২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
ফিরলেই হামলা মামলা হত্যার হুমকি

রূপগঞ্জে মূর্তিমান আতঙ্ক মহি বাহিনী দুই বছর ধরে ১২ পরিবার গ্রাম ছাড়া

-

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের বড়ালু পাড়াগাঁও এলাকায় এখন মহি বাহিনী মূর্তিমান আতঙ্ক। এ বাহিনীর ভয়ে গ্রামের মানুষ প্রতিবাদ করার সাহসটুকুও পাচ্ছে না। মহি বাহিনীর হুমকিতে গত দুই বছর ধরে ১২ পরিবার গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। কয়েকটি পরিবারের বসতবাড়ি ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে এ বাহিনীর সদস্যরা। গ্রামে এলেই হামলা-মামলা লুটপাট ও হত্যার হুমকি দেয়া হয় পরিবারগুলোকে।
বড়ালু পাড়াগাঁও এলাকার বোরহান উদ্দিনের ছেলে ফারুক মিয়া জানান, ২০১৭ সালের ২৭ মে বাড়ির সীমানা দিয়ে মসজিদে যাওয়ার জন্য চলাচলের একটি রাস্তা দেন। ওই রাস্তায় বাধা দেয় একই এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য মহিউদ্দিন। আর এ নিয়ে প্রতিবাদ করায় মহিউদ্দিনসহ তার বাহিনীর সদস্যরা গ্রামের প্রতিবাদী লোকজনের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। শুধু তায় নয়; মা জয়নব, বোন জহুরা, ভাগ্নি হেপি, চাচা আব্দুর রহিম, বোন জামাই মানিক, আব্দুল জলিল, চাচী সহিতুন্নেছা ও ফাতেমা বেগমকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। এরপর মহি বাহিনী আব্দুল করিমের ছেলে ইউসুফের বসতঘর ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়ে সশস্ত্র মহড়া দেয়। ওই ঘটনার পর থেকেই ওই এলাকার নিরীহ পরিবার গুলো গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
বিশেষ করে ফারুক মিয়াসহ বড়ালুপাড়াগাঁও এলাকার আব্দুল আজিজের ছেলে আব্দুল করিম, বোরহান উদ্দিন, আব্দুর রহমানের ছেলে আফর উদ্দিন, নুর মোহাম্মদ, আব্দুল হাসিমের ছেলে মানিক মিয়া, নুরু মিয়া, আব্দুল করিমের ছেলে মনিরুজ্জামান, ইউসুফ মিয়া, আবু সুফিয়ান, রাজু মিয়া, বোরহান উদ্দিনের ছেলে অহিদ পরিবার নিয়ে দুই বছর ধরে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তারা চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্র, বন্দর থানার মদনপুর, সিদ্ধিরগঞ্জ, কুমিল্লার মেঘনার পাড়, ঢাকা সেগুন বাগিচা এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করে আসছেন। এলাকায় এলেই হামলা-মামলা লুটপাট ও হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছে তাদের।
ক্ষতিগ্রস্ত ফারুক মিয়া আরো জানান, মহি বাহিনীর প্রধান মহিউদ্দিন তাদের বিরুদ্ধে রূপগঞ্জ থানায় তিনটি মামলা দায়ের করেন। মামলাগুলো নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। কিন্তু মহি বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা চলমান রয়েছে। পুলিশ তাকে গ্রেফতার করছে না।
স্থানীয় সূত্র জানায়, মহিউদ্দিন মহি একজন দুর্ধর্ষ লোক। ২০১১ সালে বিএনপি কর্মী হিসেবে কায়েতপাড়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার হিসেবে নির্বাচন করে। নানা কলাকৌশলে ওই নির্বাচনে জয় লাভ করেন তিনি। এরপর বিএনপিকর্মী থেকে আওমী লীগ কর্মী বনে যান। এরপর থেকেই তিনি এলাকায় মহি বাহিনী তৈরি করেন। বেপরোয়া হয়ে উঠে মহি বাহিনী। আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে মহি বাহিনী একের পর এক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করলেও প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করে আসছে। এ বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে মহিউদ্দিনকে আর ভোট দেয়নি এলাকাবাসী। শুধু তাই নয়; মহিউদ্দিন তার আপন বোনদের পৈতৃক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করেছেন। গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে বেড়ানো পরিবারগুলো উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতাজ বেগম ও থানা পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এ বিষয়ে মহিউদ্দিন ওরফে মহি বলেন, আমার কোনো বাহিনী নেই। এ ছাড়া আমার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।
রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল হাসান বলেন, এ ধরনের বিষয় আমার জানা নেই। এ ধরনের ঘটনা হয়ে থাকলে আমার কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ দিতে বলেন। যত বড় বাহিনীই হোক না কেন কোনো ছাড় নেই।

 


আরো সংবাদ



premium cement