২২ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮ মাঘ ১৪৩১, ২১ রজব ১৪৪৬
`

বাদ পড়ছেন মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চান্স পাওয়া নাতি-নাতনীরা

মেডিক্যালে ভর্তির ফল নিয়ে বিতর্ক
-


মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার ফল নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। তুলনামূলক বেশি নম্বর পেয়েও ভর্তির জন্য যোগ্য বিবেচিত না হয়ে বরং মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনীরা কম নম্বর পেয়ে যোগ্য বিবেচিত হওয়ায় এই বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এই ফলাফল বাতিল কিংবা পুনঃবিবেচনা করা না হলে আজ মঙ্গলবার নতুন করে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
তবে গতকাল সোমবার স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে জানানো হয়েছেÑ দেশের সরকারি-বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চান্স পাওয়া নাতি-নাতনীরা বাদ পড়বেন। কেবল মুক্তিযোদ্ধা এবং বীরাঙ্গণার সন্তানরাই ভর্তির সুযোগ পাবেন।
এ দিকে গতকাল ভর্তি ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা জানান, প্রকাশিত বিতর্কিত ফলাফল আজকের (মঙ্গলবার) মধ্যে বাতিলসহ নতুন ফলাফল প্রকাশ করতে হবে অন্যথায় কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা। একই সাথে পরীক্ষা পদ্ধতি বাতিলসহ মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুরোপুরি বাতিলের দাবিও করেন তারা। এ সময় তাদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ কপ্রণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হয়ে শিক্ষার্থীরা এ হুঁশিয়ারি দেন।

কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মাহিন সরকার বলেন, ছাত্র আন্দোলনের শুরুটাই হয়েছিল কোটাবিরোধী আন্দোলন দিয়ে। জুলাই আন্দোলনের পরে আবারো আমাদেরকে কোটা বাতিলের বিষয় নিয়ে রাস্তায় নামতে হয়েছে। শুধু মেডিক্যাল নয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব বিশ্ববিদ্যালয়ে অযৌক্তিক কোটা বাতিল করতে হবে। তা না হলে আমরা কঠোর থেকে কঠোরতম কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো। শিক্ষার্থীরা জানান, ৭৫-এর বেশি মার্ক পেয়ে একজন শিক্ষার্থী চান্স পাননি, অথচ অন্য একজন কোটার বিবেচনায় ৪১ মার্ক পেয়েও মেডিক্যালে চান্স পেয়ে গেছেন। এখন কি কোনো মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মেডিক্যালে ভর্তি পরীক্ষা দিচ্ছেন? যারা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান আছেন তারা অনেক আগেই মেডিক্যালের পরীক্ষা দিয়েছেন। এখন কারা এই কোটা সুবিধা ভোগ করছেন? চেতনা ব্যবসা বাংলাদেশে আর চলবে না। চেতনা ব্যবসা দিয়ে কেউ আর রাজনীতি করতে পারবে না বা ক্ষমতার মসনদে বসতে পারবে না। তিনি বলেন, আমাদের যে উপদেষ্টা পরিষদ বসে আছে, নাহিদ ভাই-আসিফ ভাই আছেন, উনারা উপদেষ্টা পরিষদে থাকার পরেও কেন আমাদের দাবি নিয়ে রাস্তায় নামতে হলো। আমাদের দাবি মেনে নিন নইলে আমরা কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো। আমরা মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল পুনঃপ্রকাশের দাবি জানাচ্ছি। সাভে সব বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অযৌক্তিক সব কোটা বাতিল করতে হবে। তা না হলে আমাদের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

শিক্ষার্থীরা বলেন, সদ্য প্রকাশিত এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা-২০২৪-২৫-এর ফলাফল অনুযায়ী, কোটার বদৌলতে ১০০ নম্বরের মধ্যে কেবল ৪১-৪৬ নম্বর পেয়েও বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির সুযোগ পাচ্ছেন প্রায় আড়াই শতাধিক শিক্ষার্থী। ফলে তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি নম্বর পেয়েও যোগ্য শিক্ষার্থীরা ভর্তির সুযোগ পাচ্ছেন না। এতে শিক্ষার্থীদের বড় একটা অংশেরই মেডিক্যাল কলেজে পড়ার স্বপ্ন অধরাই থেকে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের এসব দাবির বিষয়ে গতকাল স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা: রুবীনা ইয়াসমিন জানান, ‘শিক্ষার্থীদের ক্ষোভের বিষয়টি আমরা জেনেছি। তবে ৫ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রাখার বিষয়ে হাইকোর্টের নির্দেশনা রয়েছে। এই নির্দেশনার কারণে কোটা বহাল রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে অধিদফতরের কিছু করার নেই।’ তবে মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনীদের বিষয় বাদ দেয়া হবে।
সূত্র মতে, ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় মোট আসন রয়েছে ২৬৯টি। এর মধ্যে ১৯৩ জন ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পেরেছেন। যাদের অধিকাংশেরই প্রাপ্ত নম্বর ৪০-৪৬। বিষয়টি নিয়ে রোববার ‘৭০ নম্বর পেয়ে চান্স হলো না মেডিক্যালে, কোটায় ৪১ পেয়েও সুযোগ’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে বিভিন্ন গণমাধ্যম। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়ক সারজিস আলম ও মাহিন সরকার। ক্ষোভ জানাতে থাকেন অন্য শিক্ষার্থীরাও। স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্র জানায়, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চান্স-প্রাপ্তদের তথ্য যাচাই করা হবে। এই তথ্য প্রতি বছর সংশ্লিষ্ট মেডিক্যাল কলেজ যাচাই করে থাকে। তবে এবার স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের একটি টিম তথ্য যাচাই করবেন। ফলে খুব অল্পসংখ্যক শিক্ষার্থী মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কোটায় ভর্তির সুযোগ পাবেন।

মুক্তিযোদ্ধা কোটায় শূন্য হওয়া আসনগুলো কিভাবে পূরণ করা হবে এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ডা: রুবীনা ইয়াসমিন বলেন, ফাঁকা হওয়া আসনগুলো মেধাতালিকা থেকে পূরণ করা হবে। এ জন্য শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের একটু ধৈর্য ধারণ করতে হবে।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার সারা দেশে একযোগে মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য আবেদন করেছিলেন এক লাখ ২৫ হাজার ২৬১ জন। পরীক্ষায় অংশ নেয়া এক লাখ ৩১ হাজার ৭২৯ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৬০ হাজার ৯৫ জন ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরীক্ষায় পাসের হার ৪৫ দশমিক ৬২ শতাংশ। এর মধ্যে ছেলে পরীক্ষার্থী ছিলেন ২২ হাজার ১৫৯ জন যা উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীর ৩৬ দশমিক ৮৭ শতাংশ। উত্তীর্ণ মেয়ে পরীক্ষার্থী সংখ্যা ৩৭ হাজার ৯৩৬ জন, যা উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীর ৬৩ দশমিক ১৩ শতাংশ।

 


আরো সংবাদ



premium cement
বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটে বোমা হামলার হুমকি, নিরপদে অবতরণ লন্ডন ক্লিনিকে ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিসে’ চলবে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ট্রাম্পের শুল্কারোপের জবাব দেবে কানাডা ৫ ঘণ্টা পর দৌলতদিয়ায়-আরিচায় নৌযান চালাচল শুরু ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ, ওয়েস্ট ইন্ডিজে প্রথম জয় মঠবাড়িয়ায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় যুবকের মৃত্যু সিলেট মহানগর বিএনপি সভাপতি ও সম্পাদককে শোকজ চ্যাম্পিয়নস লিগে অবিশ্বাস্য রাত, মহানাটকীয় ম্যাচে বার্সার জয় মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টাকে আমন্ত্রণ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যম কেন সরব? হামাসের আক্রমণ প্রতিরোধে ব্যর্থতা : পদত্যাগের ঘোষণা ইসরাইলি সেনাপ্রধানের

সকল