কমলনগরে জলাবদ্ধতায় তিনশতাধিক পরিবারের দুর্ভোগ চরমে
- কমলনগর (লক্ষ্মীপুর) সংবাদদাতা
- ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০, ২১:০২, আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০, ২১:১৯
লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার চরকালকিনি ইউনিয়নের চরসামছুদ্দিন এলাকার এক প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে ৫০ বছরের পুরনো একটি শাখা খাল ভরাট করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগ উঠেছে ইসমাইল হোসেন নামের ওই প্রভাবশালী অবৈধ ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে উত্তোলন করা বালু দিয়ে শাখা খালটির প্রায় ২০০ ফুট অংশ ভরাট করে নিজের দখলে নিয়েছেন। এতে করে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় প্রায় ২৫০ একর ফসলি জমি নষ্ট হওয়াসহ এলাকার তিন শতাধিক পরিবারকে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন। এ অবস্থা থেকে প্রতিকার চেয়ে ভুক্তভোগী এলাকাবাসী বৃহস্পতিবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেন।
অভিযোগ সূত্র ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্ষা মৌসুমে চরকালকিনি ইউনিয়নের দুই ও তিন নম্বর ওয়ার্ডের সীমানা নির্ধারণী জয় বাংলা শাখা খাল দিয়ে চরসামছুদ্দিন এলাকার পানি স্থানীয় জয় বাংলা খাল হয়ে মেঘনা নদীতে নিষ্কাশন হয়ে আসছিল। দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে এভাবে পানি নিষ্কাশন হয়ে আসলেও গত তিন মাস আগে স্থানীয় বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন শাখা খালটি ভরাট করে ফেলেছেন। খালের জমি নিজের দাবি করে ওই প্রভাবশালী অবৈধ ড্রেজার মেশিনে বালু উত্তোলনের মাধ্যমে ওই খালটি ভরাট করায় এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, শাখা খালটির পূর্ব ও পশ্চিম মুখে বস্তার বাঁধ দিয়ে প্রায় ২০০ ফুট অংশ বালু দিয়ে ভরাট করায় পানি প্রবাহ বন্ধ রয়েছে। এতে টানাবৃষ্টি ও মেঘনার জোয়ারের পানি জমে খালটির আশপাশ এলাকা জলমগ্ন অবস্থায় রয়েছে। দীর্ঘ এক মাস ধরে চলতে থাকা এ জলাবদ্ধতার কারণে কৃষকদের চাষ করা প্রায় ৩০০ একর ফসলি জমির আউশ, আমন ও শাকসবজির ২৫০ একরই নষ্ট হয়ে গেছে। বাড়ির আঙিনা ও চলাচলের রাস্তায় পানি জমে থাকায় স্থানীয় বাসিন্দারা চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
আবু তাহের নামে স্থানীয় এক কৃষক জানান, ১৭ হাজার টাকা খরচ করে তিনি এক একর জমিতে আউশ ধান আবাদ করেছেন। শাখা খালটি ভরাট হওয়ায় খেতে পানি জমে থাকায় তার পুরো জমির ফসলই এখন নষ্ট হয়ে গেছে।
কৃষক আব্দুল মন্নান জানান, জলাবদ্ধতার কারণে ২০ শতক জমির শসা গাছ পচে যাওয়ায় তিনি প্রায় অর্ধলাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছেন।
মো. কামাল নামে আরেক কৃষক সদ্য রোপন করা তার দুই একর জমির আমন ধানের চারা নষ্ট হয়েছে বলে জানান।
কামাল হোসেন, খাজা আহাম্মদ, আলী হোসেন, মো. দুলাল, আমির হোসেন ও আমির ইসলামসহ কয়েকজন এলাকাবাসী জানান, এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের একাধিকবার জানানো হলেও কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। উপয়ান্তু না পেয়ে তারা এখন এইএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এ সময় তারা এ জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এদিকে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে অভিযুক্ত ইসমাইল হোসেন জানান, শাখা খালটি সরকারি জায়গা নয়; তার ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। যে কারণে তিনি স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিসহ জনপ্রতিনিধিদের জানিয়ে তিন মাস আগে বালু দিয়ে সেটি ভরাট করেছেন। ওই সময় কেউ বাধা না দিলেও এখন অনেকেই তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করছেন। এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে এখন ড্রেন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হলে তিনি জায়গা দিতে সম্মত রয়েছেন বলে জানান।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোবারক হোসেন অভিযোগ পাওয়া সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, সমস্যাটি সমাধানের জন্য স্থানীয় চরকালকিনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অতিদ্রুত এর সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।