ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের আন্দোলনে আ’লীগের ইন্ধন!
বেশির ভাগ মালিক আওয়ামী লীগ ও পুলিশ সদস্য- আমিনুল ইসলাম
- ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
রাজধানীতে কত সংখ্যক রিকশা বা অটোরিকশা চলাচল করছে তার সুনির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান নেই কারো কাছে। পুলিশ বলছে, এটি অবৈধ হওয়ায় এর কোনো নিবন্ধন নেই। যার কারণে এর সংখ্যা সম্পর্কে কেউ কিছুই বলতে পারে না। তবে এটা নিশ্চিত যে রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশ এলাকাগুলোতে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে এই রিকশা তৈরির কারখানা বা গ্যারেজ। চীন-ইন্ডিয়া থেকে যন্ত্রাংশ কিনে লোকাল কিছু ইস্পাতের সিট ও কাঠ দিয়ে তৈরি হয়ে যাচ্ছে রিকশা বা অটোরিকশা। যার সব থেকে বড় ভয়ঙ্কর দিক হচ্ছে, এর মোটরে গতি থাকলেও নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা নেই বললেই চলে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীতে প্রায় ১৩ লাখ রিকশা রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। যার অর্ধেকের বেশি অটোরিকশা। এসব রিকশার বেশির ভাগের মালিক আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। আর কিছু অংশের মালিক সেই সময়ে থাকা কিছু পুলিশ সদস্য। অভিযোগ রয়েছে, অটোরিকশা চালকদের এই আন্দোলনের পেছনে আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগের পরোক্ষ ইন্ধন থাকতে পারে। শুধু তাই নয়, রিকশাচালকদের সাথে মিশে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা আন্দোলনে অংশ নিচ্ছে বলেও ধারণা করছেন অনেকে। কারণ এই রিকশামালিকদের প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের দোসর। তারা দেশে একটি অরাজকতা সৃষ্টি করতে রিকশাচালকদের উসকে দিচ্ছে কি না সেটি খতিয়ে দেখতে হবে।
গোয়েন্দা তথ্য মতে, বিগত সরকারের আমলে অটোরিকশা চলাচল বন্ধের একটি ঘোষণা দিয়েছিল সরকার। ওই সময় আওয়ামী লীগের নেতা ও পুলিশ সদস্যের ইঙ্গিতে রাস্তায় নেমেছিলেন হাজার হাজার রিকশা চালক ও মালিক। তারা রাস্তা অবরোধ করে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়ে ছিল। পরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অটোরিকশা চলাচলের অনুমতি দেন। এরপর থেকে রাজধানীতে তৈরি হতে থাতে লাখ লাখ অটোরিকশা। যাত্রীরা বলছেন, কোন কোন রাস্তায় যাত্রীর থেকে অটোরিকশা বেশি দেখা যায়।
সম্প্রতি নানা কারণে রাজধানী থেকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা তুলে দেয়ার আদেশ দিয়েছেন আদালত। এরপর ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ তাদের অভিযান আরো জোরালো করে। যার পরিপ্রেক্ষিতে রিকশাচালকরা বিভিন্ন স্থানে সভা-সমাবেশ, বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধসহ নানা কর্মসূচি পালন করতে শুরু করেন। শুধু কর্মসূচিই নয়, কয়েকটি স্থানে যানবাহন ও মার্কেটসহ নানা স্থাপনা ভাঙচুর করে। তাদের দাবি রাজধানীতে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালাতে দিতে হবে।
শেওড়াপাড়ার বাসিন্দা আরিফ মামুন বলেন, রাজধানী ঢাকার মধ্যে মিরপুরের শেওড়াপাড়া একটি জনবহুল এলাকা হিসেবে পরিচিত। শেওড়াপাড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে পশ্চিম দিকের বিভিন্ন অলিগলিত কয়েক হাজার অটোরিকশা রয়েছে। সকাল ও বিকেলে মনে হয় শেওড়াপাড়া পীরেরবাগ সড়কে যাত্রী থেকে অটোরিকশাই বেশি। কোন নিয়মনীতি না মেনে ইচ্ছামতো রিকশায় বসিয়ে নিয়েছে মোটর। এই মোটরের গতির কারণে চালকরা কাউকে পাত্তাই দেয় না। যার কারণে প্রতিনিয়তই দুর্ঘটনা ঘটছে।
আনোয়ার হোসেন নামে একজন ফার্মেসি মালিক বলেন, নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা না থাকা বেপরোয়া গতির এই অটোরিকশা না থাকাই ভালো। তবে অলিগলিতে প্যাডেলচালিত রিকশার প্রয়োজন রয়েছে। তিনি বলেন, এসব রিকশায় আহত হয়ে প্রতিদিনই দুই একজন তার কাছে চিকিৎসা নিতে আসেন। এদের কারণে রাস্তায় নামতেই ভয় লাগে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বুয়েটের সহকারী অধ্যাপক কাজী মো: সাইফুল নেওয়াজ নয়া দিগন্তকে বলেন, যান্ত্রিক কোনো যানবাহনের সাথে তার বডি কাঠামো, সাসপেনশনের একটি সামঞ্জস্যতা থাকতে হয়। এসব ঠিক থাকলে বিআরটিএ ওই যানবাহনকে চলাচলের অনুমতি দিয়ে থাকে। যেহেতু বিআরটিএ এসব অটোরিকশাকে এখনো বৈধতা দেয়নি সুতরাং এটা অবৈধ। তিনি আরো বলেন, নিয়ন্ত্রণ না থাকায় গত ৩-৪ মাসে রাজধানীতে ব্যাপক হারে এই অটোরিকশা নেমেছে। যা অনেকটা মহামারীর মতো। তবে হঠাৎ করেই এগুলো বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হলে চালক পুলিশ মুখোমুখি অবস্থানে চলে যেতে পারে। অটোরিকশা চালকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে ধাপে ধাপে এটা বন্ধ করা যেতে পারে। তা না হলে রাজধানীতে অটোরিকশা ওভারফ্লো হয়ে প্রধান সড়কে চলে আসবে।
ডিএমপির জয়েন্ট কমিশনার (ট্রাফিক) নজমুল হাসান বলেন, গত ২২ সেপ্টেম্বর থেকে ব্যাটারিচালিক অটোরিকশার বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে ট্রাফিক পুলিশ। ইতোমধ্যে এক লাখ ৩২ হাজারের বেশি রিকশার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিদিন তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার রিকশার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। গত মঙ্গলবার আদালতের নির্দেশনার পর অভিযান আরো বেগবান করা হয়েছে। অভিযানে যেখানে বাধা আসে সেখানে প্রয়োজন অনুপাতে ক্রাইম বিভাগের সহায়তা নিয়ে সমাধান করা হচ্ছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা