মিরসরাইয়ে প্রবাসী এমদাদ হত্যাকাণ্ড পারিবারিক কলহে
- মিরসরাই (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা
- ২৩ মার্চ ২০২৩, ২০:২৬
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে পারিবারিক কলহে প্রবাস ফেরত স্বামী এমদাদুল হককে (৪৮) পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী বৈদ্যুতিক শক দিয়ে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন ঘাতক স্ত্রী নারগিস মোস্তারি (৪০)।
বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) চট্টগ্রাম চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জিহান সানজিদার আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে হত্যার বিষয়টি অকপটে স্বীকার করেন নারগিস ও ভাড়াটে খুনি আইয়ুব নবী।
নিহত এমদাদুল হক উপজেলার ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ ওয়াহেদপুর গ্রামের ফরাজি বাড়ির মরহুম মনছুর আহম্মদের ছেলে।
নারগিস সাহেরখালী ইউনিয়নের মধ্য সাহেরখালী গ্রামের আলা মিয়া চৌধুরী বাড়ির আনোয়ারুল আজিমের মেয়ে। আইয়ুব নবী একই বাড়ির নিজাম উদ্দিনের ছেলে। তিনি পেশায় দিন মজুর।
এদিকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহত এমদাদের ছোট ভাই কামলা পাশা বুধবার রাতে নারগিস ও আইয়ুবকে (২২) আসামি করে মিরসরাই থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে এমদাদের স্ত্রী নারগিস জানান, ২০০৪ সালে এমদাদের সাথে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে স্বামী প্রবাসে থাকতেন। প্রবাসে থাকাকালিন ঠিকমতো টাকা পয়সা দিত না, অনেক কষ্ট দিত। এর মধ্যে তাদের দু’টি সন্তানের জন্ম হয়। গত বছরের সেপ্টেম্বরে স্বামী একেবারে দেশে চলে আসেন। দেশে আসার পরও ঠিকভাবে টাকা পয়সা খরচ করত না। এ নিয়ে তার সাথে আমার প্রায় সময় ঝগড়া হত। তার আচরণে আমি অতিষ্ঠ হয়ে মেরে ফেলার মনস্থির করেছি। এরপর বিষয়টি আমাদের বাড়ির কাজের লোক আইয়ুব নবীকে বলি। সে প্রথমে রাজি না হলেও পরে ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে আমার স্বামীকে খুন করতে রাজি হয়।
পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার তিন দিন আগে বাবার বাড়িতে থেকে স্বামীর বাড়ি ওয়াহেদপুরে চলে আসি। আসার সময় সাহেরখালী ভোরের বাজারের একটি ফার্মেসি থেকে ঘুমের ওষুধ ক্রয় করে সাথে নিয়ে আসি। আগের পরিকল্পনা অনুযায়ী মঙ্গলবার (২১ মার্চ) আছরের পর রান্না করা সেমাইয়ের সাথে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দিই। সেমাই খেয়ে আমার স্বামী অচেতন হয়ে পড়ে। এরপর আইয়ুব নবীকে ফোন করে বাড়িতে আসতে বলি। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সে আমার ঘরে আসে। তখন আমার স্বামীর জ্ঞান ফিরে আসে। তখন তাকে বলি ডাক্তার এসেছে, তোমাকে চিকিৎসা করতে। এরপর আমি একহাত চেপে ধরি, আইয়ুব নবী আরেক হাতে জিআই তার পেছিয়ে মাল্টিফ্লাগ থেকে সংযোগ দিয়ে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে। এরপর মাল্টিফ্লাগ পাশের পুকুরে ফেলে দিয়েছি।
জবানবন্দিতে নারগিস আরো বলেন, মারা যাওয়ার পর আমার স্বামীর মানিব্যাগ থেকে ৫০০ টাকা নিয়ে আইয়ুব নবীকে ভাড়ার জন্য দিই। এরপর রাতে সে চলে যায়। পরে রাত ২টায় আমার দেবর কামাল পাশাকে ফোন করে তার ভাই বিদ্যুৎ পৃষ্টে মারা যাওয়ার বিষয়টি জানাই।
মামলা অপর আসামি ও ঘটনার সাথে জড়িত আইয়ুব নবী আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে এমদাদুল হককে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি জানান, নারগিসকে আমি ফুফু বলে ডাকতাম। কিছুদিন আগে তিনি তার পারিবারিক কলহের কথা বলে তার স্বামীকে হত্যা করতে আমাকে সহযোগিতা করতে বলে। আমি অপারগতা প্রকাশ করি। পরে আমাকে টাকার লোভ দেখায়। তার স্বামীকে মারতে পারলে আমাকে ৫০ হাজার টাকা দেয়ার মৌখিক কথা হয়। পরিকল্পানা অনুযায়ী মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ফুফু তার বাড়িতে যেতে ফোন দিলে আমি ওই বাড়িতে গিয়ে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে হত্যা নিশ্চিত করার পর ফুফু থেকে ৫০০ টাকা নিয়ে বাড়ি চলে আসি। আমাকে ৫০ হাজার টাকা দেয়ার কথা থাকলেও দেয়নি। পরে দেবে বলে বাড়ি চলে যেতে বলে। এরপর পুলিশ আমাদের ধরে থানায় নিয়ে যায়।
নিহতের ছোট ভাই ও মামলার বাদি কামাল পাশা জানান, আমরা শুরু থেকে বলেছি। আমার ভাইকে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। আদালতে দেয়া আসামির জবানবন্দি অনুযায়ী আমাদের কথা সত্য হয়েছে। আমি মিরসরাই থানা পুলিশকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রহস্য উদঘাটন ও আসামিদের গ্রেফতার করার জন্য। আমরা আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। যাতে অন্য কোনো স্ত্রীর হাতে তার স্বামীকে নির্মমভাবে খুন হতে না হয়।
এদিকে লাশের ময়নাতদন্ত শেষে বুধবার সন্ধ্যায় উপজেলার ছোট কমলদহ বাজারে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় হতভাগ্য এমদাদুল হককে। নাহিয়ান ও নামিয়ান নামে এমদাদের দু’টি ছেলে রয়েছে।
আরেক ভাই হুমায়ুন কবির বলেন, ভাইয়া এক বছর আগে প্রবাস থেকে বাড়িতে চলে আসে। ভাবি সব সময় বাবার বাড়িতে থাকতে চাইত এবং উনার বাবার এলাকায় ভাইয়াকে বাড়ি করতে বলেছে। ভাইয়া রাজি না থাকায় প্রায় সময় তাদের মধ্যে ঝগড়া হতো। কিন্তু এভাবে মেরে ফেলবে কখনো চিন্তা করতেও পারিনি।
দক্ষিণ ওয়াহেদপুর এলাকার বাসিন্দা মো: শাখাওয়াত হোসেন বলেন, একজন স্ত্রী কিভাবে তার স্বামীকে এভাবে পৈশাবিক কায়দায় খুন করতে পারে? এই মহিলা ও খুনের সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
মিরসরাই থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: কবির হোসেন বলেন, এমদাদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় স্ত্রী নারগিত ও ভাড়াটে আইয়ুব নবীকে আসামিকে করে তার ছোট ভাই কামাল পাশা থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। এজারহারনামীয় দু’আসামিকে গ্রেফতার করে বৃহস্পতিবার সকালে আদালতে পাঠায়। বিজ্ঞ আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে দু’আসামি হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি অকপটে স্বীকার করেছেন।
তিনি আরো বলেন, ঘটনার ২৪ ঘন্টার মধ্যে হত্যার আলামত জিআই তার, মালিফ্লাগ ও ৫০০ টাকার একটি নোট উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি।
উল্লেখ্য, গত বুধবার ভোরে ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ ওয়াহেদপুর এলাকায় এমদাদুল হকের ঘর থেকে তার লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। জিজ্ঞাসাদের জন্য স্ত্রী নারগিস মোস্তারিকে আটক করা হয়। একইদিন ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে আইয়ুব নবীকে আটক করা হয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা