নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের পথ অনুসরণ করছে ছাত্রদল : শিবির সভাপতি
- ঢাবি প্রতিনিধি
- ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০

ছাত্রদল নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের পথ অনুসরণ করছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম।
গতকাল রোববার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। তিনি দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এ সময় তিনি ছাত্রদলের বেশ কিছু কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানান। রাখাল রাহার পদত্যাগ, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার ক্ষমা প্রার্থনাসহ মিডিয়ায় শিবিরের নামে মিথ্যা গুজব ছড়ানোর অভিযোগও করেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আধিপত্য নীতি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, চাঁদাবাজি, দখলদারি, ট্যাগিং ও দোষ চাপিয়ে দেয়ার হীন সংস্কৃতি চালু রাখার ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে রাজনীতি বিমুখতা তৈরি এবং শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত হলেও দুর্ভাগ্যজনকভাবে বন্ধুপ্রতিম ছাত্রসংগঠন ছাত্রদলকে তাদের পথ অনুসরণ করতে দেখা যাচ্ছে। ক্যাম্পাসে সব রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলোর মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, সহযোগিতা ও সহাবস্থান নিশ্চিত করে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখা সবার দায়িত্ব।
কিন্তু আমরা লক্ষ করছি বিভিন্ন ক্যাম্পাসে ছাত্রদল ছাত্রশিবিরসহ অন্যান্য ছাত্রসংগঠনকে অন্যায়ভাবে দমনের চেষ্টা করছে। শুধু তা-ই নয়, নিজেরা সন্ত্রাসী কায়দায় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে তার দায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ছাত্রশিবিরের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে, যার প্রবক্তা ছিল নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ। স্বৈরাচারী, গণহত্যাকারী শেখ হাসিনামুক্ত বাংলাদেশেও ফ্যাসিবাদের টুলসগুলো কিছু ছাত্র সংগঠন ঘোষণা দিয়ে গ্রহণ করেছে। আপনারা দেখেছেন, তারা ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে ‘শিবির কোবানো/কোপানো জায়েজ আগেও ছিল এবং ভবিষ্যতেও থাকবে’ এমন বীভৎস ঘোষণা দিচ্ছে। আমরা নোয়াখালীতে এমন একজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছি। আমরা আশা করব সরকার তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।
ছাত্রদলের বিরুদ্ধে তিনি অভিযোগ করেছেন যে, তারা সন্ত্রাসী কায়দায় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে, তার দায় শিবিরের ওপর চাপিয়ে দেয়। এ ছাড়া ছাত্রদলের নেতারা ফেসবুকে ‘শিবির কোবানো/কোপানো জায়েজ’ এমন বীভৎস মন্তব্য করেছেন, যা গণতান্ত্রিক ও ছাত্র রাজনীতির স্পিরিটের বিরুদ্ধে যায়।
কুয়েট ও অন্যান্য ঘটনার ব্যাখ্যা : কুয়েট, এমসি কলেজ ও তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসায় ঘটে যাওয়া সহিংসতার জন্য ছাত্রদল ও যুবদলকে দায়ী করেছে শিবির। শিবির সভাপতি জানান, ছাত্রদল প্রকাশ্যে সশস্ত্র হামলা চালিয়েছে এবং এরপর সেসব ঘটনা শিবিরের ওপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছে। কুয়েটের ঘটনার পর, ছাত্রদল তাদের সন্ত্রাসী কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো শিবিরের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলেছে।
ছাত্রদলের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও হামলার ঘটনায় নিন্দা : জাহিদুল ইসলাম বলেন, ছাত্রদলের সন্ত্রাসীরা খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছে এবং গত ২০ ফেব্রুয়ারিতে তা’মীরুল মিল্লাত মাদরাসার শিবির নেতা ফজলে রাব্বি সিফাতকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালায়। এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। পাশাপাশি হামলার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে ছাত্রদলের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সদস্য রাখাল রাহার গ্রেফতার দাবি : শিবির সভাপতি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) পাঠ্যবই সংশোধন ও পরিমার্জন কমিটির সদস্য রাখাল রাহাকে গ্রেফতার করে শাস্তির আওতায় আনার দাবি তুলেছেন। শিবির সভাপতির অভিযোগ, রাখাল রাহা ফেসবুকে ইসলামবিরোধী পোস্ট করে দেশের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছেন।
জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের মুক্তি দাবি :
কারাগারে আটকে থাকা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেলের মুক্তির দাবি করেছে শিবির।
শিবির সভাপতি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের সাত মাস অতিক্রান্ত হলেও এখনো দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। প্রশাসনিক দুর্বলতার সুযোগে এখনো দেশে নানা প্রান্তে অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। সারা দেশে চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ডাকাতি ও ধর্ষণের ঘটনা আশঙ্কাজনকহারে বেড়ে গেছে। উদ্বেগের বিষয় হলো গণমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী দেশে ২৭৩টি কিশোর গ্যাং সক্রিয় রয়েছে। যারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র অব্যাহত রাখলেও তাদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে না। গণমাধ্যম সূত্রে জানতে পেরেছি, জুলাই গণহত্যায় জড়িতদের ৭২৩ জনকে জামিন দেয়া হয়েছে, অথচ বিগত ১৫ বছরের দায়েরকৃত মামলার আসামিদেরকে মুক্তি দেয়া হচ্ছে না। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি এ টি এম আজহারুল ইসলামসহ সব মজলুমদের দ্রুত মুক্তির দাবি করছি।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির দায়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার ক্ষমা প্রার্থনা দাবি : শিবির আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সম্প্রতি দেশে ঘটে যাওয়া ধর্ষণ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে সরকারের অবহেলার অভিযোগ তুলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করেন শিবির সভাপতি।
মিডিয়ার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ : শিবির সভাপতি বলেন, পারস্পরিক সহযোগিতা ও ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে একটি সুখী, সমৃদ্ধ ও বৈষম্যহীন সবার বাংলাদেশ গঠন করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তন্ত গণমাধ্যমের ও জাতির বিবেক সংবাদকর্মীদের ভূমিকা অপরিহার্য। জুলাই অভ্যুত্থানে সব পক্ষ এক মোহনায় মিলিত হওয়ায়ই আমরা চেপে বসা পাহাড়সম জগদ্দল পাথরকে সরিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছি। কিন্তু ফ্যাসিবাদ-পরবর্তী বাংলাদেশে কতিপয় গণমাধ্যমের অপেশাদারি আচরণ আমাদের ব্যথিত করেছে। কিছু কিছু সংবাদ আমাদের কাছে একপেশে বলে প্রতীয়মান হয়েছে। আমরা মনে করি এগুলো মিডিয়ার ইচ্ছাকৃত ভুল নয়, অসাবধানতা বা তথ্য যাচাইয়ের প্রক্রিয়া পুরোপুরি অনুসরণ করতে না পারার দরুন এমনটি হয়েছে।
সভাপতি বলেন, গত ১ জানুয়ারি, বরগুনার পাথরঘাটায় পূর্বশত্রুতার জেরে যুবদল কর্মী ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের হাতে খুন হন। স্থানীয় মিডিয়া ও পাথরঘাটা বিএনপির আহ্বায়ক উমর ফারুক সেই ঘটনার সাথে ছাত্রলীগ কর্মীকে দায়ী করে। কিন্তু আমরা লক্ষ করি, জাতীয় একটি সংবাদমাধ্যম সেই ঘটনার তথ্য যাচাই-বাছাই না করেই ছাত্রশিবিরকে দায়ী করে সংবাদ প্রচার করে।
তিনি আরো বলেন, একইভাবে কুয়েটের ঘটনাতেও আমরা লক্ষ করেছি, শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলের সংঘর্ষের সাথে কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা না থাকলেও ছাত্রশিবিরকে দায়ী করে প্রতিবেদন প্রচার করা হয়। সিলেটের এমসি কলেজের ঘটনাতেও কতিপয় সংবাদমাধ্যম উদ্দেশ্যমূলকভাবে ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালায়। এ ছাড়াও আরো একাধিক ঘটনায় ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে সংবাদ প্রচার করা হয়েছে, অথচ ছাত্রশিবিরের সাথে এসব ঘটনার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।
এ সময় তিনি ছাত্রদলসহ সব ছাত্র সংগঠনকে বিভাজন সৃষ্টিকারী, দোষারোপ ও সহিংসতা পরিহার করে ছাত্রবান্ধব, গঠনমূলক ও কল্যাণমুখী রাজনীতির দিকে আহ্বান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে শিবিরের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম সাদ্দাম, কেন্দ্রীয় সাহিত্য সম্পাদক সিবগাতুল্লাহ এবং বিভিন্ন শিবির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা