দেশে কৃষি উৎপাদনে রাসায়নিক সারের ভয়াবহ ব্যবহার
বিএআরএফের গোলটেবিল বৈঠক- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
সংবিধান সংস্কার কমিশনের কাছে খাদ্যের অধিকারকে সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার দাবি করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, আমরা হাইব্রিড যুগে পৌঁছেছি। খাদ্য বলেন, আর যা কিছু বলেন, আমাদের সবকিছু বেশি করে উৎপাদন করতে হবে। রাষ্ট্রও অধিক পরিমাণ খাদ্য উৎপাদনে পুশ করছে। আমাদের অধিক খাদ্য উৎপাদনের সাথে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনেও মনোযোগ দিতে হবে।
গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ অ্যাগ্রিকালচার রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএআরএফ) আয়োজিত ‘কৃষি খাতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএআরএফ সভাপতি রফিকুল ইসলাম সবুজের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক কাওসার আজমের সঞ্চালনায় বৈঠকে বিশেষ অতিথি ছিলেন কৃষিসচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্যাহ মিয়ান। প্রধান আলোচক ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ সিড অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব কৃষিবিদ ড. আলী আফজাল। বক্তব্য রাখেন কৃষিবিদ খন্দকার রাশেদ ইকবাল ও শেখ ফজলুল হক মনি।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, কৃষিকে পানি থেকে বা পানিকে কৃষি থেকে আলাদা করে দেখার কোনো সুযোগ নেই, বরং একসাথে কাজ করতে হবে। একটি দেশের মানুষের প্রধান চাহিদাই হচ্ছে খাদ্য। করোনায় মানুষ বা রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণী স্থান থেকে অস্থিরতা শুরু হলো ধান কাটবে কে, শ্রমিক কোথায় পাওয়া যাবে? এখন যেহেতু সংবিধান সংস্কার কমিশন কাজ করছে তাদের কাছে এ দাবি তুলতে হবে- খাদ্যের অধিকারকে সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া দরকার।
তিনি বলেন, এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে বাংলাদেশে আগে প্রতি হেক্টরে ৮.৫ কেজি রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হতো। বর্তমানে তা ৭০০ কেজিতে পৌঁছেছে। এটি একটি ভয়ঙ্কর অবস্থা। ২০০৫ সালে ১২ হাজার মেট্রিক টন কীটনাশক আমদানি করা হয়েছিল। কিন্তু ২০২০ সালে তা ২৭ হাজার টনে উন্নীত হয়। অর্থাৎ আমরা দ্বিগুণের বেশি কীটনাশক আমদানি করছি। এসব কীটনাশক আমাদের শরীরে প্রবেশ করছে। বাংলাদেশের প্রতি হেক্টর জমিতে ৯৮ টাকার কীটনাশক লাগার কথা থাকলেও বর্তমানে লাগছে ৮৮২ টাকার। এর সবকিছু খাদ্যচক্রের মাধ্যমে আমাদের শরীরে যাচ্ছে। তাই শুধু খাদ্য ফলালাম এটাতে হবে না, বরং নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে জোর দিতে হবে।
তিনি বলেন, কৃষিজমি সুরক্ষা আইনসহ বেশকিছু নীতিমালা চূড়ান্ত হওয়ার পথে। এগুলো চূড়ান্ত হলে আমরা কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থায় একটা বড় পরিবর্তন আনতে পারব।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় জলবায়ু সহিষ্ণু জাত যেমন ব্রি ধান ৫২, বীনা ১১ ধানের জাত উৎপাদন করা হচ্ছে। স্মার্ট প্রযুক্তি, যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে এর প্রভাব মোকাবেলা করার উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা খামারি নামের একটি অ্যাপ তৈরি করছি। যেখানে জমির পরিমাণ অনুযায়ী মাটির উর্বরতা বিবেচনায় নিয়ে কোনো ফসল ভালো ফলবে, কতটুকু সার লাগবে, কী প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে এবং সর্বোপরি আবহাওয়া উপযোগী একটা সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ পাওয়া যাবে চাষাবাদের ক্ষেত্রে। দ্রুতই এই অ্যাপটির কার্যক্রম শুরু হবে।
এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, একেক দেশে কৃষি উৎপাদনের প্যাটার্ন একেকরকম। উন্নয়নশীল দেশে উৎপাদনে জড়িতরা নিজের জন্য খাবার রাখেন। আমাদের দেশেও তাই। বাকিটা বিক্রি করেন। অধিকাংশ কৃষক শিক্ষিত নন। কৃষিতে বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ। এটা আবহাওয়া ও বিভিন্ন বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল। এ কারণে প্রাচীন পদ্ধতিতে তারা চাষাবাদ করেন। নতুন প্রযুক্তি গ্রহণ করতে চান না।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় বাংলাদেশ সিড অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ড. আলী আফজাল বলেন, বাংলাদেশে এখন উপকূলীয় অঞ্চলে ধারাবাহিকভাবে লবণাক্ততা বৃদ্ধি, খরা, হঠাৎ বন্যার মতো সঙ্কটগুলো প্রকট হয়ে উঠছে। বাংলদেশে মাটির লবণাক্ততা, বিশেষ করে উপকূলীয় অঞ্চলের অত্যন্ত ভয়ঙ্করভাবে বাড়তে থাকা পরিবেশগত সমস্যা। বর্তমানে প্রায় ১২ লাখ হেক্টর বা ৩০ শতাংশেরও বেশি উপকূলীয় ভূমি লবণাক্ততা দ্বারা প্রভাবিত। মাটির লবণাক্ততা বৃদ্ধি ফসলের ধানের ফলনের প্রায় ২০-৩০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস করেছে। ফলে বার্ষিক অর্থনৈতিক ক্ষতি প্রায় ৩৮৪০ থেকে ৫৭৬০ কোটি টাকা।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা