আবারো রোহিঙ্গা প্রবেশে সঙ্কট পুরনো ক্যাম্পে
- গোলাম আজম খান, কক্সবাজার অফিস
- ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৬:৫৩
মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘাতে নাফ নদীসহ সীমান্তের বিভিন্ন জায়গা দিয়ে নতুনভাবে অনুপ্রবেশ করছে রোহিঙ্গারা। দুই পারের দালাল চক্র তাদের অবৈধভাবে বাংলাদেশে পার হতে সহযেগিতা করছে। এতে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা আশ্রয় নিচ্ছে পুরনো ক্যাম্পে, স্বজনদের কাছে। সম্প্রতি আসা রোহিঙ্গাদের কারণে ক্যাম্পে থাকা-খাওয়া নিয়েও সঙ্কট তৈরি হয়েছে।
রোববার থেকে গোলাগুলিসহ বিকট বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসছে। দূর থেকে দেখা যাচ্ছে অগ্নিকাণ্ডের দৃশ্য। আবারো মিয়ানমারের বন্দর শহর মংডুতে তীব্র লড়াই শুরু হয়েছে ওই দেশের সেনাবাহিনী ও আরকান আর্মিদের মধ্যে।
ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের তথ্যে জানা গেছে, সেনাবাহিনী ও আরকান আর্মির মধ্যে চলমান যুদ্ধে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে রাখাইন রাজ্য মংডুতে থাকা রোহিঙ্গাদের। তাদের হত্যার পাশাপাশি পুড়িয়ে দিচ্ছে ঘরবাড়িও। এ অবস্থায় রোহিঙ্গারা জীবন বাঁচাতে নাফ নদীসহ বিভিন্ন জায়গা দিয়ে ক্যাম্পে পালিয়ে আসছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নেতারা জানান, এরই মধ্যে ১০ থেকে ৩০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে। ওপারে অপেক্ষায় আছে আরো ৫০ হাজার। দুই পারের দালাল চক্র মিলে রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে টাকা পয়সা হাতিয়ে নিচ্ছে।
এদিকে অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তরক্ষী বাহিনী, বিজিবি-কোস্ট গার্ড কঠোর অবস্থানে রয়েছে। তারা সীমান্ত থেকে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর পাশাপাশি আটক করছে দালালদের। এরপরেও দীর্ঘ সীমান্তের কোনো না কোনো জায়গা দিয়ে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে রোহিঙ্গারা প্রবেশ করছে। তারা এসে ক্যাম্পের পুরনো রোহিঙ্গা স্বজনদের কাছে আশ্রয় নিচ্ছেন। বাড়তি রোহিঙ্গাদের থাকা-খাওয়া নিয়ে ক্যাম্পে দেখা দিয়েছে নতুন চ্যালেঞ্জ।
ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা বলছেন, জীবন বাঁচাতে তাদের দেশ মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা আত্মীয়-স্বজন ও স্বজাতিদের আশ্রয় দিলেও থাকা-খাওয়া নিয়ে পড়তে হচ্ছে অসুবিধায়। তারা নতুনদের জন্যও সহযোগিতা কামনা করছে।
কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের জাফর আলম জানান, ‘জীবন বাচাঁনোর জন্য রোহিঙ্গারা এদেশে চলে আসছে। তারা আমাদের আত্মীয়-স্বজন। তাদের আমরা আশ্রয় দিচ্ছি। কষ্ট হলেও ছোট ঘরে একসাথে থাকতে হচ্ছে। ভাগাভাগি করে খাবার খাচ্ছি। তাই এই সরকারের কাছে প্রত্যাশা করছি নতুন আসা রোহিঙ্গাদেরকেও যেন আমাদের মতো থাকা-খাওয়ার নিরাপদ ব্যবস্থা করে দেয়।’
আরেক রোহিঙ্গা মোহাম্মদ ইলিয়াছ জানান, ‘আমরা নিজেরাই মাসে জন প্রতি ১৩০০ টাকা রেশন পাই। যা দিয়ে চলা খুব কষ্ট। তাই বলে আমাদের কাছে আশ্রয়ে আসা রোহিঙ্গা ভাই-বোনদের ফেলে দেয়া যাবে না। আমরা তাদের না দেখলে কে দেখবে। তারা বিপদ থেকে বাচাঁর জন্য আমাদের কাছে আসছে। এই অবস্থায় তাদেরকেও সহযোগিতা করা দরকার।’
কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এক আত্মীয়ের বাসায় অবস্থান নেয়া নতুন রোহিঙ্গা নুর কায়দা জানান, ‘মগেরা মংডুতে তাদের ঘরবাড়ি সব পুড়িয়ে দিয়েছে। জীবন বাচাঁনোর জন্য ঝুঁকি নিয়ে হলেও চার সন্তান আর স্বামী নিয়ে এদেশে পালিয়ে এসেছে। তারা নাফ নদী হয়ে আসছে।’
নতুন রোহিঙ্গা বজিমুল হাসান জানান, ‘যুদ্ধ চললেও নিজ দেশ মিয়ারমার থেকে আসতে চাইনি। মংডুতে আমার এক ছেলেকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। আমার ভাইয়ের মেয়ের শরীরে এখনো হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া গুলির চিহ্ন রয়েছে। আমরা জীবন বাঁচানোর জন্য এই দেশে পালিয়ে এসেছি। এখানে আমার এক বোন ২০১৭ সালে পালিয়ে এসেছিল। আমরা তাদের কাছেই অবস্থান নিয়েছি।’
উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য হেলাল উদ্দিন জানান, ‘এমনিতেই রোহিঙ্গারা এদেশের বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে, তার মধ্যে নতুন রোহিঙ্গা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এতে তাদের পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের সেবা প্রদানকারীদেরও বাড়তি চাপে পড়তে হবে। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তরক্ষীদের আরো কঠোর হওয়া দরকার।’
শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মিজানুর রহমানের সাথে এ বিষয়ে যোগাযোগ করলেও তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) টেকনাফ-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো: মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, ‘অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে টহল জোরদার রয়েছে। একজন রোহিঙ্গাও যেন অনুপ্রবেশ করতে না পারে এজন্য আমরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছি। এছাড়াও দালালদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা