ডিএনসির মামুন ও বিএনপি নেতাকে খুঁজছে পুলিশ
- ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ০০:৪৬
রাজধানীর হাতিরঝিলে দীপ্ত টিভির সম্প্রচার কর্মকর্তা তানজিল জাহান তামিম হত্যার ঘটনায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের (ডিএনসি) উপপরিচালক মোহাম্মদ মামুনকে এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। গতকাল দুপুরে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। মামুনকে ক্লোজ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্ত প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার প্রস্তুতি চলছে। তামিম হত্যা মামলায় মামুন এজাহারভুক্ত ১ নম্বর আসামি। তবে মামুনের সাথে ডিএনসির আরেক উপপরিচালকক ও এক সাব-ইন্সপেক্টরের নামও আলোচনায় এসেছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের (ডিএনসি) মহাপরিচালক খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান গতকাল বলেন, মামুনকে ক্লোজ করে সাসপেন্ড করার সুপারিশ করে মন্ত্রণালয়ে কাগজ পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, মামুনের সাথে শামীমের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকতেপারে। এতে দোষের কিছু নেই। তবে অপরাধে জড়ালে- এর সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ ও অভিযোগ পেলে অবশ্যই বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার মো: রুহুল কবির খান জানান, তানজিল জাহান ইসলাম তামিমকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনাটি আমরা গুরুত্বের সাথে তদন্ত করছি। এ ঘটনায় ইতোমধ্যে পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। হাতিরঝিল থানার ওসিকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তদন্তে যার নামই আসুক, সে যেই হোক কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি তদন্তাধীন। এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করা সমীচীন হবে না। তবে আমি আবারো বলছি তদন্তে যার নামই আসুক, সে ছাড় পাবে না। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিএনপি নেতা রবিউল যতই প্রভাবশালী হোক তাকে ছাড় দেবে না পুলিশ। তাকে গ্রেফতারে এরই মধ্যে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালানো হয়েছে। তিনি এখন পলাতক।
এদিকে তামিম খুনের ঘটনায় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ রবিউল আলম রবির সাংগঠনিক পদ স্থগিত করেছে বিএনপি। এ সংক্রান্ত একটি চিঠি দেয়া হয়েছে তাকে। গতকাল বিএনপির কেন্দ্রীয় দফতর সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত রবির সব সাংগঠনিক পদ স্থগিত থাকবে। গত ১১ অক্টোবর রবিকে শোকজ নোটিশ দেয়া হয়েছে। চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়। পরবর্তীতে শেখ রবিউল যে জবাব দিয়েছেন তা সন্তোষজনক না হওয়ায় সব সাংগঠনিক পদ স্থগিত করা হলো। এ হত্যামামলায় ৩ নম্বর আসামি শেখ রবিউল আলম রবি পলাতক আছেন।
জানা গেছে, মামুনের সাথে ডিএনসির আরেক উপপরিচালক শামীম আহমেদের নামও জড়িয়ে আছে নানা অপকর্মে। মামুন ঢাকা দক্ষিণে এবং শামীম ঢাকা উত্তরে উপপরিচালক হিসেবে কর্মরত। বিগত সরকারের সময় পছন্দসই স্থানে চাকরি করে মাত্র কয়েক মাস আগে অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাদেরকে নারায়ণগঞ্জ ও টাঙ্গাইলে বদলি করা হয়। সরকারের পটপরিবর্তনের পরই তারা দু’জনে ফের ঢাকায় ফিরেছেন। ডিএনসি কর্মকর্তাদের কাছে তারা ‘মানিকজোড়’ হিসেবে পরিচিত। তারা একসাথে ঢাকায় ফ্ল্যাট ব্যবসা এবং পূর্বাচলে বেনামে প্লট ব্যবসায় জড়িত বলে চাউর আছে।
