২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

ভাতা বাড়ানোর দাবিতে স্নাতকোত্তর ইন্টার্ন চিকিৎসকদের শাহবাগ অবরোধ

অর্থ মন্ত্রণালয়ের ভাতা বাড়ানোর ইতিবাচক চিন্তা
রাজধানীর শাহবাগে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ও প্রাইভেট ট্রেইনি ডাক্তারদের ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে কর্মবিরতি ও অবস্থান ধর্মঘট : নয়া দিগন্ত -

ভাতা বাড়ানোর দাবিতে বেসরকারি স্নাতকোত্তর প্রশিক্ষণার্থী (ইন্টার্ন) চিকিৎসকদের শাহবাগ অবরোধের কারণে গতকাল রোববার পুরো ঢাকাই ছিল যানজটের নগরী। শাহবাগ অবরোধের কারণে দুপুরের পর থেকে ১০ মিনিটের রাস্তা অতিক্রম করতে মানুষের আধা ঘণ্টা লেগেছে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে কয়েক ঘণ্টাও লেগে যায়। ঢাকা শহরে যানজটের জের চলে রাত পর্যন্ত। গতকাল বেলা দেড়টা থেকে বিকেল পর্যন্ত শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন চিকিৎসকরা। শুধু ঢাকাই নয়, দেশের অন্যান্য স্থানেও একই দাবিতে কর্মসূচি পালন করেছেন তারা। তাদের দাবিটি অত্যন্ত যৌক্তিক হলেও কঠোরভাবে শাহবাগ মোড় অবরোধ করায় তারা যানবাহনের যাত্রী, ড্রাইভার ও অন্যান্যদের অসন্তুষ্টির কারণ হয়েছেন। কারণ শাহবাগ মোড় দিয়ে তাদের আন্দোলন চলাকালীন কোনো যানবাহন চলতে দেয়া হয়নি। কোনো কোনো গাড়িকে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা মোড়ে দাঁড়ানো অবস্থায় পাওয়া গেছে।
প্রশিক্ষণার্থী এসব চিকিৎসক (পোস্টগ্র্যাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি ডক্টর) শাহবাগের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) ও মহাখালীর বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনসের (বিসিপিএস) অধীনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হওয়ার জন্য স্নাতকোত্তর কোর্স করছেন। এই দু’টি প্রতিষ্ঠান সরকারি সহায়তায় বাংলাদেশে বিশেষজ্ঞ (এমডি/এমএস ও এফসিপিএস) চিকিৎসক তৈরি করছে। এমবিবিএস ও বিডিএস ডাক্তারদের একটি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে এই দুই প্রতিষ্ঠান বিশেষজ্ঞ ডাক্তার তৈরির স্নাতকোত্তর কোর্সে ভর্তি করে থাকে। বেসরকারি ¯œাতকোত্তর প্রশিক্ষণার্থী এই চিকিৎসকরা তাদের বর্তমান ভাতা ২৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করার দাবি করেছেন। তবে কেউ কেউ নবম গ্রেডের কথাও বলছেন। নবম গ্রেড না দিতে পারলে তাদের ৫০ হাজার টাকা দেয়ার দাবি করেছেন। কারণ হিসেবে চিকিৎসকরা বলেছেন, কোনো কোনো সময় ২৪ ঘণ্টাই হাসপাতালে ডিউটি করে রোগীদের সেবা দেন তারা। মূলত প্রশিক্ষণার্থী স্নাতকোত্তর ডাক্তাররাই বিএসএমএমইউয়ের চিকিৎসাটা চালিয়ে নেন হাসপাতালে সারাক্ষণ অবস্থান করে। তারা যেহেতু প্রশিক্ষণার্থী তাই তাদের কাজে ফাঁকি দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। তারা প্রাইভেট প্র্যাকটিসও করতে পারেন না। যে ২৫ হাজার টাকা পান, তা দিয়ে তাদের চলে না। এই চিকিৎসকদের বয়স ৩০ থেকে ৪০ বছর। অনেকের সন্তানও আছে। সংসার চালাতে অন্য কারো কাছ থেকে তারা সঙ্গত কারণেই টাকা চাইতে পারেন না।
শাহবাগে অবস্থানকারী চিকিৎসকরা জানান, তাদের দাবিটি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা উচিত কারণ একজন ডাক্তারের সংসার ২৫ হাজার টাকায় চলে না। উল্লেখ্য, বাংলাদেশে প্রায় পাঁচ হাজার স্নাতকোত্তর প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসক আছেন। গতকাল কয়েক হাজার চিকিৎসক শাহবাগ মোড়ে অবরোধে অংশ নেন। এই দাবিতে আন্দোলনে কোনো দল ছিল না, সবাই একমত ছিলেন।

জানা গেছে, স্বাস্থ্য ও অর্থ মন্ত্রণালয় প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসকদের দাবির প্রতি সহানুভূতিশীল। আগামী বৃহস্পতিবারের আগেই তাদের বেতন ৫০ হাজার টাকা নির্ধারণ করে সরকারি প্রজ্ঞাপন জারির চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসকদের দাবির প্রতি সমর্থন জানাতে গতকাল বিকেলে বিএসএমএমইউ ভিসি অধ্যাপক ডা: মো: শাহীনুল আলমসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ঊর্ধ্বতন প্রশাসন শাহবাগ মোড়ে গিয়েছিলেন চিকিৎসকদের সাথে কথা বলতে। এছাড়া এই চিকিৎসকদের দাবির প্রতি সহানুভূতি জানাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহবায়ক সারজিস আলমও শাহবাগ মোড়ে গিয়েছিলেন এবং শিগগিরই তাদের বেতন ৫০ হাজার টাকা বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি হবে বলে আশ্বাস দেন।
এ ব্যাপারে ভিসি অধ্যাপক মো: শাহীনুল আলম নয়া দিগন্তকে বলেন, বিএসএমএমইউয়ের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলে অনুমোদন দিয়ে গত অক্টোবর মাসেই স্নাতকোত্তর প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসকদের ভাতা বাড়ানোর সুপারিশ করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এই চিকিৎসকরা প্রথম শ্রেণী মর্যাদার। সমসাময়িক অন্যান্য প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তাদের ভাতার মতো তাদের ভাতাটিও সম্মানজনক হওয়া উচিত। ২৫ হাজার টাকায় একজন চিকিৎসকের সংসার চলতে পারে না। এই চিকিৎসকদের অনেক সময় সপ্তাহের সাত দিনই হাসপাতালে কাজ করতে হয়। বিপরীতে তারা কোনো প্রাইভেট প্র্যাকটিসও করতে পারেন না। শুধু বাংলাদেশেই প্রশিক্ষণার্থী স্নাতকোত্তর চিকিৎসকদের ভাতার পরিমাণ কম। পৃথিবীর কোনো দেশে প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসকদের এত কম ভাতা দেয়া হয় না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশেই একই মর্যাদার সরকারি কর্মকর্তারা বিদেশে এমএস অথবা পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করতে গেলে বাংলাদেশে বেতন ছাড়াও বৃত্তি পান আবার বিদেশেও বৃত্তি পান। একই রকম সম্মানজনক ভাতা ডাক্তারদেরও দেয়া উচিত।

 


আরো সংবাদ



premium cement