ঢাকা ও সিটি কলেজ শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে রণক্ষেত্র সায়েন্সল্যাব
- ঢাবি প্রতিনিধি
- ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩০
বাস ভাঙচুরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজধানীর সাইন্সল্যাব মোড়ে ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজশিক্ষার্থীদের মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়েছে।
গতকাল বেলা আড়াইটা থেকে সায়েন্সল্যাব মোড়ে এই সংঘর্ষ শুরু হয়। এর পর থেকে থেমে থেমে সংঘর্ষ চলে দুই কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে। দুই ঘণ্টাব্যাপী চলে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া। এতে পুরো সায়েন্সল্যাব এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সংঘর্ষ সংঘটিত হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই রাজধানীর সায়েন্সল্যাব এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এই রুটের বাসগুলো পান্থপথের দিক দিয়ে ঘুরে যাওয়া শুরু করে। এ সময় এলাকায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। ঘটনার কিছুক্ষণের মধ্যে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী উপস্থিত হয়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়েছেন আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা। এতে দু’পক্ষই নিজেদের অবস্থান থেকে পিছু হটে।
জানা গেছে, শুরুতে সকালে দুই কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিচ্ছিন্ন কিছু বিষয় নিয়ে হাতাহাতি হয়। এ ঘটনার জের ধরে সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকা কলেজের বিজয় একাত্তর নামের একটি বাস ভাঙচুর করেছে বলে অভিযোগ করেছে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা। এর প্রতিক্রিয়া জানাতে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা সায়েন্সল্যাবে গেলে দুই কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ ঘটনায় দুই কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। সায়েন্সল্যাব সংলগ্ন সড়কে যান চলাচল পুরোপুরিভাবে বন্ধ হয়ে যায়। পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনার পরপরই পুলিশ এবং সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে উপস্থিত হয় ।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাঁদানে গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে তারা। এতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। ঘটনায় অন্তত ৩৬ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে বলে জানা যায়। আহত শিক্ষার্থীদের মধ্যে শাহরিয়ার(২১), নূর হোসেন (২৪), মো: তুষার (১৮), অনিম (২১), সেজন (১৮), রিফাত (২১), আরাফাত (২১), নিরব (২১), শরিফ (২১), ইয়াকুব (১৮), মেহেদী হাসান (২১), আল ইমরান (১৮), তানভীর (১৮), সুজন (১৮), আরিফ (১৭), মহিউদ্দিন (২৩), তারেক (৩২), তাহসিন (১৮), ফয়সাল (১৮), অরিকুল তরিকুল ইসলাম রাজীব (২৫), মোহাম্মদ আলী (১৭), হাসান (১৮), ইসমাইল (১৮), ফাইয়াদ (১৮), মাহির (১৭), সাকিন (১৮), তানভীর (১৮), তামিম (১৮), তাজফিকুর রহমান (১৭), আশিক (১৮), রাজ (১৮) এবং মেহেদী (১৮)-এর নাম জানা গেছে।
পুলিশের নিউমার্কেট অঞ্চলের সহকারী কমিশনার শাহ মোস্তফা তারিকুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, গতকাল মঙ্গলবার সায়েন্সল্যাব এলাকায় ঢাকা কলেজের ছাত্রদের একটি বাসে ওঠাকে কেন্দ্র করে সিটি কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থীর হাতাহাতি হয়। এর জের ধরে সকালে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা গিয়ে সিটি কলেজে ভাঙচুর চালায়। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে বেলা পৌনে ৩টার দিকে সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় বেরিয়ে আসেন। তারা সায়েন্সল্যাবের দিকে এগোয়। তখন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা বেরিয়ে এসে সায়েন্সল্যাবের কাছাকাছি অবস্থান নেয়। একপর্যায়ে দুই পক্ষ পরস্পরের দিকে ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকে।
এ দিকে গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকা কলেজ অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কলেজশিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আ ক ম রফিকুল ইসলাম সিটি কলেজের যেসব শিক্ষক এ ঘটনায় সরাসরি নির্দেশদাতা ও জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে ক্যাম্পাসে এসে পরিদর্শন আহ্বানের দাবি জানান।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, সংঘর্ষে দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী ও এক শিক্ষক আহত হয়েছেন। আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। ঢাকা কলেজের স্থাপনায় হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। হামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। বিশেষ করে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা যারা এই হামলার নির্দেশ দিয়েছেন তাদের পদত্যাগ করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে ৯টি দাবির কথা জানানো হয়। তাদের দাবিগুলো হলো- ১) দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। আহত শিক্ষার্থীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। এমনকি শিক্ষকরাও আহত হয়েছেন; ২) আমাদের স্থাপনা সেনাবাহিনী সরাসরি হামলা ও ভাঙচুর করেছে, যা আমাদের জন্য লজ্জানজক। এ হামলায় সংশ্লিষ্ট জড়িত প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে; ৩) বিশেষ করে, দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা যারা এই হামলার নির্দেশ দিয়েছে তাদের পদত্যাগ করতে হবে; ৪) ইতঃপূর্বে সব বিশৃঙ্খলার সাথে সিটি কলেজের কতিপয় সন্ত্রাসী শিক্ষার্থী দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় এবং পরবর্তী সংঘর্ষ এড়াতে সিটি কলেজকে স্থানান্তর করতে হবে; ৫) সিটি কলেজের যেসব শিক্ষক এই নিন্দনীয় ঘটনা সরাসরি নির্দেশ ও জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে; ৬) এই ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে সশরীরে ক্যাম্পাসে এসে পরিদর্শন করতে হবে; ৭) এই হামলায় জড়িত সেনা ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগ করতে হবে; ৯) বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সাত শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন এবং শত শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন তাই পরিকল্পিতভাবে ঢাকা কলেজের ১৮৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে হামলা করে বর্তমান সরকারকে ব্যর্থ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। যাতে সরাসরি সিটি কলেজ এ পুলিশ জড়িত ছিল; ৯) ঢাকা কলেজের ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এসব দাবি মেনে নিয়ে ঢাকা কলেজে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
মেজর রিজওয়ান বলেন, এখন পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা। এখন বলা হচ্ছে, সেনাবাহিনী হামলা করেছে। এমন কোনো কিছুই ঘটেনি, সেনাবাহিনী ও শিক্ষার্থীরা এক সঙ্গেই কাজ করেছে। তা ছাড়া সেনাবাহিনী শিক্ষার্থীদের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব নেই। আমরা চেষ্টা করছি, দুই প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের সাথে বসে পুরো বিষয়টি কিভাবে সমাধান করা যায়।
কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াস বলেন, এ ঘটনায় আমাদের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তবে এই মুহূর্তে সুনির্দিষ্টভাবে কতজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন তা বলতে কিছুটা সময়ের প্রয়োজন। তবে যেভাবে হামলার ঘটনা আমাদের শিক্ষার্থীদের ওপর ঘটেছে। এর সাথে জড়িত সবার বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ঘটনায় ঢাকা সিটি কলেজের কর্তৃপক্ষের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।