ডিএনসির সূত্র বলেছে, মামুন চট্টগ্রাম মেট্রোর উপপরিচালক থেকে ঢাকার প্রধান কার্যালয়ে উপপরিচালক (প্রশাসন), এরপর ঢাকা বিভাগীয় গোয়েন্দার উপপরিচালক, তারপর ফের চট্টগ্রাম মেট্রোর উপপরিচালক হন। সেখান থেকে তাকে কয়েক মাস আগে নারায়ণগঞ্জে বদলি করা হয়। গত ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর বৈষম্যের শিকার এমন দাবি করায় তাকে ঢাকায় এনে দক্ষিণের ডিডি করা হয়েছে।
অন্যদিকে শামীম চট্টগ্রাম মেট্রোর উপপরিচালক থেকে ঢাকা বিভাগীয় গোয়েন্দার উপপরিচালক, ঢাকার প্রধান কার্যালয়ে উপপরিচালক (প্রশাসন) এবং কয়েক মাস আগে টাঙ্গাইলে উপপরিচালক হন। গত ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর বৈষ্যমের শিকার এমন দাবি করায় তাকে ঢাকায় এনে উত্তরের ডিডি করা হয়েছে। মূলত মামুন যেখানে কাজ করেছেন তার কর্মস্থল বদল হলে শামামী সেখানে স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন। শামীমের বিরুদ্ধে মাদকের পারমিট নবায়ন না করা ও নতুন পারমিট না দেয়ার অভিযোগ করেছেন কয়েকজন বার মালিক। মামুন-শামীম মূলত ঢাকার আলোচিত কিং ফিশার বারের মালিক মোক্তার হোসেন এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের একান্ত সচিব (পিএস) হারুন-অর রশিদ বিশ্বাস আস্থাভাজন হিসেবে ডিএনসিতে পরিচিত। হারুন বিশ^াস বার এবং ওয়্যারহাউজ অনুমোদন ও নিয়ন্ত্রক হিসেবে সমালোচিত।
সূত্র বলেছে, হাতিরঝিলের মহানগর প্রজেক্টের বাসায় তামিম হত্যাকাণ্ডের এক বছর আগে ডিএনসির সাব-ইন্সপেক্টর আব্দুস সাত্তারের মাধ্যমে ওই ফ্ল্যাট থেকে তামিমের পরিবারকে উচ্ছেদ করা হয়। সাত্তার নিজেকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের আলোচিত কর্মকর্তা হারুন অর রশীদের মামাতো শ্যালক পরিচয় দিতেন। ১০ অক্টোবর বৃহস্পতিবার সকালে তামিম হত্যাকাণ্ডের আগে ডিবি শামীম ও সাব-ইন্সপেক্টর আব্দুস সাত্তার তাদের কর্ম এলাকার বাইরে হাতিরঝিল এলাকায় অবস্থান করেন। তামিম খুনের পর তাদের মাধ্যমে সটকে পড়েন মামুন।
অভিযোগ প্রসঙ্গে উপপরিচালক শামীম আহমেদ বলেছেন, মামুন তার ব্যাচমেট ও বন্ধু। এছাড়া তাদের কোনো ব্যবসা নেই। যেসব অভিযোগ তোলা হচ্ছে তার সবই সাজানো, বানোয়াট, কাল্পনিক ও মনগড়া। বক্তব্য জানতে মামুনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি।
সাব-ইন্সপেক্টর আব্দুস সাত্তার বলেছেন, ডিবির হারুন অর রশীদ তার দূর সম্পর্কের আত্মীয়। তিনি কোনোভাবেই ডিডি মামুনের ঘনিষ্ঠ না। তার কর্মস্থল ভিন্ন এলাকায়।
উল্লেখ্য, তামিম হত্যাকাণ্ডে এখন পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তারা হলেন- মো: আব্দুল লতিফ, মো: কুরবান আলী, মাহিন, মোজাম্মেল হক কবির, বাঁধন ও মো: রাসেল। তারা সবাই চার দিনের রিমান্ডে রয়েছেন।
তানজিল জাহান ইসলাম খুনের ঘটনায় ১৬ জনকে আসামি করে মামলা করেন নিহত তানজিল জাহান ইসলাম ওরফে তামিমের বাবা। বাড়ি নির্মাণ ও ফ্ল্যাট ভাগাভাগি নিয়ে আবাসন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সাথে বিরোধের জেরে জমির মালিকের ছেলেকে হত্যা করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।