২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

বেরোবিতে লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা

-

- অনুপস্থিত শিক্ষক কর্মকর্তারা সাসপেন্ড
- হল ও ছাত্র সংসদ নির্বাচনের সিদ্ধান্ত

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ছাত্র কর্মকর্তা-কর্মচারীদের লেজুড়ভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়াও হল ও ছাত্র সংসদ নির্বাচনের বিষয়েও সিদ্ধান্ত হয়েছে। শহীদ আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত ছাত্র শিক্ষক-কর্মকর্তা, কর্মচারীদের নামে মামলা ও অনুপস্থিত শতাধিক শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ছাড়াও আলোচিত শিক ড. তুহিন ওয়াদুদ, মোহাম্মদ ইউসুফ ও আইরিন বেগমের নিয়োগ জালিয়াতি খতিয়ে দেখতে হয়েছে কমিটি।
গতকাল বিশ্ববিদ্যলয়ের ১০৮ নং সিন্ডিকেট সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বেলা ১১টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সিন্ডিকেট করে চলে সভা। এতে ১০ সদস্যের মধ্যে ৮ জন উপস্থিত ছিলেন।

পরে প্রেস ব্রিফিংয়ে ভিসি ড. শওকত আলী জানান, ক্যাম্পাসের সব অংশিজনের রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তের কথা। বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং ছাত্রদের নৈতিক ও একাডেমিক তত্ত্বাবধায়ন ও নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, হলের সিট বাণিজ্য হল দখলকারী লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি বন্ধ থাকবে। এ ব্যাপারে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়াও গেজেটের ৪ এর গ অনুযায়ী কোন শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সদস্য হতে পারবে না উল্লেখ আছে। এতদিন কেন হলো সেটা আমরা খুঁজব। এখনো যদি কেউ থাকেন সেটাও আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবো।

ভিসি বলেন, আজকের সিন্ডিকেট সভায় ক্যাম্পাসে ছাত্র ও হল সংসদ নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিভাবে সেটা করা যায় সেজন্য একটি কমিটি গঠন করে দেয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর ফেরদৌস রহমানকে আহ্বায়ক এবং ছাত্র উপদেষ্টা ইলিয়াস প্রামাণিককে সদস্য সচিব করে তিনটি হলের প্রক্টরকে সদস্য করা হয়েছে কমিটিতে। তাদের প্রতিবেদনের আলোকে নির্বাচন হবে। আশা করি, ছাত্র সংসদ নির্বাচন হলে শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি-দাওয়া এবং সুষ্ঠু ধারার রাজনৈতিক চর্চা সেখানে করতে পারবেন।
ভিসি জানান, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী সম্পর্কে সিদ্ধান্ত হয়। আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনার বিষয়েও ১০৭তম সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত মতে গঠিত তথ্যানুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদনের আলোকে ওই ঘটনায় জড়িত গণিত বিভাগের শিক্ষক মশিউর রহমান, লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষক আসাদুজ্জামান মণ্ডল আসাদ, কেন্দ্রীয় ভাণ্ডারের সহকারী রেজিস্ট্রার হাফিজুর রহমান, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের উপ-রেজিস্ট্রার মাহবুবা আক্তার, প্রক্টর অফিসের রাফিউল হাসান রাসেল, নিরাপত্তা শাখার উপ-রেজিস্ট্রার তৌহিদুল ইসলাম জনি, কর্মচারী আমির হোসেন আশিকুন্নাহার টুকটুকি, নুরনবীকে সাময়িক বরখাস্তসহ এবং ৭২ জন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে আদালতে মামলার সিদ্ধান্ত হয়। এ ছাড়াও ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত শতাধিক শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে তাদের ছুটির আবেদন নামঞ্জুর করে সাময়িক বরখাস্ত এবং বেতন কর্তনের সিদ্ধান্তও হয়।

ভিসি বলেন, শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আমরা সাময়িক বরখাস্ত করেছি। শৃঙ্খলা কমিটির সভায় তাদের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী স্থায়ী বরখাস্তসহ অন্যান্য ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর ছাত্রদের মধ্যে যারা ক্যাম্পাস থেকে পাস করে চলে গেছেন তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। অভিযুক্ত ৭২ শিক্ষার্থীর মধ্যে অনেকেই আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য দিয়েছেন। অনেকেই দেননি। তাদের বিরুদ্ধে দুই ধরনের সিদ্ধান্ত হবে। ছাত্রত্ব বাতিল এবং ১, ২,৩, ৪ সেমিস্টারের জন্য তাদের ছাত্রত্ব স্থগিতের আদেশ হবে। সেটিও নেয়া হবে শৃঙ্খলা কমিটির সভায়।
ব্রিফিংয়ে ভিসি ড. শওকাত আলী বলে, নিয়োগে জালিয়াতির অভিযোগ মিডিয়া. দুদকসহ বিভিন্ন স্থানে নথি হিসেবি অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় বাংলা বিভাগের শিক্ষক আবু সালেহ মোহাম্মদ ওয়াদুদুর রহমান ওরফে ড. তুহিন ওয়াদুদ, ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক মো: ইউসুফ এবং গণিত বিভাগের শিক্ষক আইরিন বেগমের বিরুদ্ধে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিংস কমিটি করা হয়েছে। সিন্ডিকেট সদস্য ও রংপুর বিভাগীয় কমিশনারকে আহ্বায়ক করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর রহমান ও রেজিস্ট্রারকে কমিটির সদস্য করা হয়েছে। তারা পুরো বিষয়টি তথ্যানুসন্ধান করবেন। এরপর তদন্ত কমিটি গঠনের মাধ্যমে ২০১৮ সালের গেজেট অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ছাড়াও ড. ওয়াজেদ রিসার্স সেন্টারে অনিয়ম, বাস বিক্রিসহ বিভিন্ন অনিয়মের জন্য পৃথক পৃথক কমিটি গঠন করে দেয়া হয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement