থার্টিফার্স্টে আতশবাজি ফানুসে বিপর্যয়ের শঙ্কা
- আবুল কালাম
- ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:১৪
থার্টিফার্স্টের রাতে আতশবাজি, ফানুসে বড় বিপর্যয়ের শঙ্কা রয়েছে। ওই রাতে ফানুস থেকে আগুনের ঘটনা ছাড়াও আতশবাজি থেকে শব্দ ও বায়ুদূষণ, বয়স্ক ও শিশুদের স্বাস্থ্যঝুঁকি এবং পাখির মৃত্যু হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আনন্দে আতশবাজি আর পটকা ফাটানো পশু, পাখি, শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থ মানুষের জন্য ভয়ানক বিপর্যয় ডেকে আনে। কারণ আতশবাজিতে পটাশিয়াম, নাইট্রেট, চারকোল সালফার থাকতে পারে। এগুলোর প্রত্যেকটিই পরিবেশের জন্য বেশ ক্ষতিকর। তা ছাড়া বিকট শব্দ, তীব্র আলোর ঝলকানি এবং এর সঙ্গে যে পরিমাণ ক্ষতিকর রাসায়নিক কণা বাতাসে ছড়ায় সেগুলোর প্রত্যেকটিই পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। আর পটকার মধ্যে থাকা সহজদাহ্য বাতাসের সাহায্য ছাড়াই জ্বলতে পারে, যা অগ্নিকাণ্ডের মতো ভয়ানক দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। ফলে স্বল্প সময়ের আনন্দের জন্য এমন ঝুঁকি না নিয়ে উৎসব যাতে নিরাপদ হয় এমনভাবে পালন করা উচিত। এর আগে বিগত বর্ষবরণে আতশবাজি ও পটকায় রাজধানীসহ দেশের বেশির ভাগ বড় শহরের বায়ু ও শব্দদূষণ তীব্র হয়ে ওঠে। রাতে রাজধানীতে শব্দের মানমাত্রা ৫০ ডেসিবেলের পরিবর্তে ৭০ ডেসিবেলের ওপরে ছিল। একই সময়ে বায়ুর মানের ৩৫ শতাংশ অবনতি হয়। বায়ুতে অতি ক্ষুদ্র বস্তুকণা ৯১ মাইক্রোগ্রাম বেড়ে যায়।
এতে অসুস্থ হয়ে পড়েন অনেক শিশু ও প্রবীণ। শব্দ ও বায়ুদূষণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয় শহরের পাখিগুলো। বর্ষবরণের সে রাতে শুধু ঢাকা শহরে চার প্রজাতির শতাধিক পাখি মারা যায়। অনেক পাখি অসুস্থ হয়ে পড়ে। অনেকগুলো ভয় ও আতঙ্কে বাসা থেকে চলে যায়। বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের পর্যবেক্ষণে এসব চিত্র উঠে আসে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (চাবি) রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক মো: আবদুস সালাম গতকাল নয়া দিন্তকে বলেন, আতশবাজি থেকে আগুন লাগে না। তবে তা পোড়ানোর সময় এর বিকট শব্দ ও তীব্র আলোর ঝলকানি হয়, তা থেকে ধোঁয়া ছড়ায়। ফলে এর মধ্যে থাকা ক্ষতিকর রাসায়নিক কণা মিশে বাতাসকে দূষিত করে, যা মানুষ ও প্রাণীর জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
বিশেষ করে গভীর রাতে যখন প্রাণীরা ঘুমিয়ে থাকে, তখন অকস্মাৎ বিকট শব্দ তাদের মৃত্যুর কারণ হয়ে উঠে। অন্য দিকে, ফানুস অনেক সময় আকাশ থেকে নিচে নেমে আসে। তা যে কোনো স্থাপনায় আটকে গেলে আগুন লাগার মতো বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। একই অবস্থা পটকায়। তা থেকে আগুন না লাগলেও তার ধোঁয়া মারাত্মক বায়ু দূষণ করে।
পরিবেশ বিজ্ঞানী ও ক্যাপসের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার নয়া দিগন্তকে বলেন, তাদের গবেষণায় প্রমাণ হয়েছে বর্ষবরণের পটকা-আতশবাজি থেকে উৎপন্ন শব্দের মাত্রা আগের দিনের তুলনায় সর্বনি¤œ ৪৬ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ১১৩ শতাংশ পর্যন্ত বেশি হয়ে থাকে। যার প্রভাবে প্রাণী ছাড়াও শিশু, বয়স্ক, গর্ভবতী মা এবং রোগীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে যায়। এমনটি উচ্চশব্দের কারণে অনেকেরই হার্ট অ্যাটাক হয় এবং অসুস্থ হয়ে পড়েন। আর পাখি প্রচণ্ড শব্দের কারণে ওড়াউড়ি করে এবং গাছে বা ভবনের দেয়ালে আঘাত পেয়ে নিচে পড়ে যায়, ফলে আহত হয়, মারাও যায়। এ ছাড়া রাস্তার কুকুর-বিড়াল, গৃহস্থালি প্রাণী এমনকি বন্যপ্রাণীরাও শব্দের কারণে ভয়ে দিগি¦দিক ছোটাছুটি করতে গিয়ে মারা যায়।