০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১,
`

কর্ণফুলীর তলদেশে টানেল খননকাজ শুরু এ মাসেই

কর্ণফুলীর তলদেশে টানেল খননকাজ শুরু এ মাসেই
কর্ণফুলীর তলদেশে টানেল খননকাজ শুরু এ মাসেই - ছবি : সংগৃহীত

এগারো বছর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের এক জনসভায় কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের যে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, তা আজ আলোর মুখ দেখতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে প্রকল্পের কাজ প্রায় ৩০ ভাগ শেষ হয়েছে। চলতি মাসের মধ্যেই নদীর তলদেশে খননের কাজ শুরু হওয়ার আশা করছেন প্রকল্প পরিচালক (পিডি) প্রকৌশলী হারুনর রশিদ চৌধুরী।

বহুল প্রত্যাশিত কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার মধ্য দিয়ে ট্রান্স এশিয়ান হাইওয়ে যুক্ত হওয়ার পথে আরো এক ধাপ এগিয়ে গেল বাংলাদেশ।

২০০৮ সালে চট্টগ্রামের লালদীঘির একটি জনসভায় প্রধানমন্ত্রী কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের কথা বলেছিলেন। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে মাল্টি লেন রোড টানেল নামে ওই প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। এতে আনোয়ারা ও চট্টগ্রাম প্রান্তে জমি অধিগ্রহণ করা হবে প্রায় ৩৮৩ একর। আর যৌথভাবে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সেতু ও সড়ক মন্ত্রণালয় চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড।

নদীর তলদেশে ২.৪৫ কিলোমিটার ও দুই প্রান্তের তীরসহ টানেলের দৈর্ঘ্য হবে প্রায় ৩.৪ কিলোমিটার। আর নদীর পূর্ব ও পশ্চিম উভয় পাশের সংযোগ সড়কসহ এ প্রকল্পের সর্বমোট দৈর্ঘ্য হবে ৯.৩৩ কিলোমিটার।

আনোয়োরা প্রান্তে ৭০০ মিটারের একটি উড়াল সড়ক বা ফ্লাইওভারসহ ৪.৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে চার লেন সড়ক নির্মিত হবে, যা আনোয়ারা চাতুরী চৌমুহনীতে এসে চট্টগ্রাম আনোয়ারা বাঁশখালী পিএবি সড়কের সাথে মিলিত হবে। অন্য প্রান্ত মিলিত হবে নগরীর পতেঙ্গা নেভাল একাডেমি পয়েন্ট দিয়ে মূল সড়কে। নদীর তলদেশে ১৮ থেকে ৩১ মিটার গভীরে মূল টানেলের বেস হবে ১২ মিটার। এর ভেতরেই দুই পথে আলাদাভাবে যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা থাকছে।

জানা গেছে, ২০০৮ সালে লালদীঘির ওই জনসভায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির পর ৯ম জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পরপরই শুরু হয়েছিল নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের সম্ভাব্য সমীক্ষাসহ সব ধরনের প্রস্তুতি। এই ধারাবাহিকতার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয় ১০ম জাতীয় নির্বাচন। এর পরই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ পেতে শুরু করে।

পর্যায়ক্রমে ২০১৭ সালের ৬ নভেম্বর এ প্রকল্প বাস্তবায়নের চুক্তি কার্যত শেষ হয় এবং একই বছরের ৫ ডিসেম্বর থেকে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। প্রকল্প বাস্তবায়ন বা সম্পাদনের সময় ধরা হয়েছে ৫ বছর। অর্থাৎ ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৯ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। আর এ প্রকল্পের বেশির ভাগ অর্থায়ন করছে এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যাংক চায়না।

সরেজমিন দেখা গেছে, কর্ণফুলী নদীর উভয় প্রান্তে প্রকল্প বাস্তবায়নে চলছে কাজ ২৪ ঘণ্টা। পতেঙ্গা প্রান্তে একটি ৩৩ কেভি ও দু’টি ১১ কেভি ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থা করা হয়েছে। আনোয়ারা প্রান্তেও দুই মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থায় সম্পন্ন হয়েছে। নদীর উভয় প্রান্তে কাজের জন্য তৈরি করা হয়েছে জেটি।

নদীর তলদেশে বোরিং মেশিন (টিবিএম) দিয়ে খননের কাজ করার জন্য যে অবকাঠামো প্রয়োজন, তার কাজ শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। টানেল খননের জন্য ভূপৃষ্ঠ থেকে ২৫ মিটার গভীরতা সম্পন্ন ওয়ার্কিং শেফটের অবকাঠামোও নির্মাণ করা হয়েছে। এ ওয়ার্কিং শেফটের মধ্যেই বোরিং মেশিন বসিয়ে খননকাজ করা হবে বলে জানা গেছে।

কর্ণফুলী টানেল প্রকল্প পরিচালক (পিডি) প্রকৌশলী হারুনর রশিদ চৌধুরী বলেন, প্রকল্পের কাজ ইতোমধ্যে ৩০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। চলতি মাসের মধ্যেই প্রকল্পের মূল কাজ নদীর তলদেশের খনন শুরু হবে বলে আশা করছেন তিনি। সেই সাথে ২০২২ সালের মধ্যেই বহুল প্রত্যাশিত কর্ণফুলী নদীর তলদেশে মাল্টি লেন রোড টানেল প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে আশা করছেন তিনি।


আরো সংবাদ



premium cement