আতঙ্কের নাম উখিয়ার হোসেন কলোনি
- হুমায়ুন কবির জুশান, উখিয়া
- ৩০ জুন ২০২৪, ১৭:৫৮
হাঁসচুরির অপরাধে শিশুকে পিটিয়ে আলোচনায় আসা হোসেন আহমেদের বিরুদ্ধে আসছে একের পর এক অভিযোগ। মাদককারবার, জমি দখল, নারী ও শিশু নির্যাতনসহ একাধিক অভেযোগ পাওয়া গেছে তার বিরুদ্ধে। কোনো নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি না হয়েও প্রভাবশালীদের সাথে সখ্য রেখে কিশোর গ্যাংয়ের মাধ্যমে তিনি চালাচ্ছেন তার যাবতীয় অপকর্ম। তার বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করলেই তাকে ধরে এনে প্রচণ্ডভাবে নির্যাতন চালায়। ঘরে-বাইরে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কেউ কিছু করলে তার সাঙ্গদের নিয়ে মারাত্নকভাবে পিটিয়ে একটি ভীতিকর অবস্থা সৃষ্টি করে। হোসেন আহমেদের এহেন অপকর্মে অতিষ্ঠ স্থানীয় এবং মরিচ্যা এলাকার ব্যবসায়ীরা। ধেছুয়াপালং ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের জনসাধারণও তার ভয়ে ভীত থাকে সব সময়।
উখিয়ার পাশের রামু উপজেলার ধেছুয়াপালং ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব ধেছুয়াপালং গ্রামের মৃত জাফর আলমের ছেলে হোসেন আহম্মদ।
উখিয়া উপজেলার শেষ সীমান্তে মরিচ্যা পাগলিরবিল রাস্তার প্রবেশ মুখে হোসেনের রয়েছে বিলাস বহুল বাড়ি ও হোসেন কলোনি। কলোনির পাশে রয়েছে (করাতকল) স’মিল। এই কলোনিতেও চলে নানান অপকর্ম। সেই সুবাদে উখিয়া-রামু দুই উপজেলায় তার সমান বিচরণ। ফলে দু,উপজেলার সীমান্ত লাগোয়া বাজারগুলোতে প্রতিষ্ঠা করেছেন নিজের নিয়ন্ত্রণ। গড়ে তুলেছেন নিজস্ব সিন্ডিকেট। উখিয়া হলদিয়া পালং ইউনিয়নের পাগলিরবিল রাস্তার পাশে গড়ে তুলেছেন একাধিক স্থাপনা। এরমধ্যে হোসেন কলোনিকে নিয়ে নানান আলোচনার শেষ নেই। এই কলোনি হোসেন কলোনি নামে পরিচিত। হোসেন কলোনিতে চলে নানা অপকর্ম। এ কলোনিকে তিনি টর্চারসেল হিসেবে ব্যবহার করেন বলে সরেজমিন পরিদর্শনকালে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে।
সম্প্রতি এই কলোনিতে হাঁসচুরির অপরাধে রাসেল নামের এক ১২ বছরের শিশুকে হোসেন আহমেদ মধ্যযুগীয় কায়দায় পিটিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা গেছে রাসেলকে লাটি দিয়ে নির্মমভাবে পেটাচ্ছেন। ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর হোসেন রাসেল ও তার মাকে গোপন স্থানে সরিয়ে ফেলে, যাতে প্রশাসন কিংবা সাংবাদিকরা রাসেলের বক্তব্য নিতে না পারে। এ সময় হোসেন শিশু রাসেলের বাবাকেও টাকা দিয়ে মুখ বন্ধ করেছেন বলে জানা যায়।
যাতে রাসেলের বাবা আব্দুর শুক্কুর সাংবাদিক বা প্রশাসনের কাছে মুখ না খুলেন। অসহায় গরিব রাসেলের বাবাও থাকেন হোসেন কলোনিতে। তাই জমিদার হোসেনের অবাধ্য হওয়ার সাহস তার নেই।
এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে মোবাইলফোনে হোসেন আহমেদ বলেন, হাঁসচুরির ঘটনায় আমি শাসন করেছি । পিটিয়েছি শিশু রাসেলকে। এছাড়া কয়েকদিন আগে হোসেন আহমদের মিয়ানমারের মাদক আইস পাচার সংক্রান্ত তথ্য র্যাবকে জানান স্থানীয় যুবক আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে জসিম উদ্দিন (২২)। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে হোসেন জসিমকে তার ঘরে ধরে এন বেধড়ক পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। জসিমের কান্নার আওয়াজ শুনে স্থানীয় নুর আহমদের ছেলে নুরুল ইসলাম (২৭) ৯৯৯ ফোন করে খবর দেয়। ঘটনাস্থলে পুলিশ আসে। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে হোসেন জসিমকে নিয়ে পালিয়ে যায়। পালানোর দুই ঘণ্টা পর মুমুর্ষ অবস্থায় পুলিশ জসিমকে উদ্ধার করে। এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই গত শনিবার (২৯ জুন) মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন নুরুল ইসলাম। আগে থেকে ওৎ পেতে থাকা হোসেন আহমেদ ধেছুয়াপালং রহমানিয়া মাদরাসা-সংলগ্ন রাস্তায় মোটরসাইকেল দাঁড় করিয়ে ৯৯৯ ফোন করার কারণে নুরুল ইসলামকে দা দিয়ে কুপিয়ে মাথায় মারাত্নকভাবে আঘাত করে। একের পর এক ঘটনা ঘটালেও পুলিশ এখনো হোসেন আহমেদকে ধরতে পারেনি। হোসেন বর্তমানে পলাতক রয়েছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় আজিজুর রহমান বলেন,‘এলাকায় এমন কোনো অপকর্ম নেই যে হোসেন করে না। তার বিরুদ্ধে কেউ সাহস করে কথা বলে না। জমি দখলসহ বিভিন্ন অপকর্ম করে হোসেন এখন কোটিপতি। অনৈতিক কর্মকাণ্ডেও জড়িত সে।’
এই ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে স্থানীয় ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার গিয়াস উদ্দিন বলেন, হোসেন আহমেদের ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থাসহ সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা না হলে আগামীর প্রজন্ম আলোর পথ হারাবে।