১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

বগুড়ায় শজিমেক ছাত্রাবাসে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপে সংঘর্ষ ভাঙচুর, আহত ১৩

তদন্ত কমিটি গঠন
-

বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজের (শজিমেক) ছাত্রাবাসে পড়ার টেবিল দখলকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে কমপক্ষে ১৩জন আহত ও ছাত্রাবাসের ৭টি কক্ষ ভাঙচুর করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে ৮ জনকে শজিমেক হাসপাতালে ভর্তি এবং বাকি পাঁচজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। গত বুধবার রাত ১০টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত ঘণ্টাব্যাপী এ সংঘর্ষ চলে। এ সময় কলেজ ছাত্রাবাসের অন্তত সাতটি কক্ষ ভাঙচুর করা হয়। পুলিশ তাৎক্ষণিক তিনজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দিয়েছে। শজিমেক ছাত্রলীগের সভাপতি শৈশব রায় ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন রনির সমর্থকদের মধ্যে এই সংঘর্ষ ঘটে। এ ঘটনায় কলেজ প্রশাসন গত বৃহস্পতিবার একাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি সভা শেষে মেডিক্যাল কলেজ প্রশাসনের পক্ষ থেকে অধ্যাপক নিতাই চন্দ্র সরকারকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। আহত শিক্ষার্থীদের শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে । আহতদের মধ্যে চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী (৩০তম ব্যাচ) রিদওয়ান হক, একই ব্যাচের তালহা, নাদিম ও আরিফ।

তারা কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি শৈশব রায়ের সমর্থক হিসেবে পরিচিত। অন্য দিকে সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেনের সমর্থকদের মধ্যে সীমান্ত, আলী হাসান, ইসমাম ও অপর্ণ নিলয়কে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ছাড়া দুই পক্ষের অন্তত পাঁচজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। জানা গেছে, ২০২১ সালে ২৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আতিকুরকে সভাপতি ও মোফাজ্জলকে সাধারণ সম্পাদক করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ছয় সদস্যের শজিমেক শাখা ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করে। কমিটি ঘোষণার পরপরই এই দুই নেতা কোন্দলে জড়িয়ে পড়েন। এর পর গত বছরের ৩০ মার্চ দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ, হামলা ও আবাসিক হোস্টেলে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় কলেজ প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটিও করা হয়। তবে সেই তদন্ত কমিটি আজো আলোর মুখ দেখেনি। কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের এমবিবিএস ও ইন্টার্ন শেষ হলে ওই কমিটি বিলুপ্ত করে ২০২৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ শৈশব রায়কে সভাপতি এবং মেহেদী হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে ২৪ সদস্য বিশিষ্ট মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করে। ঘোষিত এই কমিটিতে কাক্সিক্ষত পদ না পাওয়ায় সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেনের অনুসারীরা মনক্ষুণœ হন এবং কলেজে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা নিয়ে বর্তমান সভাপতি শৈশব রায় ও মেহেদী হাসানের অনুসারীদের সাথে মোফাজ্জল হোসেনের অনুসারীদের দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। তৃতীয় বর্ষের (৩১ তম ব্যাচ) শিক্ষার্থী ফুয়াদ ছাত্রলীগ সভাপতি শৈশব রায়ের অনুসারী ও একই ব্যাচের আলী হাসান সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার তাদের মধ্যে একটি পড়ার টেবিল দখলকে কেন্দ্র করে বাকবিতণ্ডা হয়। এর জের ধরে বুধবার রাতে ফুয়াদ তার কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে আলী হাসানের কাছে থাকা পড়ার টেবিলটি নিতে গেলে দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ঘের সূত্রাপত হয়। পরে ক্যাম্পাসজুড়ে এ সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাত ১১টার দিকে কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা: রেজাউল আলম ও পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে গেলে তাদের লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এ সময় মোফাজ্জলের অনুসারী ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিনহাজুল, ছাত্রলীগ কর্মী মোহাইমিন রাইম ও সীমান্তকে অধ্যক্ষের নির্দেশে পুলিশ আটক করে। ছাত্রাবাসের বাইরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেয় পুলিশ। একপর্যায়ে রাত সাড়ে ১১টার দিকে অতিরিক্ত পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। শজিমেক কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম অভিযোগ করেন, বর্তমান সভাপতি শৈশব রায়ের নির্দেশে তার সমর্থক ছাত্রলীগের একাংশ সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর অতর্কিত হামলা করেন। এ সময় তারা কলেজের ছাত্রাবাসের পাঁচটি কক্ষে হামলার তাণ্ডব চালান। এ সময় শিক্ষার্থীদের পড়ার টেবিল, ল্যাপটপ, ফ্রিজ ছাড়াও ঘরের আসবাবপত্রের ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়। তবে সহ-সভাপতি অর্ঘ্য রায় পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, এ ঘটনার সাথে ছাত্রলীগের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেনের অনুসারীরা ক্যাম্পাসে আগের মতো সংঘাত সৃষ্টি করার পাঁয়তারা করছে।

কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি শৈশব রায় বলেন, একটি টেবিল দখলকে কেন্দ্র করে কিছু দুষ্ট প্রকৃতির শিক্ষার্থী বিনা উসকানিতে আমার কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়ে বেশ কয়েকজনকে আহত করেছে। কলেজ প্রশাসন ব্যবস্থা নিলে নতুন করে এ ঘটনা ঘটত না।
কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন রনি বলেন, পড়াশোনা ও রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন শেষে আমি ক্যাম্পাস থেকে অনেক আগেই বেরিয়ে গেছি। এ ঘটনা সম্পর্কে কিছু জানি না।
শজিমেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির এসআই আনিসুর রহমান বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। তিনজন শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। শজিমেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা: রেজাউল আলম বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।


আরো সংবাদ



premium cement