পাঠ্যবইয়ে মুসলমানদের ইতিহাস সঠিকভাবে তুলে ধরতে হবে
বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে মাহমুদুর রহমান- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ১০ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৪০
পাঠ্যপুস্তকে মুসলমানদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সঠিকভাবে তুলে ধরে শিক্ষা কারিকুলাম প্রণয়নের আহ্বান জানিয়েছেন দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের প্রবর্তিত কারিকুলামে মুসলিম সুলতানদের বহিরাগত দখলদার হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে। তবে দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে শিক্ষা কাঠামোর নতুন কারিকুলামে জনআকাক্সক্ষার প্রতিফলন না ঘটলে অভিভাবক ও সাধারণ জনগণই এটা রুখে দেবে। ইতিহাস থেকে মুসলমানদের অবদানের কথা কখনোই মুছে দেয়া যাবে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন। গতকাল শনিবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে দৈনিক নয়া দিগন্তের সাংবাদিক শাহেদ মতিউর রহমান রচিত ‘আওয়ামী লীগের বিতর্কিত কারিকুলাম’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে মাহমুদুর রহমান আরো বলেন, অতীতে সবসময়ই বাঙালি হিন্দু সংস্কৃতি আমাদের মুসলমানদের ওপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। এই কাজ গত ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদি শাসনামলে কোনো ধরনের রাখঢাক না করে একতরফাভাবেই চালানো হয়েছে। অবশ্য স্বাধীনতার পর গত অর্ধশতাব্দীকাল থেকেই ইতিহাসকে বিকৃত করার চেষ্টা চালানো হয়। তিনি বলেন, যে স্বাধীন সুলতানরা এ দেশের স্বাধীনতার স্বপ্ন বহুকাল আগেই দেখেছিলেন, সেখানে তাদেরকেই বহিরাগত দখলদার ও ভিনদেশী শাসক হিসেবে পাঠ্যবইয়ে উপস্থাপন করা হয়েছে। এটা নিয়ে এ দেশের সচেতন মানুষ বিশেষ করে অভিভাবকরা বিভিন্নভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তারা ফেসবুকসহ সোশ্যাল মিডিয়াতেও প্রতিবাদ করেছেন। এখন সময় এসেছে পাঠ্যপুস্তকে বাঙালি মুসলমানদের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার। আমি মনে করি শাহেদ মতিউর রহমান লিখিত এই বইটি একটি সময়ের মাইলফলক হিসেবে আগামী দিনে সাক্ষী হিসেবে বিবেচিত হবে। আর এই কাজে অন্যদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
দৈনিক নয়া দিগন্তের সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মুখ্য আলোচক ছিলেন বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশনের সভাপতি প্রফেসর ড. এম কোরবান আলী। সম্মানিত অতিথি থেকে বক্তব্য রাখেন- বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও মোটিভেশনাল স্পিকার ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি শহিদুল ইসলাম, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সেক্রেটারি ও আমার দেশ পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী মো: বরকত আলী, জামালপুর সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আজাদ খান, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) প্রধান সম্পাদক অধ্যাপক মুহাম্মদ ফাতিহুল কাদীর, নয়া দিগন্তের অনলাইন বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ হাসান শরীফ, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) গবেষণা ও প্রশিক্ষণ শাখার কর্মকর্তা কানু কুমার ঘোষ, ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লার অধ্যাপক ড. হানিফ খান, এডুকেশন রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ইরাব) সভাপতি ফারুক হোসাইন, বিশিষ্ট আলেমেদ্বীন মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মো: মিজানুর রহমান সরকার, লেখক ও কলামিস্ট তারেকুল ইসলাম, বুক পয়েন্টের স্বত্বাধিকারী এম এ মুসা খান, বইয়ের প্রকাশক মোফাজ্জল হোসাইন রাসেল ও মো: নাসের উদ্দিন, এডভোকেট জিল্লর রহমান, কৃষিবিদ নুরুজ্জামান, বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা গবেষক মোহাম্মদ আলী প্রমুখ।
আলোচনায় প্রফেসর ড. এম কোরবান আলী বলেন, একটি জাতিকে ধ্বংস করতে হলে তার শিক্ষাব্যবস্থায় গলদ ঢুকিয়ে দেয়াই যথেষ্ট। আমাদের মুসলিম ঐতিহ্যকে বিজাতীয় সংস্কৃতির আড়ালে ঢেকে দেয়ার ষড়যন্ত্র বিভিন্ন আঙ্গিকে বিভিন্ন সময়েই করা হয়েছে। বিশেষ করে মুসলিম শাসকদের চরিত্র হনন করার মতো বিকৃতি ইতিহাস ও আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মগজে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু এতকিছুর পরেও আমরা জাতিকে সঠিক পথে পরিচালনা করার কোনো সঠিক পন্থা নিয়ে এগোতে পারছি না। গত ১৫ বছরে যেভাবে জাতিকে বিপথে পরিচালিত করা হয়েছে এর অবসান হয়েছে। এখন আমাদের নতুন করে শিক্ষা আর সংস্কৃতিতে বিপ্লব ঘটাতে হবে। তবেই আমাদের নতুন প্রজন্ম নতুনভাবে সঠিক ইতিহাস জানার এবং বোঝার সুযোগ পাবে।
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, সত্যের সাথে মিথ্যার কোনো সংমিশ্রণ থাকতে পারবে না। সত্যকে সত্য আর মিথ্যাকে মিথ্যা হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। তিনি বলেন, ইসলাম হচ্ছে সর্বাধুনিক। তাই ইসলামের সাথে আধুনিকতার সংমিশ্রণ ঘটানোর কেনো প্রয়োজন বা সুযোগও নেই। নৈতিকতা ছাড়া শিক্ষা জাতির জন্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর উল্লেখ করে তিনি বলেন, যে শিক্ষা আমাদের সন্তানদের চরিত্রবান হিসেবে গড়ে তুলে পারে না সেই শিক্ষা আরো বেশি ভয়ঙ্কর। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ শুধু শিক্ষা কারিকুলামকে নয়, পুরো দেশকেই ভয়ঙ্কর এক পরিণতির দিকে নিয়ে গেছে। আমাদের এমন একটি কারিকুলাম আওয়ামী লীগ দিয়েছে যা জাতিকে ধ্বংস করার দিকে নিয়ে যাচ্ছিল। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ শিক্ষা নীতিমালার নামে জাতিকে ধ্বংসের নীতিমালা তৈরি করেছিল। তাদের শিক্ষানীতির শিক্ষা হচ্ছে ধর্ষণের সেঞ্চুরি করে দেশের সেরা বিদ্যাপিঠে মিষ্টি বিতরণ করা। কোনো সভ্য যুগে, সভ্য দেশে এমন নিকৃষ্ট ঘৃণিত কাজ আর হতে পারে না। ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো সংস্কৃতিতে সুন্দর ও অত্যাধুনিক সংস্কৃতি নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইসলামী আদর্শে সমাজ গঠন করতে পারলে সমাজে কোনো বৈষম্য, হানাহানি, মারামারি, রক্তপাত, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি থাকবে না। ড. মাসুদ বলেন, আওয়ামী লীগ দাবি করত জামায়াতে ইসলামীসহ ইসলামী দলগুলো নারীদেরকে নেতৃত্বের আসন দেয় না। অথচ আওয়ামী লীগের এক নারী নেতৃত্ব মিডিয়ার সামনে প্রকাশ্যে বলেছেন, আওয়ামী লীগের নেতাদের কাছে দলের নারী কর্মীরা নিজেদেরকে বিলিয়ে না দিলে কোনো পদ-পদবি দেয়া হয় না। এই বক্তব্যের পর আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক আদর্শ বলার অপেক্ষা রাখে না। যেই দলের কাছে তাদের নারী নেত্রীরাই অসহায়, নিরাপদ নয়, সেই দলের কাছে জাতি নিরাপদ থাকতে পারে না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, শিক্ষার সংস্কার ছাড়া কোনো সংস্কারই জাতির জন্য কল্যাণকর হবে না। তাই শিক্ষার সংস্কার করে ইসলামী আদর্শ শিক্ষানীতি তৈরি করতে হবে। ইসলামী আদর্শের শিক্ষানীতি ছাড়া সোনার মানুষ তৈরি করা যাবে না।
অধ্যাপক ড. কাজী মো: বরকত আলী বলেন, শিক্ষা কাঠামোতে বা কারিকুলামে এমন সব বিষয় যুক্ত থাকতে হবে যেখান থেকে আমাদের আগামী প্রজন্ম তথা আমাদের সন্তানরা দেশ গড়ার শিক্ষা লাভ করতে পারবে। অন্যথায় উচ্চ শিক্ষিত হলেও তাদের মধ্যে দেশপ্রেম বা দেশের প্রতি আনুগত্যশীলতা তৈরি হবে না।
ড. মুহাম্মদ আজাদ খান বলেন, নতুনভাবে কারিকুলাম প্রণয়নের কাজ শুরু হলেও এখনো সেখানে অনেক গলদ রয়ে গেছে। শিক্ষা কারিকুলামে আমূল পরিবর্তন আনতে না পারলে আমরা আমাদের কাক্সিক্ষত সেই প্রজন্ম তৈরি করতে ব্যর্থ হবো। তাই কারিকুলাম প্রণয়নে এখন যারা কাজ করছেন তাদেরকেও জনআক্সক্ষার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই কাজ করতে হবে।
অধ্যাপক ফাতিহুল কাদীর বলেন, বিগত দিনে যেভাবে কারিকুলামকে বিতর্কিত করা হয়েছিল এখন নতুনভাবে সেগুলোর সংস্কার শুরু হয়েছে। তবে এ বছরই হয়তো সব কাজ হয়ে যাবে এমনটি বলা যাচ্ছে না। কেননা এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। তবে আমরা যদি সহযোগিতা করি তবে আশা করছি আগামী দিনে যে কারিকুলাম তৈরি করা হবে সেখানে আপামর জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা