ্তাহে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এতে করে সামনে ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement