কালুরঘাট-মনসারটেক মহাসড়ক উন্নীতকরণে ধীরগতি, বেড়েই চলেছে দুর্ভোগ
- এস এম রহমান পটিয়া-চন্দনাইশ (চট্টগ্রাম)
- ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:০৭
প্রাচীনতম কালুরঘাট-মনসারটেক মহাসড়ক উন্নীতকরণে ধীরগতির কারণে মহাসড়কে ভারী ভারী যানবাহন চলাচল ও সাধারণ মানুষের ভোগান্তির যেন শেষ নেই। প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি, অপর দিকে প্রতিনিয়তই বেড়েই চলছে মহাসড়কে ট্রাফিক ভলিউম। সে কারণে যানবাহন চলাচলের পাশাপাশি এলাকাবাসীর দুর্ভোগ এখন চরম আকার ধারণ করেছে।
জানা গেছে, সড়ক ও জনপথ অধিদফতর ২০২২ সালের দিকে ১০.৫৪২ মিটার দৈর্ঘের এই মহাসড়টিকে ৫.৫ মিটার থেকে ১০.৩ মিটারে উন্নীতকরণের জন্য প্রকটি প্রকল্প প্রণয়ন করেন। এতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৩৩ কোটি টাকা বলে জানা গেছে।
কালুরঘাট রেলওয়ে সেতু থেকে পটিয়া মনসারটেক পর্যন্ত এই মহাসড়কটি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পটিয়া-মনসা বাদামতল এলাকায় মিলিত হয়েছে। এ কারণে টানেলকে ঘিরে এই মহাসড়কের গুরুত্ব পেয়েছে।
এই জাতীয় মহাসড়কের রাইখালী খালের ওপর একটি সেতুসহ নতুনভাবে আরো সাতটি বক্সকালভার্ট নির্মাণ করা ছিল ওই প্রকল্পে। দোহাজারী-কক্সবাজার পর্যন্ত নতুন রেলওয়ে লাইন স্থাপনসহ হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে চলছে কক্সবাজার ও কক্সবাজারের মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্রবন্দর, কোল পাওয়ার প্লান্ট একাংশ চালুর পাশাপাশি, বিশালাকারের শিল্পজোন, গড়ে উঠছে পর্যটন শিল্পসহ নানা বৃহৎ প্রকল্প। এসব কারণে এই মহাসড়কে পাল্লা দিযে বাড়ছে ট্রাফিক ভলিউম। এ কারণেই মূলত সওজ কর্তৃপক্ষ মহাসড়কটিকে প্রশস্তকরণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এ দিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের বেশির ভাগই প্রশস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রায় সাড়ে ৭০০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই মহাসড়কের চট্টগ্রামের পটিয়া ও চন্দনাইশে ৩টি কক্সবাজারের চকোরিয়ায় এপ্রোচসহ একটি ফোরলেন সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রায় ৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে একটি ফ্লাইওভার ও চারটি বাইপাস নির্মাণ প্রকল্পের কাজ খুব শিগগিরই শুরু হচ্ছে। অপর দিকে জাইকার অধীনে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ককে ফোরলেন অথবা ছয়লেনে উন্নীতকরণে নতুন ভাবে সমীক্ষার কাজও খুব দ্রুত এগিয়ে চলছে
এ দিকে কর্ণফুলী টানেল সংযোগ সড়কের সাথে সঙ্গতি রেখে যানবাহনের চাপ নিয়ন্ত্রণে আনোয়ারা ওয়াইজংশন থেকে কালাবিবির দীঘি পর্যন্ত ৮.১০ কিলোমিটার সড়ক ৬ লেনে এবং কালাবিবির দীঘি থেকে আনোয়ারা ফায়ারস্টেশন পর্যন্ত ২.৪ কিলোমিটার সড়ককে ৫.৫ মিটার থেকে ৭.৩ মিটারের উন্নীতকরণ প্রকল্পের কাজ শেষ পর্যায় রয়েছে।
জানা গেছে, কালুরঘাট-মনসারটেক (এন-১০৭) জাতীয় মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এ লক্ষ্যে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ হতে মোট ২৩২.৯৭০৬ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ১ জুলাই ২০২৩ হতে ৩০ জুন ২০২৫ পর্যন্ত মেয়াদে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রকল্প প্রস্তাবটি পরিকল্পনা কমিশনে প্রেরণ করা হয় এবং প্রস্তাবিত প্রকল্পটি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের এডিপিতে অননুমোদিত নতুন প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বলেও জানা গেছে। প্রস্তাবিত প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য প্রণিত প্রকল্পে জাতীয় মহাসড়কটি কালুরঘাট সেতু হতে মনসারটেক বাদামতল নামক স্থানে এন-১ জাতীয় মহাসড়কের সাথে মিলিত হয়ে চট্টগ্রাম জেলার দক্ষিণাঞ্চলের উপজেলাগুলো ও পর্যটননগরী কক্সবাজারের সাথে যোগাযোগের অন্যতম প্রধান করিডোর হিসেবে সংযুক্ত। মহাসড়কটির উভয় পার্শ্বে অসংখ্য ছোট-বড় শিল্প-কলকারখানা ও গার্মেন্ট শিল্প-কারখানা অবস্থিত। সড়কটির ওপর দিয়ে প্রতিদিন শিল্প-কলকারখানার পণ্যবাহী যানবাহন ছাড়াও শ্রমিক-কর্মচারীসহ পটিয়া, বোয়ালখালী, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, লোহাগড়া ও কক্সবাজার জেলার জনসাধারণ ও পর্যটকবৃন্দ চলাচল করে থাকে।
ইতোমধ্যে কর্ণফুলী নদীতে কালুরঘাট অংশে সড়ক-কাম-রেল সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে, যা চট্টগ্রাম শহরের সাথে বোয়ালখালী উপজেলার সেতু বন্ধন হিসেবে কাজ করবে। ফলে প্রস্তাবিত সড়কটি ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার জাতীয় মহাসড়কের (এন-১) সংযোগ সড়ক হিসেবে কাজ করবে। কালুরঘাট সেতু সম্পন্ন হলে ঢাকা থেকে কক্সবাজার ও বান্দরবানমুখী ভারী ও হালকা যানবাহনগুলো এন-১ হয়ে উক্ত সড়ক ব্যবহার করে চট্টগ্রাম শহরে প্রবেশ বা বহির্গমন করবে। বর্তমানে সড়কটি ১৮ ফুট (৫.৫ মিটার) প্রশস্ত হওয়ায় নিত্যদিন যানজট লেগেই থাকে। এতে নারী, শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থ মানুষজন ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকে, তেমনি পণ্যবাহী যানবাহনগুলো যথাসময়ে পণ্য পরিবহনকরতে পারে না বলে প্রস্তাবিত প্রকল্প বাস্তবায়নে যৌক্তিকতা তুলে ধরা হলেও প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি কারণে এলাকাবাসীর দুর্ভোগ বাড়ছে। যোগাযোগ করা হলে সড়ক ও জনপথ চট্টগ্রাম দক্ষিণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা গতকাল বিকেলে নয়া দিগন্তকে বলেন, বর্তমানে ওই প্রকল্পের পরিবেশগত ছাড়পত্র নেয়ার কাজ চলছে বলে তিনি জানান।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা