মিটছে তাবলিগের দ্বন্দ্ব
- খালিদ সাইফুল্লাহ
- ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৪৬
বিশ্ব ইজতেমা ও কাকরাইল মারকাজ নিয়ে তাবলিগের দুই গ্রুপের দ্বন্দ্ব আপাতত মিটতে যাচ্ছে। ইজতেমা ও কাকরাইল মারকাজ চলবে আগের নিয়মেই। মাওলানা সাদ এবারো বাংলাদেশে আসতে পারছেন না। ইজতেমার প্রথম পর্ব চালাবেন যুবায়েরপন্থীরা। দ্বিতীয় পর্বে থাকবেন সাদপন্থীরা। স্বরাষ্ট্র ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের প্রচেষ্টায় তাবলিগের দুই গ্রুপ এ ব্যাপারে সম্মত হয়েছে বলে জানা গেছে।
প্রতি বছরের মতো এবারো বিশ্ব ইজতেমার আগে তাবলিগের দুই গ্রপে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। কাকরাইল মারকাজে অবস্থানকে কেন্দ্র করে এ দ্বন্দ্ব থেকে সংঘর্ষের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিগত সরকারের আমল থেকে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব মাওলানা যুবায়ের গ্রুপ পরিচালনা করে থাকেন। যাতে হেফাজতে ইসলামের অনুসারী আলেমরা অংশ নিয়ে থাকেন। দ্বিতীয় পর্ব পরিচালনা করেন ভারতের মাওলানা সাদের এ দেশীয় অনুসারীরা। এ ছাড়া তাবলিগের মূল মারকাজ কাকরাইল মসজিদে চার সপ্তাহ মাওলানা যুবায়ের গ্রুপ এবং দুই সপ্তাহ সাদপন্থীরা থাকার সুযোগ পান। বর্তমানে কাকরাইলে যুবায়ের গ্রুপ অবস্থান করছেন। আগামীকাল ১৫ নভেম্বর থেকে সাদপন্থীদের কাকরাইল মসজিদে আসার কথা রয়েছে। তবে ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর মাওলানা যুবায়ের গ্রুপ ঘোষণা দেন বিশ্ব ইজতেমা ও কাকরাইল মারকাজে আর সাদপন্থীদের অবস্থানের কোনো সুযোগ দেয়া হবে না। বিষয়টি নিয়ে গত ৪ নভেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বৈঠক ডাকলেও সেখানে যাননি যুবায়ের গ্রুপের নেতারা। বরং তারা পরদিন ৫ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একটি বিশাল মহাসম্মেলন করেন। যেখানে হেফাজতে ইসলামের আমির-মহাসচিবসহ শীর্ষ নেতারা অংশ নেন। সেখান থেকে আগামী বিশ্ব ইজতেমায় মাওলানা সাদকে বাংলাদেশে আসতে দেয়া হবে না বলে ঘোষণা দেন নেতারা। এর মধ্যে দুই দফা সংবাদ সম্মেলন করে মাওলানা সাদকে যেকোনো উপায়ে বাংলাদেশে আনার ঘোষণা দেন সাদপন্থীরা। এর মধ্যে তারা জাতীয় প্রেস ক্লাবে অঘোষিত সমাবেশ এবং সেগুনবাগিচায় সমাবেশ করেন। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে যুবায়ের গ্রুপের নেতারা মাওলানা সাদকে ভ্রান্ত উল্লেখ করে তাকে তওবা করার এবং বাংলাদেশে আনলে ঢাকা অচল করে দেয়ার হুঁশিয়ারি দেন। এর প্রতিবাদে গতকাল বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সাদপন্থীরা সংবাদ সম্মেলন করে মাওলানা সাদ তার ভুল শুধরে নিয়েছেন জানিয়ে তাকে এবারের বিশ্ব ইজতেমায় আনার ঘোষণা দিয়েছেন। এ ব্যাপারে বাধা দেয়া হলে সঙ্ঘাতের আশঙ্কা করেন তারা।
বিষয়টি নিয়ে গভীর সঙ্কটে পড়ে অন্তর্বর্তী সরকার। সঙ্কট সমাধানে তারা গত দু’দিন তাবলিগের দুই গ্রুপের সাথে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন। আর সেখানেই আপাতত সমাধান পেয়েছেন সরকারের উপদেষ্টারা। জানা যায়, গত মঙ্গলবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র, ধর্ম, শিল্প ও তথ্য উপদেষ্টার সাথে যুবায়ের গ্রুপের নেতাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে মাওলানা মাহফুজুল হক, মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া, মাওলানা ফজলুল করিম কাসেমী, মাওলানা শাহরিয়ার মাহমুদসহ ৭-৮ জন হেফাজত নেতা অংশ নেন।
পরে গতকালও তারা বৈঠক করেন। এছাড়া সাদপন্থীদের সাথেও সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পাশাপাশি ডিএমপি কমিশনারের কাছে দেখা করেও তারা নিজেদের দাবি দাওয়ার কথা জানান।
জানা যায়, দুই পক্ষের সাথে আলোচনার ভিত্তিতে সরকার বিশ্ব ইজতেমা ও কাকরাইল মারকাজ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেখানে আগের নিয়মেই দুই গ্রুপের কার্যক্রম চলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সে হিসেবে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব ৩১ জানুয়ারি-২ ফেব্রুয়ারি মাওলানা যুবায়ের গ্রুপ পরিচালনা করবেন। ৭ থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় পর্ব পরিচালনা করবেন সাদপন্থীরা। আজ ১৪ নভেম্বর যুবায়ের গ্রুপের কাকরাইলের মারকাজে থাকার সময় শেষ হলে তারা সেখান থেকে চলে যাবেন। সেখানে সাদপন্থীরা আগামীকাল ১৫ নভেম্বর থেকে আগামী দুই সপ্তাহ অবস্থান করবেন। এভাবে আগের নিয়মেই পর্যায়ক্রমে চার সপ্তাহ ও দুই সপ্তাহ করে তারা কাকরাইল মারকাজে অবস্থান করবেন। এদিকে জানা যায়, তাবলিগের দ্বন্দ্ব আপাতত মিটলেও সরকার চাইছে তাদের এ দ্বন্দ্ব স্থায়ীভাবে মিটিয়ে দিতে। এজন্য আগামী এপ্রিল মাসে তাদের দুই গ্রুপের সাথে বসে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
মাওলানা যুবায়ের গ্রুপের পক্ষ থেকে গতকাল এ বিষয়ে একটি জরুরি বিবৃতি দেয়া হয়েছে। এতে মাওলানা শাহরিয়ার মাহমুদ জানিয়েছেন, সরকার তাবলিগের স্থায়ী সমাধান করবেন বলে জানিয়েছেন। এজন্য ইজতেমা ও কাকরাইলে অবস্থান আগামী এপ্রিল পর্যন্ত আগের নিয়মে চলবে। সে পর্যন্ত বর্তমান সরকারকে সহযোগিতার ব্যাপারে দুই পক্ষই সম্মত হয়েছে। এছাড়া মাওলানা সাদ বিশ্ব ইজতেমায় আসবেন না বলেও সরকার আমাদের আশ্বস্ত করেছে।
এদিকে মাওলানা সাদপন্থীদের পক্ষে সায়েম নয়া দিগন্তকে বলেন, আমরা কোনো সঙ্ঘাত চাই না। তবে মাওলানা সাদকে বিশ্ব ইজতেমায় আনার বিষয়ে আমাদের দাবি অব্যাহত থাকবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা