নাটকীয়তা শেষে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানো হলো চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টকে!
জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে ডিএমপি- আমিনুল ইসলাম
- ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
দুই দিন নাটকের পর ইয়াবা দিয়েই গ্রেফতার দেখানো হলো নির্দোষ দাবি করা চ্যার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট (সিএ) মো: হাসান আলীকে। এর আগে দুই দিন ধরে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় চলে নানা নাটকীয়তা। থানার একরুমে হাসানকে ছেড়ে দিতে চলে মুচলেকা লেখার কাজ। অন্য রুমে গ্রেফতার দেখাতে চলে মামলা লেখার কাজ। শেষ পর্যন্ত মাদকদ্রব্য আইনে মামলা দিয়ে পাঠানো হয় আদালতে। বর্তমানে জেলে রয়েছেন হাসান আলী।
অবশ্য পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, ধারণা করা হচ্ছে হাসান আলী নির্দোষ, পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন। তবে নাটকের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ভুক্তভোগীর পরিবার ও সহকর্মীরা জানান, গত রোববার তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকা থেকে কাজ শেষে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরছিলেন একটি ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের অডিট অফিসার মো: হাসান আলী। সাথে দুই সহকর্মী বাশার ও ইমাম হোসেন। তিনজন এসকেএস স্কাই ভবনের ফুটপাথ ধরে হেঁটে পুলিশ প্লাজার দিকে যাচ্ছিলেন। এসকেএস স্কাই ভবনের সামনে পৌঁছালে আচমকা চারদিক থেকে ৮-১০ জন লোক এসে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি দিতে থাকে। হালকা গড়নের এক ব্যক্তি হাসানের পকেটে একটি ছোট ‘প্যাকেট’ ঢুকিয়ে দেয়।
সহকর্মী ইমাম হোসেন বলেন, কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই কয়েকজন পুলিশ সদস্য হাজির হন। আবু ঈসা নামে একজন এসআই জোর করে হাসানকে গাড়িতে তুলে ফেলেন। সাথে সাথে সেখানে থাকা ওই লোকগুলো সটকে পড়েন। পুলিশ সদস্যরা জানান, হাসান আলীর পকেটে ইয়াবা পাওয়া গেছে। নেয়া হয় তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায়। সেখানে ছুটে যান হাসানের পরিবার ও সহকর্মীরা। হাসানের মামা সরকারি কর্মকর্তা কামরুজ্জামানকে ওসি বলেন, বিষয়টি তেজগাঁও জোনের ডিসি স্যার দেখছেন। তার সাথে কথা বলেন। রাতেই ছুটে যান ডিসি ইবনে মিজানের কাছে। ডিসি তাকে আশ্বস্ত করে বলেন, ‘সকালে ছেড়ে দেয়া হবে’।
পরের দিন ৩ ফেব্রুয়ারি ডিসির কথামতো থানায় যান হাসানের মামা ও সহকর্মীরা। সেখানে তেজগাঁও জোনের এডিসি ও এসি ওসির কক্ষে হাসানকে নিয়ে ঘণ্টাব্যাপী জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এর মধ্যে হাসানের পিসিপিআর, মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেন, মোবাইল কললিস্ট, শিক্ষা-কর্মজীবন ও ব্যক্তিগত তথ্য যাচাই-বাছাই করে সন্দেহজনক কোনো কিছু মেলেনি। এরপর শুরু হয় হাসানকে ছেড়ে দেয়ার প্রক্রিয়া।
থানার এক কক্ষে বসে এসআই আবু ঈসা ও এসআই জিহান হোসাইন জিম্মানামা লেখেন। জিম্মানামায় সই করেন হাসানের মামা কারুজ্জামান। জিম্মানামায় উল্লেখ করেন, ‘কিছু লোক এক ব্যক্তিকে আটক করেছে খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে হাসানকে সুস্থ অবস্থায় তার পরিবারের জিম্মায় দেয়া হলো।’ অপর কক্ষে লেখা হয় মাদকদ্রব্য আইনে মামলা। কিছুক্ষণের মধ্যে এসআই ঈসার কাছে একটি ফোন আসার পর হাসানকে মুক্তি না দিয়ে ওই মামলায় আটক দেখানো হয়।
হাসানের স্বজনদের অভিযোগ, এক কক্ষে জিম্মানামা নিতে ব্যস্ত রেখে অন্য কক্ষে হাসানের বিরুদ্ধে মামলা করার নির্দেশ দেন ডিসি। যেন কেউ কিছু বুঝতে না পারেন। পরে স্বজনরা যখন ডিসির সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন ‘ মামলা হয়ে গেছে। এখন আর ছাড়া যাবে না’। মামলার বাদি হয়েছেন এসআই আবু ঈসা। তিনি বলেন, ‘আমি ঢাকায় নতুন এসেছি। এখানকার পরিবেশ সম্পর্কে তেমন ধারণা নেই। ঊর্র্ধ্বতনরা যেভাবে বলেছেন, সেভাবে করেছি’। পুলিশ দেয়া সাক্ষী এসকেএস স্কাই বিল্ডিংয়ের নিরাপত্তাকর্মী মো: নাইম বলেন, ঘটনার দিন তিনি জটলা দেখেছেন। তবে সেখানে কী হচ্ছিল সেটা জানেন না। তা ছাড়া তিনি যে ওই মামলার সাক্ষী তাও জানতেন না। ৩ তারিখ কয়েকজন পুলিশ এসে তার কাছ থেকে জোর করে একটি কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে যায়। এদিকে ভুক্তভোগীর পরিবারের অভিযোগ, বিষয়টি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নজরে নেয়ায় নানাভাবে হাসানের পরিবারকে হুমকি দেয়া হচ্ছে। তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) গাজী শামীমুর রহমান বলেন, কর্মকর্তারা যা বলছেন, আমি তা-ই করেছি। তেজগাঁও জোনের ডিসি ইবনে মিজানের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এ ব্যাপারে জানতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) নজরুল ইসলাম নয়া দিগন্তকে বলেন, ধারণা করা হচ্ছে হাসান আলীকে ফাঁসানো হয়েছে। বিষয়টি উচ্চ পর্যায় থেকে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এই নাটকের সাথে ও এর পেছনে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা