১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

মিয়ানমারের গুলির প্রভাবে বিচ্ছিন্ন সেন্টমার্টিন

টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন যাবার পথে গত কয়েকদিনে একাধিক বাংলাদেশী নৌযানকে লক্ষ্য করে গুলি করা হয়েছে, স্থানীয়দের ধারণা মিয়ানমার সেনা কাজটি করছে - ছবি : ডয়চে ভেলে

বাংলাদেশি নৌযানের দিকে মিয়ানমার থেকে ছুটে আসে গুলি। ছয় দিন ধরে চলছে এই পরিস্থিতি। তাই সেন্টমার্টিন কার্যত বিচ্ছিন্ন। টেকনাফ থেকে কোনো নৌযান সেন্টমার্টিনে যেতে পারছে না, সেখান থেকে আসতেও পারছে না।

এর মধ্যে তিন দফা গুলির ঘটনা ঘটেছে। এমন অবস্থায় সেন্টমার্টিনের ১০ হাজারের মতো অধিবাসী খাদ্য ও নিত্যপণ্য নিয়ে সঙ্কটে পড়েছেন। তাদের মধ্যে চরম উৎকণ্ঠাও কাজ করছে।

মঙ্গলবার (১১ জুন) কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন যাওয়ার পথে সাগরের ঘোলচর এলাকায় একটি স্পিডবোটকে নৌযান নিয়ে ধাওয়া করে গুলি করা হয়। মিয়ানমারের সৈন্যরাই গুলি চালিয়েছে স্থানীয়দের ধারনা। তবে এ ঘটনায় কেউ হতাহত হননি।

এ বিষয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিয়ানমার উইংয়ের মহাপরিচালক মিয়া মো: মাইনুল কবির বলেছেন, ‘প্রথম যেদিন এই ঘটনা ঘটে, সেদিনই আমরা প্রতিবাদ জানিয়েছি। আজকের ঘটনার পর কূটনৈতিক চ্যানেলে আবারো প্রতিবাদ জানাব। তবে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে যে এখন স্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে না, সেটা তো আমরা বুঝতেই পারছি। ওই এলাকা এখন কাদের নিয়ন্ত্রণে সেটিও পরিস্কার নয়। তবে আমাদের কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যহত আছে।’

স্পিডবোট মালিক সৈয়দ আলম বলেন, ‘আগের গুলির ঘটনার পর গত পাঁচ দিন আমরা নদীতে যাইনি। প্রশাসনের সাথে আলোচনার পর মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে চট্টগ্রাম থেকে চিকিৎসা নিয়ে ফেরত আসা অসুস্থ এক রোগীকে নিয়ে সেন্টমার্টিন যাচ্ছিল আমাদের একটি স্পিডবোট। সাগরের ঘোলচর এলাকায় পৌঁছালে মিয়ানমারের সীমান্তের একটি ট্রলার থেকে ওই স্পিডবোট লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করা হয়। পরে স্পিডবোটটি কোনোরকমে সেন্টমার্টিন পৌঁছে যেতে সক্ষম হয়। এ ঘটনায় কেউ হতাহত হননি।’

কারা এই গুলি করছে জানতে চাইলে সৈয়দ আলম বলেন, ‘আগে আমরা নিশ্চিত ছিলাম না, কারা এটি করছে। কিন্তু আজকে যখন ছোট ছোট নৌযান নিয়ে আমাদের স্পিডবোটে গুলি করা হয় তখন সেখানে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর জাহাজ ছিল। ফলে আমরা ধারণা করছি, জান্তার সৈন্যরাই এটা করছে। টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন যাওয়ার পথে নাফ নদের মোহনার শেষে নাইক্ষ্যংডিয়া এলাকা অতিক্রম করার সময় মিয়ানমারের প্রান্ত থেকে বোটগুলো লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়া হচ্ছে। আমরা এখন সেন্টমার্টিনে চরম আতঙ্কের মধ্যে দিন পার করছি। কারণ, ওই এলাকায় আমাদের বিজিবি বা কোস্টগার্ডের কোনো টহল নেই। তারা উপকূলে চলে এসেছে। ফলে জান্তার সৈন্যরা চাইলে যে কোনো সময় আমাদের সেন্টমার্টিনেও চলে আসতে পারে বলে আমরা আশঙ্কা করছি। আমরা এখন খুবই নিরাপত্তাহীনতায় আছি।’

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দীর্ঘদিন ধরে সংঘাত চলছে। এই পরিস্থিতিতে সে দেশের সীমান্ত এলাকা থেকে বাংলাদেশের দিকে ছোঁড়া হচ্ছে গুলি। এ কারণে ছয় দিন ধরে দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে দ্বীপের প্রায় ১০ হাজার বাসিন্দা খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সঙ্কটে পড়েছেন।

সেন্টমার্টিনের বাসিন্দা হাবিবুর রহমান বলেন, ‘সেন্টমার্টিনে অতিরিক্ত খাদ্য রাখার কোনো ব্যবস্থা নেই। প্রতিদিনই টেকনাফ থেকে ট্রলারে করে নানা ধরনের নিত্যপণ্য আসে। কিন্তু ছয় দিন হল কিছুই আসছে না। এখন সেন্টমার্টিনে কাঁচামাল কিছুই নেই। চাল-ডাল দিয়ে কোনোভাবে দিন চলছে। আবার যা-ও আছে, তার দামও ব্যবসায়ীরা দ্বিগুন-তিনগুন পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছেন। ফলে আমরা অনেক কষ্টে আছি। এভাবেও আর দুই-একদিন হয়ত চলা যাবে। এরপর আমাদের না খেয়ে থাকতে হবে। আমরা প্রশাসনকে বারবার ব্যবস্থা নিতে বলছি, কিন্তু এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো পদক্ষেপ আমরা দেখতে পাইনি।’

গত ৫ জুন টেকনাফ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষে ফেরার পথে নির্বাচন কর্মকর্তা ও ৮ জুন সেন্টমার্টিনে ইট-বালু ও খাদ্যসামগ্রী বহনের ট্রলার লক্ষ্য করে মিয়ানমার সীমান্ত থেকে গুলি বর্ষণ করা হয়েছিল। সর্বশেষ মঙ্গলবার আবারো গুলি চালানো হলো।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আদনান চৌধুরী বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে স্পিডবোট, ট্রলারে গুলির ঘটনায় নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে আপৎকালীন রুট হিসেবে শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিমে জেটি ঘাট চালু করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। আমি নিজে নৌযানের মালিকদের সাথে বৈঠক করেছি। দুই দিন আগে কক্সবাজারের ডিসি অফিসেও বৈঠক হয়েছে। আমরা নৌযান মালিকদের ডেকে বলেছি, বিকল্প রুট দিয়ে আপাতত খাদ্য পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে।’

তবে সেন্টমার্টিন সার্ভিস ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুর রশীদ বলেন, ‘আমাদের বিকল্প রুট ব্যবহারের কথা বলা হচ্ছে, কেউ কেউ ইনানী থেকে যাওয়ার কথাও বলছেন। কিন্তু এভাবে তো সেখানে পৌঁছানো কঠিন। পানি বেড়ে যাওয়ায় ওই রুটটি ঝুঁকিপূর্ণ। খরচও অনেক বেশি হবে। আর আমরা তো মিয়ানমারে যাচ্ছি না, তাহলে আমাদের দেশের সীমান্তের মধ্যে ঢুকে তারা কেন গুলি করবে? সরকারের পক্ষ থেকে তো এ ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। তা না হলে সেন্টমার্টিনের বাসিন্দারা সঙ্কটে পড়বেন।’

এদিকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্নের ফলে সেন্টমার্টিনে দেখা দিচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য সঙ্কট। দ্বীপে বসবাসরত ১০ হাজার বাসিন্দার মধ্যে যারা দিনে এনে দিনে খায়, বেশি সমস্যায় পড়েছেন তারাই। খাদ্য ও পণ্যবাহী বোট চলাচল করতে না পারায় সেন্টমার্টিনের দোকানগুলোতে যেমন মজুত করা খাদ্যপণ্য শেষ হতে চলেছে, তেমনি সেই সুযোগে কিছু ব্যবসায়ী পণ্যের দাম দ্বিগুণ নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। দ্রুত সমাধান না হলে দ্বীপবাসীর জন্য খাদ্য, চিকিৎসাসহ অন্য সমস্যা বাড়তে পারে বলে ধারণা স্থানীয়দের।

দ্বীপের মুদির দোকানি আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘ট্রলার চলাচল বন্ধ থাকার কারণে টেকনাফ থেকে কোনো ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য আনতে পারেনি। এর ফলে দোকানে থাকা সবকিছু শেষের পথে। শুধু চাল ছাড়া কোনো মালামাল নেই। এভাবে চলতে থাকলে দ্বীপের মানুষদের না খেয়ে থাকতে হবে।’

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, ‘দ্বীপে মানুষের মাঝেও খাদ্যপণ্যের অভাব দেখা দিয়েছে। এটি দ্রুত সমাধান না হলে বড় ধরনের অভাব দেখা দিতে পারে দ্বীপে। শুধু তাই নয়, আমাদের যদি কোনো রোগ ব্যাধি হয়, তাহলে বিনা চিকিৎসায় আমাদের এখানে মৃত্যুবরণ করতে হবে। এই পরিস্থিতি তো দিনের পর দিন চলতে পারে না। আমি নিজে প্রশাসনের সাথে কথা বলেছি, তারা ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন, কিন্তু এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো পদক্ষেপ আমরা দেখতে পাচ্ছি না।’

সূত্র : ডয়চে ভেলে


আরো সংবাদ



premium cement
ঘড়ির সময় বদলাতে চান না ট্রাম্প ভারতীয় মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়াতে অস্ত্র বাংলাদেশ : ওয়েইসি সিরিয়ার বিদ্রোহীদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ রাখছে যুক্তরাষ্ট্র খেয়ালখুশিমতো খরচ হয়েছে জলবায়ু তহবিলের অর্থ গুমে শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততা পেয়েছে কমিশন : র‌্যাব বিলুপ্তির সুপারিশ আরাকানে সাড়ে ৪ শ’সেনা নিহত, জান্তার নিয়ন্ত্রণ শেষ বিপাকে রোহিঙ্গারা ভারতসহ সাত ‘অসহযোগী’ দেশের তালিকা ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের সিরীয়রা স্বাধীনতা উদযাপনের সময় দামেস্কে ইসরাইলের হামলা আগামীতে সবাইকে নিয়ে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ে তোলা হবে বেক্সিমকোর জন্য ১৮০ কোটি টাকা ছাড় করছে জনতা ব্যাংক বেকারত্বহীন বাংলাদেশ গঠনে কাজ করছে জামায়াত : ডা: শফিক

সকল