২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে ফের সিন্ডিকেটের আশঙ্কা

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের আলোচনা সভা : নয়া দিগন্ত -


নতুন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ আবার মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে সিন্ডিকেট তৈরি করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও অভিবাসন বিশেষজ্ঞ সি আর আবরার।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান থাকবে আর যেন সিন্ডিকেট না হয়। বিদেশী শ্রমবাজার দেশের সবচেয়ে বড় সেক্টর, যা অতীতে ধুঁকে ধুঁকে নিঃশেষ করা হয়েছে। দয়া করে এই পথে আপনারা আর আগাবেন না। ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের কাছে আহ্বান থাকবে, সিন্ডিকেট হবে না এটা আপনাদের নিশ্চিত করতে হবে।
গতকাল বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে সিন্ডিকেট : ক্ষতি মূল্যায়ন জবাবদিহি নিশ্চিতকরণ’ আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সভার আয়োজন করে রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস ইউনিট (রামরু)।


অধ্যাপক সি আর আবরার বলেন, মালয়েশিয়া ইস্যুতে আর্থিক ক্ষতিতে আমরা খুব বিচলিত নই। কিন্তু সামাজিক যে ক্ষতি হয়েছে, এতে অনেক মানুষ নিঃস্ব হয়ে গেছে। যারা মধ্যবিত্ত হিসেবে জীবনযাপন করত, সেই জীবন থেকে তারা একদম নিচে নেমে গেছে। এই দায় কে নেবে? প্রতিটা বঞ্চিত শ্রমিকের বুকে যে ব্যথা তা আমাদের পর্যন্ত পৌঁছাবে না। যখন শ্রমিকদের সাথে কথা বলি, বুঝতে পারি তাদের শ্রমের টাকায় আমরা বড়লোক হচ্ছি।
বায়রার প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় ক্ষতি লেবার মাইগ্রেশনে। এটাকে ঠিক করতে হলে, অতীতের অন্যায় কেন হয়েছে, অন্যায় দূর করতে কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে হবে। এখানে বায়রার সদস্যদের বড় রকমের ভূমিকা পালন করতে হবে। বায়রার সদস্যরা যদি মনে করেন, এই সেক্টর গতিশীল করতে হবে। তাহলে এখনই কাজ করতে হবে। বায়রা এক পক্ষ শ্রমিক আরেক পক্ষ- এটা বন্ধ করতে হবে।
সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, শ্রমবাজারে বাংলাদেশ যেহেতু বেশি ভুক্তভোগী, তাই এর দাবি জোরে তুলতে হবে। আমরা ক্ষতির পরিমাণ জানতে পেরেছি। যেহেতু আমাদের ভুক্তভোগীর সংখ্যা বেশি, তাই আমাদের সরকারের উচিত মূল দায়িত্ব পালন করা। দুই দেশের সাথে যখন শ্রমিক পাঠানোর চুক্তি হবে সেখানে কোনো প্রকার গোপনীয়তা থাকা যাবে না। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় দুই দেশের মধ্যে চুক্তির ব্যবস্থা করতে হবে। গোপনভাবে সবকিছু করলে জাতি মেনে নেবে না।


অনুষ্ঠানে জনশক্তি রফতানিকারক ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিসের (বায়রা) সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মো: ফখরুল ইসলাম বলেন, মালয়েশিয়ার সাথে আগের করা সমঝোতা স্মারক বাতিল করতে হবে। নতুন করে সমঝোতা করতে হবে। আর এখানে কোনো সিন্ডিকেট থাকবে সেটা আমরা চাই না। অভিবাসন ব্যয় কমানো দরকার। আমি মনে করি দেড় লাখ টাকার মধ্যে অভিবাসন নিয়ে আসা সম্ভব। অথচ পাঁচ-সাত লাখ টাকা কর্মীদের থেকে নেয়া হয়েছে। দেড় লাখ টাকার মধ্যে শ্রমিক পাঠানো নিশ্চিত করতে হবে।
ওয়্যারবি ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সায়েদ সাইফুল হক বলেন, এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর অভিবাসন সেক্টরে গুরুত্ব দেয়া উচিত ছিল। অভিবাসন খাতকে কমিশন গঠনের মাধ্যমে সংস্কার করতে হবে। যারা এই সেক্টরে দুর্নীতি করেছে তাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করতে হবে। অন্যথায় তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে অভিবাসন ব্যয় কমাতে হবে, যেটা আমরা কমাতে ব্যর্থ হয়েছি। অথচ পাশের দেশ নেপাল-ভারত আমাদের চেয়ে কয়েক গুণ কমে কর্মী পাঠাচ্ছে, তাহলে আমরা কেন পারছি না?

বায়রার সাবেক সদস্য মোস্তফা মাহমুদ বলেন, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ে যারা সিন্ডিকেট করেছেন তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। তা না হলে এই সেক্টর ঠিক করা যাবে না। আজ যে মালয়েশিয়ার ভিসার দাম ১০ হাজার রিঙ্গিতে এসে দাঁড়িয়েছে এটা আমরা তাদের শিখিয়েছি। আগে ভিসার দাম ছিল তিন থেকে চার হাজার রিঙ্গিত। তাই ভিসার দাম কমাতে হবে। আগের মন্ত্রী খাইছে, সালেহীন (সাবেক প্রবাসী কল্যাণ সচিব) খাইছে। এখনো সিন্ডিকেট তৎপর, উপদেষ্টাদের সাথে তাদের দহরম-মহরম। এখনো তারা ক্ষমতাধরদের সাথে ওঠাবসা করছেন। সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement