বেক্সিমকোকে দেয়া জনতা ব্যাংকের ঋণের ফরেনসিক অডিট হচ্ছে
দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ- সৈয়দ সামসুজ্জামান নীপু
- ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক কিসের ওপর ভিত্তি করে বেক্সিমকো শিল্পপার্কে অবস্থিত প্রতিষ্ঠানগুলোর বিপরীতে বিপুল অঙ্কের ঋণ দিয়েছে তা খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, এ জন্য একটি ‘ফরেনসিক অডিট’ করার নির্দেশনা দিয়ে চলতি ফেব্রুয়ারির মধ্যে তদন্তকাজ শেষ করার নির্দেশ নেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রম ও ব্যবসায় পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির ছয় সভায় এ নির্দেশসহ বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গত ২৮ জানুয়ারি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন।
উল্লেখ্য, জনতা ব্যাংক থেকে বেক্সিমকো প্রায় ২৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। সেই ঋণের প্রায় পুরোটাই এখন খেলাপি হয়ে পড়েছে।
সভার কার্যপত্র অনুযায়ী, সভায় বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঋণ দানকারী জনতা ব্যাংকসহ সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো কিসের ভিত্তিতে বা কী কী ডকুমেন্টের বিপরীতে ঋণ প্রদান করেছে এবং এ ক্ষেত্রে অনিয়মের বিষয়ে ফরেনসিক অডিটসহ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট দায়ী ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় এবং আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। এ ছাড়াও দ্রুত সভা করে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ সিকিউরিটিস অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, সংশ্লিষ্ট এনসিবি ও প্রাইভেট ব্যাংকসমূহ বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লি. এবং শাইনপুকুর সিরামিকস লি. দুইটি টি প্রতিষ্ঠানের মর্টগেজকৃত শেয়ার, সম্পদ ইত্যাদি বিক্রির বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের ওপর আলোচনা হয়। সভায় বিবিধ বিষয়ের মধ্যে নায়াগ্রা টেক্সটাইলস্ লিমিটেডের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক সংখ্যা, দায়-দেনা, বকেয়া বেতনভাতা ইত্যাদি সরেজমিন পরিদর্শন পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়েও আলোচনা হয়।
সভায় বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের রিসিভার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো: রুহুল আমিনকে সরিয়ে দেয়ারও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কমিটির নেয়ার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না করা কারণে তাকে এই শাস্তি দেয়া হচ্ছে। কমিটির পাঁচ সভার সিদ্ধান্তগুলো টিভি স্ক্রুলে দেখানোর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য রিসিভারকে নির্দেশনা দেয়া হয়। কিন্তু তিনি এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করেননি। দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগ এনে তাকে সরিয়ে দেয়াসহ তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়াসহ ছয়টি সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানায়, সভায় বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের বিষয়ে বিগত সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তের অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয়। বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কেও লে-অফকৃত শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করা এবং শ্রমিকদের শ্রম আইন মোতাবেক পাওনা ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে পরিশোধ করার বিষয়ে আলোচনা হয়। বেক্সিমকোর লে-অফকৃত কোম্পানিগুলো বন্ধ প্রক্রিয়া নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির পঞ্চম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঘোষণা টিভি স্ক্রলে পাঠানোর ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় অর্থাৎ কমিটির সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না করায় রিসিভারের ভূমিকা নিয়ে সভায় বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।
সভায় সর্বসম্মতিতে গৃহীত সিদ্ধান্তের মধ্যে রয়েছে, বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর লে-অফকৃত কোম্পানিগুলো কর্তৃপক্ষ বন্ধ করবে। শ্রম আইনের অধীনে শ্রমিকদের আইনানুগ পাওনাদি ফেব্রুয়ারির মধ্যে কর্তৃপক্ষ পরিশোধ করবে। এ বিষয়ে সরকার কর্তৃক প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করা হবে।
সভায় আরো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ রিসিভার পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঋণপ্রদানকারী জনতা ব্যাংকসহ সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো কিসের ভিত্তিতে বা কী কী ডকুমেন্টের বিপরীতে ঋণ প্রদান করেছে এবং এ ক্ষেত্রে অনিয়মের বিষয়ে ফরেনসিক অডিটসহ চলতি ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক তথ্যঃপূর্বক সংশ্লিষ্ট দায়ী ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় এবং আইনানুগ পদক্ষেপ নেবে।
বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লি. এবং শাইনপুকুর সিরামিকস লি. দুইটি প্রতিষ্ঠানের মর্টগেজকৃত শেয়ার, সম্পদ ইত্যাদি বিক্রির লক্ষ্যে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাংক, বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিস অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে নিয়ে দ্রুত সভা করে একটি স্বয়ং সম্পূর্ণ কর্মপদ্ধতি প্রণয়ন করবে।
উল্লেখ্য, দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বেক্সিমকো গ্রুপে ‘রিসিভার’ নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই রিসিভারের কাজ হচ্ছে গ্রুপের সব প্রতিষ্ঠানের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা। হাইকোর্টের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো: রুহুল আমিনকে রিসিভার পদে নিয়োগ দেয়া হয় গত ৫ সেপ্টেম্বর।
জানা গেছে, বেক্সিমকোর টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেল খাতের ১৬ কোম্পানি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ২৮ হাজার ৫৪৪ কোটি টাকা কিভাবে ঋণ নিয়েছে। বেক্সিমকো লিমিটেডের নামে সোনালী ব্যাংকে ১,৪২৪ কোটি, অগ্রণী ব্যাংকে ৪২০ কোটি, রূপালী ব্যাংকে ৯৮৭ কোটি, জনতা ব্যাংকে ২৩ হাজার ২৮৫ কোটি, ন্যাশনাল ব্যাংকে ৩১৫ কোটি, ইউসিবি ব্যাংকের ৩৩৩ কোটি, এবি ব্যাংককে ৯৩৮ কোটি, এক্সিম ব্যাংকে ৪৯৭ কোটি, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকে ৬১ কোটি, ডাচ বাংলা ব্যাংকে ৯৪ কোটি, আইএফআইসি ব্যাংকের ৭৮ কোটি টাকা ঋণ রয়েছে। এ ছাড়া আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিআইএফএফএলে ৮৭ কোটি টাকা ঋণ রয়েছে। যার সব ঋণ খেলাপি খাতায় চলে গেছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা