দায় এড়াতে চাইছেন সাবেক চেয়ারম্যান : ডিবি, বিনাদোষে স্ত্রী জেল খাটছেন : সাবেক চেয়ারম্যান
কারিগরি বোর্ডের সার্টিফিকেট জালিয়াতি- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০১:২০
ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) প্রধান হারুন অর রশীদ বলেছেন, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সনদ জালিয়াতির ঘটনায় দায় এড়ানোর চেষ্টা করেছেন প্রতিষ্ঠানটির সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান আলী আকবর খান। অপর দিকে আলী আকবর খান বলেছেন, তিনি মনে করেন বিনা অপরাধে তার স্ত্রীকে আটক করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। আশা করি প্রকৃত সত্য ঘটনা বেরিয়ে আসবে। তবে যদি সত্যিকারে সার্টিফিকেট জালিয়াতি হয়ে থাকে তাহলে প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসাবে তার দায় এড়াতে পারি না।
গতকাল মঙ্গলবার কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সনদ জালিয়াতির ঘটনায় ডিবি কার্যালয়ে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় আলী আকবর খানকে। এরপর পৃথকভাবে তারা সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। হারুন অর রশিদ বলেন, জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাবেক এই চেয়ারম্যানকে দুইদিনের সময় দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
এর মধ্যে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ সম্পর্কে ব্যাখ্যা দেওয়ার সুযোগ পাবেন তিনি। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যদি তিনি সেটা না করেন এবং পরবর্তীতে সনদ জালিয়াতির সাথে তার সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে তার বিরুদ্ধেও আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। তিনি বলেন, কারিগরি বোর্ডের সার্টিফিকেট জালিয়াতির ঘটনায় এখন পর্যন্ত আমরা ছয়জনকে গ্রেফতার করেছি। এর মধ্যে পাঁচজন দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দী দিয়েছেন। তিনি বলেন, কারিগরির চেয়ারম্যানের স্ত্রীকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তিনিও স্বীকার করেছেন। তিনি যে সিস্টেম অ্যানালিস্ট শামসুজ্জামানের কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলেন সেটাও স্বীকার করেছেন। শামসুজ্জামান ও কারিগরির চেয়ারম্যানের স্ত্রী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন। গতকাল আমরা কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সদ্য ওএসডি হওয়া চেয়ারম্যান ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে ডিবি কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। আমরা জানতে চেয়েছি, কারিগরির ওয়েবসাইটের পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে কিভাবে মাসের পর মাস এ ধরনের জালিয়াতি হয়েছে? তিনি ওই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান। সেই প্রতিষ্ঠান থেকে কাগজ নিয়ে যাচ্ছে, সিসিটিভিতেও দেখা যাচ্ছে। তারপর কেন ব্যবস্থা নেয়া হলো না। আবার পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকও সার্টিফিকেটগুলোতে স্বাক্ষর করে গেছেন মাসের পর মাস। এসব কাজ তারা অবহেলায় করেছেন নাকি স্বপ্রণোদিত হয়ে করেছেন, সে বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে চেয়ারম্যান ডিবি কে বলেন, ‘আমাদের লোকবল কম ছিল। তাই নজরদারি করা সম্ভব হয়নি।’ সার্টিফিকেট কেনাবেচা হচ্ছে, সার্টিফিকেট বানানোর পর আবার ওয়েবসাইটেও আপলোড হচ্ছে; এতসব অনিয়মের পরও তিনি (কারিগরি চেয়ারম্যান) দায় এড়াতে পারেন কি না। স্ত্রীর বিষয়টিও তিনি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। ডিবি প্রধান বলেন, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের নজিরবিহীন জালিয়াতির ঘটনা ইতিহাসে শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য কলঙ্কিত ও কালো অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। আমি মনে করি, এ ঘটনার দায় কারিগরির চেয়ারম্যান এড়াতে পারেন না। কোনো সুযোগ নেই। আমরা এখন দেখব, তিনি আসলেই সনদ বিক্রির বিষয়টি জানতেন কি না? তার তো জানার কথা। তিনি তো আসল সার্টিফিকেট বিক্রির মাধ্যমে শিক্ষা ও জাতির মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছেন। সনদ জালিয়াতির ঘটনায় তার দায় সম্পর্কে সঠিক ব্যাখ্যা দিতে হবে। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও চেয়ারম্যান জানার পরও ব্যবস্থা না নেয়ার বিষয়ে ডিবি প্রধান বলেন, আমরা আরেকটু তদন্ত করব। এটা ইচ্ছাকৃত নাকি জেনেও ব্যবস্থা নেননি তা জানার চেষ্টা করব। দায় এড়ানোর তো সুযোগই নেই।
অপর দিকে জিজ্ঞসাবাদ শেষে ডিবি কার্যালয়ের বাইরে বের হয়ে সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান আকবর আলী খান সাংবাদিকদের বলেন, আমি মনে করি আমার স্ত্রী সেহেলি পারভীনকে বিনা দোষে আটক করা হয়েছে। সার্টিফিকেট বাণিজ্যের ঘটনা আমি কিছুই জানি না। তবে কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের প্রধান হিসেবে সার্টিফিকেট বাণিজ্যের দায় অবশ্যই আমি এড়াতে পারি না বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন। আলী আকবর খান বলেন, একটি ঘটনা ঘটেছে, এ বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের শাস্তির ব্যবস্থা করা উচিত। এক্ষেত্রে আমরা লজ্জিত ও দুঃখিত। স্ত্রীকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমার স্ত্রীর বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। গোয়েন্দা সংস্থা কী তথ্য পেয়েছে, তাও জানি না। আমার স্ত্রী সেহেলি পারভীনের সার্টিফিকেট বাণিজ্যের ঘটনায় আমি কিছুই জানি না।
সার্টিফিকেট বাণিজ্যের বিষয়ে কারিগরি বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান বলেন, গোয়েন্দা সংস্থা বের করেছে, এর বেশি কিছু জানি না। সার্টিফিকেটের কাগজ ওয়েবসাইটে পাইনি। ২০ লাখ টাকা ঘুষের বিষয়ে তিনি বলেন, এটি মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। কী পরিমাণ সার্টিফিকেট বাণিজ্য হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মিডিয়ায় শুনতে পেয়েছি পাঁচ কি সাড়ে পাঁচ হাজার। তবে এ বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের প্রধান হিসেবে আপনার দায় আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অবশ্যই এর দায় আমি এড়াতে পারি না। আপনার স্ত্রী বিনা অপরাধে জেল খাটছেন বলে মনে করেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি মনে করি বিনাঅপরাধেই জেল খাটছেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা