ব্রাহমা নিয়ে বেরিয়ে আসছে থলের বিড়াল
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ০৯ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
গত রমজানজুড়ে খামারিদের সহায়তায় ভ্রাম্যমাণ গাড়িতে ৬০০ টাকা কেজিতে গরুর গোশত বিক্রির ব্যবস্থা করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। ওই সময় ১৫টি ব্রাহমাসহ মোট ৪৪৮টি গরু জবাই করে সুলভমূল্যে বিক্রি করা হয়। সবকিছুর সমন্বয় করে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর। সাদিক এগ্রোকে নিলামের মাধ্যমে ১৫টি ব্রাহমা জাতের গরু দেয়া হয়েছিল, যার মধ্যে ছয়টি গরু তারা রেখে দেয় বলে বিভিন্ন মাধ্যমে উঠে আসে। বিভিন্ন সংস্থাও এমন তথ্যই জানত। কিন্তু সময় গড়ানোর পর বেরিয়ে আসছে ভিন্ন তথ্য। প্রাণিসম্পদ অধিদফতরও বলছে প্রচার হওয়া তথ্যগুলো সঠিক নয়। সংস্থাটি বলছে, ব্রাহমা গরুগুলো সাদিক অ্যাগ্রোর কাছে নয়, দেয়া হয়েছিল বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনকে (বিডিএফএ)। তবে, এ বিষয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে কোনো লিখিত চুক্তিও হয়নি। ‘জনস্বার্থে’ খামারিদের ৪৪৮টি গরু ৭০ হাজার কেজি লাইভ ওয়েট ধরে খামারিদের দেয়া হয়। কথা ছিল ৩৫ হাজার কেজি গোশত সরবরাহ করবেন তারা। কিন্তু খামারিরা ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় কেন্দ্রের জন্য এক লাখ ১৬ হাজার ৮৪৩ কেজি গরুর গোশত এবং তিন হাজার ৬৩২ কেজি খাসির গোশত বুঝিয়ে দেয় রমজান মাসে। এ ক্ষেত্রে খামারিরাও গরু ও খাসি দিয়েছে। পরিবহন খরচ, গোশত প্রস্তুত ও প্যাকিং খামারিরাই করেছে। আর সব কিছুই হয়েছে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তদারকিতে। ‘জনস্বার্থে’ স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনকে উৎসাহী করতে গরুকে প্রাধান্য না দিয়ে গোশতকেই গুরুত্ব দিয়েছে অধিদফতর।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের একাধিক কর্মকর্তা এসব তথ্য জানিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার প্রাণিসম্পদ অধিদফতরে দুদকের দলকেও এমন কথা জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের পরিচালক (প্রশাসন) মলয় কুমার শূর বলেন, ৪৪৮টি গরু নিলামে নয় বুক ভ্যালু পদ্ধতিতে ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনকে দেয়া হয়েছিল। ‘জনস্বার্থে’ চাইলে বুক ভ্যালু পদ্ধতি অনুসরণ করা যায়। এখানে আইনের ব্যত্যয় হয়নি। কাগজপত্রে সাদিক অ্যাগ্রোর কোনো নাম নেই।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, ২০২০ সালে করোনা মহামারীর সময় খামারিরা গোশত ও দুধ বিক্রি করতে পারছিলেন না। তখন সারা দেশের খামারিদের পাশে দাঁড়িয়েছিল ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন। খামারিদের বাঁচাতে তখন তারা ভ্রাম্যামাণ বিক্রয় কেন্দ্রের মাধ্যমে সারা দেশে গোশত ও দুধ বিক্রি করেছে। এসব ভ্রাম্যমাণ বিক্রয়কেন্দ্রের মাধ্যমে সারা দেশের খামারিরা তাদের মৎস্য ও প্রাণিজ পণ্য ন্যায্যমূল্যেই বিক্রি করছেন। এতে প্রান্তিক খামারিরা বেশ উপকৃত হয়েছেন। অনলাইনে দুধ গোশত বিক্রির পদ্ধতিও প্রথম চালু করেছিলেন খামারিরা। খামারিদের এমন উদ্যোগ দেখে পরবর্তীতে ২০২১ সালে মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিনের নির্দেশনায় এই কার্যক্রমের সাথে যুক্ত হয় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং প্রাণিসম্পদ অধিদফতর। প্রাণিসম্পদ অধিদফতর এই কাজে যুক্ত হলেও বছর বছর সরকারি খামার থেকে কিছু গরু দেয়া ছাড়া বাকি সব কাজ করেছেন খামারিরাই।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা: মোহাম্মদ রেয়াজুল হক দুদককে বলেন, গরু আমরা সাদিক অ্যাগ্রোতে দেইনি, আমরা দিয়েছি বিডিএফএকে (বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন)। বিডিএফএ একটি প্রতিষ্ঠিত সংগঠন। তাদের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধন আছে। সংগঠনটি খামারিদের কল্যাণে অনেক কাজ করেছে। খামারি উৎসব, গরু মেলা, প্রশিক্ষণ, সেমিনারসহ নানা কাজ করেছে। করোনাকালে প্রান্তিক খামারিদের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষায় ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় কেন্দ্র তারাই প্রথম চালু করেছে। আমরা ২০২১ সাল থেকে তাদের সাথে যুক্ত হয়েছি। ফলে তাদের ৪৪৮টি গরু দিলেও আমরা তাদের কাছ থেকে এক লাখ ১৬ হাজার ৮৪৩ কেজি গরুর গোশত এবং তিন হাজার ৬৩২ কেজি খাসির গোশত বুঝে নিয়েছি। বাকি গরু খামারিরাই সরবরাহ করেছে। পরিবহন খরচ, গোশত প্রস্তুত ও প্যাকিং খামারিরাই করেছে। কোনো গরু জবাই হয়েছে তা প্রাধান্য না দিয়ে গোশতকেই গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। আমরা তাদের সাথে ব্যবসায়িক কোনো চুক্তিতে যাইনি। জনস্বার্থে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে তারা সুলভমূল্যে বিক্রি করতে চেয়েছে, আমরা তাদের অংশগ্রহণকে উৎসাহী করেছি, এর বেশি কিছু নয়। তিনি বলেন, চলতি বছর রমজান মাসে ঢাকাসহ ৩৫ জেলায় সুলভ মূল্যে গোশত বিক্রির উদ্যোগ নেয়ার পর প্রায় ছয় লাখ মানুষ উপকৃত হয়েছেন। ভ্রাম্যমাণ বিক্রয়কেন্দ্র থেকে সাধারণ মানুষ তাদের প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে পেরেছেন।
গত ৩ মার্চ মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ড. এস এম যোবায়দুল কবির স্বাক্ষরিত এক নির্দেশনায় বলা হয়, ‘সাভারের কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে পালিত ১৫ ব্রাহমা গরুসহ প্রজনন অনুপযোগী ১৬৮টি গোশত খাওয়া উপযোগী গবাদিপশু কালিং (বাছাই কমিটি) কর্তৃক নির্ধারিত বুকভ্যালু এবং ভ্যাট ও উৎস কর পরিশোধ সাপেক্ষে ভ্রাম্যমাণ বিক্রিয় কেন্দ্রের মাধ্যমে নিলামে বিক্রয়ের প্রশাসনিক অনুমোদন প্রদান করা হলো।’ এরপর ১০ মার্চ রাজধানীর ৩০ স্থানে ভ্রাম্যমাণ গরুর গোশত বিক্রির কার্যক্রম উদ্বোধন করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মো: আবদুর রহমান। পুরো রোজাজুড়ে চলে গরুর গোশত বিক্রির কার্যক্রম। এ সময় প্রতিটি গাড়িতে তদারকির জন্য অধিদফতরের একজন করে কর্মকর্তাও ছিলেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা