২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
বন্যায় কুমিল্লায় ৮৩ হাজার ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত

‘পেটে ভাত দেবো, না ঘর মেরামত করবো’

বন্যায় কুমিল্লায় ৮৩ হাজার ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত - সংগৃহীত

বন্যায় ঘরবাড়ি হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কুমিল্লার বানভাসি মানুষ। গোমতী নদীর বাঁধ ভেঙে পানির স্রোত যেসব এলাকা দিয়ে গেছে সেসব এলাকায় ঘরবাড়িসহ স্থাপনা ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। কুমিল্লায় বন্যায় ৮ হাজার ৬৭৪টি বাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। এ ছাড়া আরো ৭৪ হাজার ৮১টি ঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির বাসিন্দারা নিম্নআয়ের মানুষ হওয়ায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ঘর নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে পরিবারগুলো।

কুমিল্লা জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কার্যালয় বলছে, জেলায় বন্যায় এক হাজার কোটি টাকারও বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে মানুষের আবাসিক খাতে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলার মধ্যে বন্যায় সবচেয়ে ঘর বেশি ক্ষতিগ্রস্ত বুড়িচং উপজেলায় সাড়ে ১৬ হাজার। এর মধ্যে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত ৪ হাজার ১৪৩টি। মাটির এবং টিনের কাঁচা ঘরবাড়ি ভেঙেছে সবচেয়ে বেশি। গোমতী নদীর বাঁধ ভাঙনে পানির স্রোত যে এলাকা দিয়ে গিয়েছে সে এলাকায় ঘরবাড়িসহ স্থাপনা ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। ব্রাক্ষণপাড়ায় ক্ষতিগ্রস্ত ৪ হাজার ৮০৫টি, এর মধ্যে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত ১ হাজার ১৪৪টি, চৌদ্দগ্রামে ক্ষতিগ্রস্ত ৪ হাজার ৫০০টি, এর মধ্যে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত ১ হাজার ৪৫টি, নাঙ্গলকোটে ১১ হাজার ক্ষতিগ্রস্ত ঘরের মধ্যে ১ হাজার ৫৬টি ঘর সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত, আদর্শ সদরে ১৩ হাজার ৫০০টি, এর মধ্যে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত ৩৩৯টি, লাকসামে ১৪ হাজার ৫০টি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এর মধ্যে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত ৮১৫টি, সদর দক্ষিণে ২ হাজার ৪৮২টি ক্ষতিগ্রস্ত ঘরের মধ্যে ১৩২টি ঘর সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এদিকে জেলার বুড়িচং উপজেলার বুরবুড়িয়া গ্রামে রোজিনা বেগম (৪৫) নামে এক নারী পানির তীব্র স্রোতে মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে স্বামী-সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন বলে জানিয়েছেন।

জানা গেছে, সাজানো বসত-ভিটায় স্বামী-সন্তানদের নিয়ে বসবাস ছিল রোজিনা বেগমের। স্বামী ফজলু মিয়া দিনমজুর। গোমতীর বাঁধ ভেঙে ঘরে বন্যার পানি প্রবেশ করতে শুরু করলে রাতেই দোতলা স্কুলে আশ্রয় নিয়েছি। তারপর থেকে স্কুলের আশ্রয় কেন্দ্রে থাকছেন তিনি।

শিকারপুর গ্রামের নাজমা বেগম (৫০) নামে এক গৃহবধূ জানান, প্রতিবন্ধী এক মেয়েকে নিয়ে অসহায় জীবন কাটাচ্ছেন। ঘরে ফিরে গিয়ে কোথায় থাকবেন চিন্তায় দিশে হারা হয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। জানা যায়, তার বসত ঘরটি বন্যায় হেলে পড়েছে। ঘরটি নতুন করে মেরামত না করা হলে বসবাস করা সম্ভব হবে না।

শ্যমলা বেগম (৪০) নামে এক হতদরিদ্র বিধবা জানান, ‘অনেক আগে স্বামীকে হারিয়ে ১৬ বছরের একমাত্র ছেলেকে নিয়ে আমার দুঃখের সংসার। মানুষের বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ করে কোনোমতে দিনাতিপাত করছেন। ছেলে এতিমখানায় থেকে পড়াশোনা করছে। বন্যায় তার মাটির ঘরটি পুরোপুরি ভেঙে গেছে। ঘর মেরামতের মতো কোনো অর্থ নেই তার।’

এদিকে উপজেলার ষোলনল ইউনিয়নের ইন্দ্রবতী গ্রামের অন্তত ১৫টি মাটির ঘর ধসে গেছে। কোনো কোনোটি মাটির সাথে মিশে গেছে। ঘরহারা হয়ে আত্মীয়স্বজনের বাড়ি ও আশ্রয়কেন্দ্রে থাকছে এসব পরিবার।

রাজাপুর গ্রামের হোসনেয়ারা বেগম নামে এক নারী বলেন, ‘মাথা গোঁজার শেষ সম্বল বন্যার পানিতে ভেঙে গেছে। আমরা এখন কোথায় যাব? যেখানে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়, সেখানে ঘর ঠিক করব কী করে?’

নাজমা বেগম নামে আরেক নারী বলেন, ‘বন্যায় ঘর ভেঙে গেছে। এখন পেটে ভাত দেবো, না ঘর মেরামত করবো এ চিন্তায় আছি। কেউ যদি সাহায্য করতো, তাহলে কোনোরকম জান বাঁচাতে পারতাম।’

বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাহিদা আক্তার জানান, আমরা ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি ঘরের তালিকা তৈরী করেছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘরের তালিকাও পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ এলেই পুনর্বাসনের কাজ শুরু করতে পারবো।

এ বিষয়ে জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো: আবেদ আলী বাসসকে বলেন, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে আমরা জেলার ১৪ উপজেলার ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষয়-ক্ষতির বিস্তারিত তালিকা তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি।

সরকারি ও দাতা সংস্থার প্রতিনিধিদের সাথে কথা বলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সবাইকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি। সূত্র : বাসস


আরো সংবাদ



premium cement