ঈদে হতাশ করল পর্যটন খাত
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ২৫ জুন ২০২৪, ০০:০৫
ঈদে পর্যটন খাতে ব্যবসায় প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। ব্যয়বৃদ্ধি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, আর্থিক সঙ্কট, বন্যা, রাসেল ভাইপার সাপ আতঙ্ক, বান্দরবানে সন্ত্রাসী হামলা এবং অসহনীয় তাপমাত্রাসহ নানাবিধ দুর্যোগের কারণে লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হয়েছে সম্ভাবনার ট্যুরিজম। সারা বছর দুই ঈদ ঘিরেই যে ব্যবসা হয় সারা বছর মিলেও তা হয় না। ফলে প্রত্যাশা অনুযায়ী পর্যটক না থাকায় এবার সঙ্কটে পড়তে হয়েছে সংশ্লিষ্টদের।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এক দিকে ব্যয় বৃদ্ধিতে মানুষের অর্থনৈতিক টানাপোড়েন অন্য দিকে বিভিন্ন জেলায় বন্যা আর অসহনীয় তাপমাত্রার কারণে প্রায় ৬০ শতাংশ পর্যটক বেড়াতে যাননি। ফলে প্রত্যাশার মধ্যেও হোচট খেতে হয়েছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, ঈদ ঘিরে দেশের পর্যটন খাতে তারা হাজার কোটি টাকার ব্যবসার প্রত্যাশা করেছিলেন। সে অনুযায়ী প্রস্তুতিও নেয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগে তার সবই ভেস্তে গেছে। তারা জানান, বন্যায় সিলেটের সব পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যায়। এ রকম আরো কিছু জেলা আছে যেগুলোতে বন্যার শঙ্কায় পর্যটক ভ্রমণে বিরত ছিলেন। ট্যুরিজম ব্যবসায়ীরা জানান, এবার পর্যটন খাতে প্রায় ৩০ শতাংশের বেশি খরচ বেড়েছে। তারপরও দীর্ঘ ছুটির কারণে পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে অভ্যন্তরীণ পর্যটকের ঢল নামবে বলে তারা প্রত্যাশা করেছিলেন। কারণ দেশে বিদেশী পর্যটক কম আসলেও অভ্যন্তরীণ এসব পর্যটকের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে কক্সবাজার, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেট, কুয়াকাটা। এসব স্পট ঘিরেই প্রত্যাশা ছিল বেশি।
তবে ডলার সঙ্কটে এবার দেশের বাইরে যাতায়াতকারী পর্যটকের সংখ্যা খুবই কম জানিয়ে তারা বলেন, এর মধ্যে যারা বিদেশে যাবেন তাদের পছন্দে রয়েছে ভারতের কলকাতা, শিমলা, মানালিসহ নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ আর থাইল্যান্ড। পর্যটকদের সুবিধের কথা বিবেচনায় ইতোমধ্যে সরকারি ও বেসরকারি বিমান সংস্থাগুলোও ফ্লাইট বাড়িয়েছে। বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের মহাব্যবস্থাপক (পরিকল্পনা) মো: জিয়াউল হক হাওলাদার জানান, একদিকে ঈদ উৎসব ঘিরে দেশের অর্থনীতির গতি বাড়ছে। তিনি বলেন, লম্বা ছুটি ঘিরে পর্যটক বরণে পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে ব্যাপক প্রস্তুতি ও প্রত্যাশা ছিল। যাতে করে কোনো রকমের বিপত্তি ছাড়াই পর্যটকরা আনন্দে সময় অতিবাহিত করতে পারেন। কারণ বর্তমানে দেশে বছরে অভ্যন্তরীণ পর্যটকের সংখ্যা দুই কোটি ছাড়িয়েছে। যার ১৪ লাখ এই ঈদে ভ্রমণ করবেন এমনটা প্রত্যাশা ছিল, যা গতবারের তুলনায় প্রায় দেড় গুণ বেশি। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগে তা হোচট খেয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ঈদ ঘিরে মানুষ যাতে সহজে যাতায়াত করতে পারেন সে জন্য বাড়তি ফ্লাইটের প্রস্তুতি রেখেছিল এয়ার লাইন্সগুলো। সৈয়দপুর, রাজশাহী, যশোর ও বরিশাল সিলেট রুটে প্রস্তুতি ছিল বাড়তি ফ্লাইটের। তবে তাতে আশানুরূপ সাড়া মেলেনি। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সদস্য একজন প্রবীণ সাংবাদিক বলেন, রাসেল ভাইপার সাপের আতঙ্ক এবং গুজবও মানুষের বন বাদারে ঘুরতে যাওয়ার ব্যাপারে বিঘ্ন ঘটিয়েছে।
এ দিকে বিদেশযাত্রা কম হওয়াকে দেশের পর্যটনের জন্য ইতিবাচক উল্লেখ করে টোয়াব বলছে, প্রতিবার ঈদকে কেন্দ্র করে নতুন করে গতি পায় দেশের পর্যটন খাত। বাড়তি আয়োজন থাকে পর্যটন কেন্দ্র, হোটেল, মোটেল, রিসোর্টগুলোতে। তবে পর্যটন কেন্দ্রগুলোর সুযোগ-সুবিধা না বাড়ালে পর্যটকরা আগ্রহ হারাবে।
কক্সবাজার হোটেল মালিক সমিতির একজন নেতা জানান, ইতোমধ্যে কক্সবাজারে প্রায় হোটেল-মোটেলের ৬০ শতাংশ কক্ষ বুকিং বাতিল হয়েছে। এ দিকে পার্বত্যাঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পর্যটকের যাতায়াত বান্দরবানে। কিন্তু থানচিতে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর অপতৎপরতায় সেখানে যেতে মানুষ নিরাপদ মনে করেননি। ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব) সভাপতি শিবলুল আজম কোরাইশী বলেন, পর্যটন খাতে বছরে ১০ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হয়, এর ৩০ শতাংশ হয় দুই ঈদে। এর মধ্যে রোজার ঈদে ২০ শতাংশ এবং কোরবানির ঈদে ১০ শতাংশ ব্যবসা হয়। কিন্তু এবার তা হয়নি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা