হাসপাতালে গিয়ে ‘নো ট্রিটমেন্ট, নো রিলিজ’ নির্দেশ দেন হাসিনা : চিফ প্রসিকিউটর
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার কয়েক দিন আগে জুলাই আন্দোলনে আহতদের দেখতে রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে আহতদের চিকিৎসা না দিতে এবং তাদের হাসপাতাল ত্যাগ করার অনুমতি না দিতে নির্দেশ দিয়ে বলেছিলেন, ‘নো ট্রিটমেন্ট, নো রিলিজ’। গতকাল রোববার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এক মামলার শুনানি শেষে প্রসিকিউশন অফিসের সম্মেলন কক্ষে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেছেন ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, আহতদের দেখতে আমরা যখন পঙ্গু হাসপাতালে গিয়েছিলাম, সেখানকার রোগী ও ডাক্তাররা আমাদের জানিয়েছেন, শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার আগে প্রথম যখন হাসপাতালে আহতদের দেখতে এসেছিলেন, তখন তিনি বলে গিয়েছিলেন, ‘নো ট্রিটমেন্ট, নো রিলিজ’। অর্থাৎ কোনো চিকিৎসা দেবেন না এবং কাউকে ছাড়পত্রও দেবেন না, যাতে কেউ বাইরেও যেতে না পারে।
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, রোগীদের পাশাপাশি এই নির্দেশাবলির কথা সেখানকার ডাক্তাররাও আমাদেরকে জানিয়েছেন। এর তথ্য প্রমাণাদি আমাদের হাতে আছে, আমরা সেটাই আজ আদালতকে জানিয়েছি।
২৭ জুলাই পঙ্গু হাসপাতালে আহতদের দেখতে যান শেখ হাসিনা। তার সাথে ছিলেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন, সাবেক স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী রোকেয়া সুলতানা, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব এম তোফাজ্জল হোসেন মিয়া ও সাবেক প্রেসসচিব নাইমুল ইসলাম খান।
তাজুল ইসলাম বলেন, জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থান চলাকালে আমাদের যেসব সন্তান শহীদ হয়েছেন, তাদের লাশ প্রশাসনের নির্দেশে সুরতহাল করতে দেয়া হয়নি, কাউকে কাউকে ডেথ সার্টিফিকেটও দেয়া হয়নি। এমনকি গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে যাওয়ার পর যারা সেখানেই শহীদ হয়েছেন তাদের ডেথ সার্টিফিকেটে গুলিতে মারা গেছে- এই কথাটিও লিখতে দেয়া হয়নি। শ্বাসকষ্ট কিংবা জ্বরে মারা গেছে এ ধরনের কথা লিখতে বাধ্য করা হয়েছে। আন্দোলনে শহীদের লাশ দাফন করতে যাচ্ছে জানতে পারলে রাস্তায় পুলিশ তাদের পরিবারের ওপর হামলা-আক্রমণ করেছে। তিনি বলেন, আদালত আমাদের কাছে জানতে চেয়েছেন, যে শহীদদের সুরতহাল প্রতিবেদন বা পোস্টমর্টেম রিপোর্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য এবং কেন সেগুলো নেই। আমরা আদালতকে জানিয়েছি যে সেই মুহূর্তে মানবতাবিরোধী অপরাধের মাত্রা এতটাই ভয়াবহ ছিল যে, দ্রুত শহীদদের লাশ দাফন করতে বাধ্য করা হয়েছে। তাই এ কারণে তাদের কোনো পোস্টমর্টেম রিপোর্ট দেয়া হয়নি। ঘটনাটি কোনো স্বাভাবিক বিষয় নয় বরং তা মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি জাজ্জ্বল্যমান প্রমাণ। এটিই প্রমাণ করে কি ধরনের নিষ্ঠুরতার সাথে জুলাই-আগস্টে হত্যাকাণ্ডগুলো চালানো হয়েছিল।
সাবেক ওসি আরশাদসহ ৩ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি : চানখাঁরপুলে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তিন অভিযুক্তকে রোববার জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। পাশাপাশি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমার তারিখ ধার্য করেছেন আদালত। চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন। প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে শুনানিতে ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, বি এম সুলতান মাহমুদ, শহিদুল ইসলাম সরদার ও গাজী এম এইচ তামিম।
এ মামলায় শাহবাগ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-অপারেশন) আরশাদ হোসেন ও কনস্টেবল ইমাজ হোসেন প্রামাণিক ও সুজন হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।
শুনানিতে প্রসিকিউশন পক্ষ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য দুই মাস সময় চাইলে আদালত আগামী ২২ এপ্রিল প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য করেন। এ ছাড়া অভিযুক্ত আরশাদ হোসেন ও ইমাজ হোসেন প্রামাণিককে যথাক্রমে ২ মার্চ ও ৩ মার্চ একদিনের রিমান্ডে নেয়ার আদেশ দেন আদালত।
এ বিষয়ে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, আজকে যে তিন পুলিশকে আদালতে হাজির করা হয়েছিল, তার মধ্যে শাহবাগ থানার সাবেক ওসি (অপারেশন) আরশাদ হোসেন অসম্ভব রকমের অ্যাগ্রেসিভ (আক্রমণাত্মক) একজন অফিসার ছিলেন। আন্দোলনের সময় ছাত্রদের মুখ চেপে ধরার যে ছবি, সেটি তার ছিল। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতের কাছে সময় চাইলে আদালত একদিন করে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন। তিনি বলেন, তদন্ত সংস্থা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করার পর আরো তথ্য-প্রমাণাদি পাওয়ার পর তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করা হবে।
ছাদের কার্নিশে গুলি, এসআই চঞ্চল ১ দিনের রিমান্ডে : আন্দোলনের সময় রাজধানীর রামপুরা এলাকার একটি বাড়ির ছাদের কার্নিশে ঝুলে থাকা অবস্থায় এক কিশোরকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে পুলিশের বরখাস্ত উপপরিদর্শক (এসআই) চঞ্চল কুমার সরকারকেও একদিনের রিমান্ডে পাঠান ট্রাইব্যুনাল। আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি তাকে রিমান্ডে নেয়ার আদেশ দেয়া হয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা