অবৈধ দখলদারদের কবলে নারায়ণগঞ্জ রেললাইনের দু’পাশ
- নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
- ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৫৩
অবৈধ স্থাপনা দিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই দখল হয়ে রয়েছে নারায়ণগঞ্জ রেলস্টেশন এলাকা। এর ফলে রেলের জায়গা সঙ্কুচিত হয়ে যাওয়ায় যাত্রীরা ঠিকমতো চলাচল করতে না পারার পাশাপাশি ট্রেন চলাচলের সময় ট্রেনে কাঁটা পড়ে দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটছে। দুর্ভোগের পাশাপাশি বাড়ছে দুর্ঘটনা। ফলে অনেকেই আহত হচ্ছেন, বরণ করে নিচ্ছেন পঙ্গুত্ব।
নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় লোকজন মনে করেন, ৫ আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রেলওয়ে স্টেশনের আশপাশে থাকা সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে কিন্তু এখনো দেদারসে চলছে ব্যবসাবাণিজ্য। সেই সাথে আগের ন্যায়ই এসব স্থাপনা থেকে চলছে চাঁদাবাজি। এসব বিষয়ে অভিযোগের তীর নারায়ণগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার কামরুল ইসলামের দিকে। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে তার কোনো পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যায় না।
এ দিকে, এসব অবৈধ স্থাপনার কারণে পরিষ্কার কাজ করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় পরিচ্ছন্নকর্মীদের। তাদের কেউ এ নিয়ে প্রতিবাদ করতে হলে বিভিন্নভাবে হুমকি প্রদান করা থেকে শুরু করে বদলী করে দেয়া হয়। এর আগে গত ৮ নভেম্বর রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় ডেঙ্গু প্রতিরোধ সচেতনতা বৃদ্ধি ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করেন নারায়ণগঞ্জ স্কাউটসের সদস্য ও বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা। অচিরেই এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা না হলে আগামীতে আরো দুর্ঘটনার পাশাপাশি ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জানা গেছে, ২০২১ সালের ২৬ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ রেলস্টেশনে সামনে বাস-ট্রেনের সংঘর্ষে এক ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে। ওই দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই দুই জনের মৃত্যু হয়। আহত হোন কমপক্ষে ৭ জন। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন পথচারীও ছিল। এ ঘটনার পর শুধু নামমাত্র উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হলেও এখনো এটি দখলমুক্ত করা সম্ভব হয়নি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ট্রেন চলাচল করার দুই পাশে বর্তমানে গড়ে তোলা হয়েছে ভাতের হোটেল, চা-সিগারেটের দোকান, ফলের আড়ৎ ও থান কাপড়ের দোকান এবং বাজারসহ বিভিন্ন আইটেমের দোকানপাট। এসব দোকানপাট থেকে স্টেশন মাস্টারের নামে প্রতিদিন চাঁদাবাজি হয়ে থাকে। সেই টাকা পদমর্যাদা অনুসারে ভাগবণ্টন করা হয়।
অবৈধ স্থাপনার সুযোগে রেলের কিছু অসাধু কর্মকর্তা অবৈধ স্থাপনা ভাড়া দিয়ে রাতের আঁধারে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে রেলওয়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, রেলওয়ে মাস্টারের গাফিলতিসহ চার দফা দাবিতে গত ৩০ অক্টোবর বাংলাদেশ রেলওয়ের চতুর্থ শ্রেণী সরকারি কর্মচারী সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির মনির আহম্মেদ এবং নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির রামচরণ সর্দারের পক্ষ থেকে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হকের কাছে একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করার পর পরিচ্ছন্ন কর্মীদের মাটি কাটা, ঘাস কাটা, পাথর উঠানো, ড্রেন বানানো ইত্যাদি কাজগুলো করার জন্য চাপ সৃষ্টি করা হয়।
যদিও ওই কাজগুলো করার জন্য পি.ডব্লিউ.আই.ডব্লিউ বিভাগের লোকজন সরকার কর্তৃক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু সিস্টেমেটিক্যালি তাদের থেকে বেতনের অর্ধেক অংশ নিয়ে সুযোগ করে দেয়া হয়েছে অন্য কাজ অথবা ব্যবসা করার জন্য।
ওই কাজগুলো করতে তারা অস্বীকৃতি জানালে তৎকালীন অনেক দূরে বদলি করানো হবে বলে তাদের হুমকি দেয়া হয়। স্টেশনের অনিয়ম তথা দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় ইতিমধ্যে ছয়জন পরিচ্ছন্ন কর্মীকে নারায়ণগঞ্জ রেলস্টেশন থেকে বদলি করে অন্যান্য রেলওয়ে ষ্টেশনে পাঠানো হয়েছে।
বর্তমানে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য মাত্র ৫ জন পরিচ্ছন্ন কর্মী রয়েছেন। তার মধ্যে পরিচ্ছন্নকর্মী মোফাজ্জল হোসেন খান শুরু থেকেই পরিচ্ছন্নতার কাজ না করে নারায়ণগঞ্জ স্টেশন মাস্টার কামরুল ইসলাম খানের ব্যক্তিগত কাজ, যেমন : স্টেশনের অলিতে গলিতে প্ল্যাটফর্মের ওপরে দোকানপাট ও হকার বসিয়ে তাদের থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা তোলা এবং স্টেশন মাস্টার অফিসের সামনে হাঁস-মুরগি কবুতরের খামার দেখাশোনা করাই হচ্ছে মোফাজ্জলের কাজ।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা