২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

খালি করা হলো কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকত, ৪ জনকে জরিমানা

-

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে সবধরনের জনসমাগম পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন। বৃহস্পতিবার বেলা দুইটার দিকে গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো: কামাল হোসেন।

এদিকে, বৃহস্পতিবার সকালে হিমছড়ি, ইনানী, কক্সবাজার সৈকতে পর্যটক চোখে পড়েনি। চারিদিকে শূন্যতা বিরাজ করছে। আবাসিক হোটেলগুলোতে চোখে পড়ার মতো কোনো পর্যটক নেই। আবাসিক হোটেলের মালিকরা প্রশাসনের নির্দেশনা মেনে চলছে।

প্রশাসনের ঘোষণার পর থেকে কক্সবাজারে পর্যটক আগমন ঠেকাতে মোড়ে মোড়ে অবস্থান নিয়েছে পুলিশসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। যাত্রীবাহী বাস তল্লাসি করতে চকরিয়ায় বসানো হয়েছে চেকপোস্ট।

বিভিন্ন বাস কাউন্টার ও জনসমাগমের জায়গায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রচারপত্র বিলিসহ সতর্কতামূলক প্রচারণা চালানো হয়। যেসব পর্যটক বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে অবস্থান করছেন তারা নিরাপদে গন্তব্যে ফিরতে পারবেন। তবে, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা জারির পর কোনো আবাসিক হোটেলে নতুন বুকিং নেয়া যাবে না বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, যেসব পর্যটক ইতিমধ্যে হোটেলে অবস্থান করছেন তাদেরও ফেরত যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। কোনো পর্যটক, পিকনিক পার্টি, কনফারেন্স বা অন্য কোন জমায়েত ও সমাবেশের উদ্দেশ্যে কক্সবাজার শহরে কেউ যাতে আসতে না পারে সেজন্য কক্সবাজার-চট্টগাম মহাসড়কের চকরিয়ার হারবাং পয়েন্টে জেলা পুলিশের চেকপোস্ট বসানো হয়েছে।

এদিকে, হোম কোয়ারেন্টাইন নির্দেশ অমান্য করার দায়ে বিদেশফেরত চার প্রবাসীকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফকরুল ইসলাম জানান, করোনাভাইরাস প্রতিরোধ এবং কক্সবাজারকে করোনামুক্ত রাখতে জনসমাগম বন্ধ রাখা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সমুদ্রসৈকতে দেশি-বিদেশি পর্যটক যাতে সমাগম না হয় সে জন্য এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সভা-সমাবেশসহ সব ধরনের জনসমাগম না করার নির্দেশনার কথা জানান এ কর্মকর্তা।

কক্সবাজারে দেশি-বিদেশি অনেক পর্যটক আসে। এর ফলে কক্সবাজার করোনাভাইরাসের ঝুঁকিতে রয়েছো। তাই করোনাঝুঁকি এড়াতে কক্সবাজারে পর্যটকদের না আসার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। একই সাথে সমুদ্র সৈকতে জনসমাগম রোধে পর্যটকদের না নামতে সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

ক্যাম্পে ঢুকার আগে বিদেশিদের কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে : আরআরআরসি
উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে নতুন কোনো বিদেশি যেতে চাইলে তাকে ক্যাম্পে যাওয়ার আগে কমপক্ষে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। কোয়ারেইন্টানে থেকে আশংকামুক্ত হলেই রোহিঙ্গা প্রশাসনের অনুমতি সাপেক্ষে রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে যেতে পারবেন। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে রোহিঙ্গা প্রশাসন এ বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা জারি করেছে। তবে রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে আগে থেকেই কর্মরত বিদেশিরা এ নির্দেশনার আওতায় পড়বেন না। কারণ তারা আগেই থেকেই ক্যাম্পে কাজ করার কারণে তাদের স্বাস্থ্যগত অবস্থা এখানকার সুস্থ, স্বাভাবিক মানুষের মতোই। এমনতাই জানিয়েছেন, কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার- আরআরআরসি মো: মাহবুব আলম তালুকদার।

তিনি আরো জানান, ৩৪টি রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে ৪৭টি করোনাভাইরাস আইসোলেশন বেড রেডি করা আছে। প্রয়োজন হলে আরো ১৫০ শয্যার বেড প্রাথমিকভাবে প্রাক-প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। যেটা জরুরিভিত্তিতে ব্যবহার করা যাবে। তবে রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলো এ বিষয়ে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতার সাথে কাজ করছে। রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে বড়, ছোট, মধ্যম মিলিয়ে প্রায় ২০৭টি স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক কেন্দ্রে গত এক সপ্তাহ ধরে এ সেবা জোরদার করা হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রেগুলোতে থার্মাল স্ক্যানারসহ কোনো পরীক্ষা সামগ্রীর অপ্রতুলতা নেই। আধুনিক সব পরীক্ষা সামগ্রী রয়েছে। জাতিসঙ্ঘ উদ্বাস্তু বিষয়ক হাইকমিশন (ইউএনএইচসিআর) এর নির্মিত রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে যে খালি ভবনগুলো রয়েছে, জরুরি অবস্থায় প্রয়োজনে সেগুলোও ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। রোহিঙ্গা প্রশাসন থেকে এ বিষয়ে কঠোর নজরদারি করা হচ্ছে। উচ্চ পর্যায়ের হেলথ মনিটরিং টিম এসব ব্যবস্থা ও করণীয় বিষয়ে নিয়মিত মনিটরিং করছে।

আরআরআরসি মো: মাহবুব আলম তালুকদার আরো বলেন, দেশের স্বাস্থ্য বিভাগীয় ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনাগুলোর প্রেরিত করোনাভাইরাস প্রতিরোধ সংক্রান্ত লিফলেট, হ্যান্ডবিল ইত্যাদি বার্মিজ ভাষায় অনুবাদ করে ক্যাম্পে রোহিঙ্গা শরনার্থীদের মাঝে বিলি করা হচ্ছে। যাতে রোহিঙ্গা শরনার্থীদের সেগুলো বুঝতে সুবিধা হয়। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আতংকিত না হয়ে তাদের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলতে ক্যাম্পে প্রচুর কাজ করা হচ্ছে। সীমান্ত দিয়ে যাতে মিয়ানমারের কোনো নাগরিক সহজে এদেশে অনুপ্রবেশ করতে না পারে সে বিষয় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

এছাড়া, উখিয়া-টেকনাফে অবস্থিত রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্প এলাকার চলমান লার্নিং সেন্টার, মাদরাসা, মক্তব গত ১৭ মার্চ মঙ্গলবার থেকে ৩১ মার্চ মঙ্গলবার পর্যন্ত সম্পূর্ণ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement