‘নানা গুজবে’ সেন্টমার্টিনে বিধিনিষেধ
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩৪
দ্বীপের পরিবেশ নষ্ট, অন্যের কাছে লিজ এসব ‘গুজবে’ সেন্টমার্টিনে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। তারা বলছেন, ভিত্তিহীন কিছু আলোচনায় একটি মহল প্রভাবিত হয়ে পর্যটক যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করছে।
যদিও পরিবেশবিদরা বলছেন, মূলত দ্বীপের পরিবেশ সুরক্ষা করা, দ্বীপের চারপাশে সাগর থেকে আসা শৈবাল, কচ্ছপ, সামুদ্রিক মাছ-প্রাণীর সুরক্ষা ও অবাধ যাতায়াত নিশ্চিত করা এবং দ্বীপে যাতায়াতের সময় নৌ ও সমুদ্রপথে যেসব নৌযান যাতায়াত করে সেগুলো নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণেই সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, মূলত সরকার পরিবেশ সুরক্ষা করতে পর্যটক আসায় কড়াকড়ি আরোপ করেছে। ফলে ইতোমধ্যেই দ্বীপের বাসিন্দাদের জীবন কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ সেন্টমার্টিনের পরিবেশ আগের মতো সুন্দর নেই। ফলে তার প্রভাব পুরো এলাকায় পড়েছে। যারা এ নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন তারা এখন বেকার হয়ে পড়েছেন।
অন্যদিকে সরকার চাইছে সামুদ্রিক প্রাণী সুরক্ষা। কারণ এ সময় এই দ্বীপের চারপাশে প্রজনন মৌসুমে প্রচুর কচ্ছপ আসত। সাগরের তীরে তারা ডিম পাড়ত এবং সেগুলো থেকে বাচ্চা ফুটত। কিন্তু দ্বীপবাসী কচ্ছপের ডিম নিয়ে যেত এবং সেগুলো মিয়ানমারে বিক্রি করত বলে অভিযোগ ওঠে। এ ছাড়া নানাভাবে বিরক্ত করায় এখানে আর কচ্ছপ আসে না। একই কারণে শৈবাল আসে না এবং মাছও কম আসে দ্বীপের আশপাশে। বিধিনিষেধে সে বিষয়টি বিবেচনায় আনা হয়েছে।
এছাড়া টেকনাফ ও কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন রুটে চলাচলে নৌযানের নিরাপত্তার বিষয়। বিগত কয়েক বছর ধরে প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারে জাতিগত দ্বন্দ্ব চলছে। আরাকান আর্মি এবং জান্তা বাহিনীর মধ্যে লড়াই চলছে। এ কারণে বাংলাদেশ সীমান্তে গোলাগুলির আওয়াজ শোনা যায় এবং মাঝে মধ্যেই জলসীমায় চলাচলরত নৌযানে গুলি চালানোর খবরও মেলে। আবার বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে ট্রলারও ধরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তাই এই রুটে পর্যটকবাহী নৌযানের নিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয়টিও বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে। মূলত এসব কারণেই সেন্টমার্টিনে পর্যটক যাওয়া সীমিত করা হচ্ছে।
স্থানীয়দের ভাষ্য, সাম্প্রতিক সময়ে সেন্টমার্টিন দ্বীপ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। সেন্টমার্টিনকে লিজ দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন মহল থেকে এ ধরনের যেসব গুজব ছড়ানো হচ্ছে। সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে, দেদার সেন্টমার্টিনে পর্যটক যেতে পারবে না। এ জন্য সরকার সেন্টমার্টিন ভ্রমণে কড়াকড়ি আরোপ করেছে এবং পর্যটন মৌসুমে সেখানে পর্যটকরা সীমিত সংখ্যক যেতে পারলেও রাত যাপন করতে পারবেন না।
এ বিষয়ে দ্বীপবাসী থেকে শুরু করে স্থানীয় প্রশাসন বলছে এসবে কান না দিয়ে কিভাবে সেন্টমার্টিন দ্বীপকে সুরক্ষা করা যায় এবং নিরাপদে পর্যটকরা যাতায়াত করতে পারে তার সুব্যবস্থা করা দরকার।
এর আগে সেন্টমার্টিনে পর্যটক নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় চলতি বছরের মার্চ থেকে। এরই আলোকে গত ২২ অক্টোবর উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, সেন্টমার্টিন দ্বীপ চার মাস পর্যটকদের জন্য সীমিত থাকবে। এর মধ্যে নভেম্বরে পর্যটকরা যেতে পারলেও রাত যাপন করতে পারবেন না। আর ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে যেতে পারবেন, থাকতেও পারবেন। তবে এ সময় দিনে দুই হাজারের বেশি পর্যটক দ্বীপে যেতে পারবেন না। আর ফেব্রুয়ারি মাসে কোনো পর্যটক সেন্টমার্টিনে যেতে পারবেন না।
এদিকে দ্বীপটিতে পর্যটক যাতায়াত বন্ধ হওয়াতে সেখানে থাকা কুকুরগুলো না খেয়ে মরছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, ‘দ্বীপে প্রায় চার হাজার কুকুর রয়েছে। কুকুরগুলো খাবারের জন্য রাতদিন দ্বীপে বিচরণ করছে। অনেক সময় কচ্ছপসহ সামুদ্রিক প্রাণীও খেয়ে ফেলে।
এতে দ্বীপের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।’ আর দ্বীপের বাসিন্দারা জানান, খাবারের অভাবে কিছু সংখ্যক কুকুর মারাও গেছে। প্রতিদিনই দ্বীপের কোথাও না কোথাও অভুক্ত কুকুরের মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা