লক্ষ্মীপুরে খাবারের সাথে নেশাদ্রব্য খাইয়ে তিন পরিবারের ১২ জনকে অচেতন
- লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
- ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৪:১৫

লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে খাবারের সাথে চেতনানাশক খাইয়ে একই বাড়ির তিন পরিবারের চার শিশুসহ ১২জনকে অচেতন করেছে দুর্বৃত্তরা। ভুক্তভোগীদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) রাতে উপজেলার চর ফলকন ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার শাহজাহান মির্দার বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগীরা হলেন- মো. শাহজাহান মির্দা (৭০), নুর ভানু (৬৫), পান্না আক্তার (২৭), আকলিমা বেগম (২০), আরমান হোসেন (১০), ইমরান হোসেন (৪), নুসরাত (৪), মরিয়ম (৪), পলি আক্তার ( ১৬), পিংকি বেগম (২৫) ও মো. নিশান (২৮)।
কমলনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তহিদুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
জানা যায়, ভুক্তভোগী সদস্যদের অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হয়। পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক অবস্থার অবনতি দেখে ৯ জনকে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে রেফার করেন। তিনজনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
রাতেই অচেতন অবস্থায় তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে একজনের জ্ঞান ফিরে আসে। এর আগে রাতের খাবার খেয়ে অচেতন হয়ে পড়েন বলে জানা যায়।
জ্ঞান ফিরে আসা ভুক্তভোগী পলি আক্তার জানান, প্রতিদিনের মতো রান্না শেষ করে ঘরের দরজা বন্ধ করে পরিবারের সবাই মিলে মঙ্গলবার বিকেলে প্রতিবেশী এক বাড়িতে বিয়ের অনুষ্ঠান উপভোগ করতে যান। এর পর ফিরে এসে রান্না করা হাঁসের মাংস দিয়ে রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। এ সময় দুই শিশু বমি করলেও বিষয়টি অনুমান করতে পারেননি কেউ। পরে জ্ঞান ফিরে দেখেন তিনি হাসপাতালে।
ভুক্তভোগী শাহজাহান মির্দার ভাতিজা ও স্থানীয় আবুয়াল হোসেন কমিউনিটি ক্লিনিকের (সিএইচসিপি) হেলথকেয়ার প্রোভাইডার মো: কামরুল ইসলাম জানান, বিয়ে বাড়িতে অনুষ্ঠান দেখতে যাওয়ার কোনো এক ফাঁকে দুর্বৃত্তরা রান্না করা খাবারের সাথে চেতনা নাশক মিশিয়ে রাখে। পরে ওই খাবার খেয়ে বাড়ির তিনটি পরিবারের ১২জন সদস্য অচেতন হয়ে পড়েন।
এ সময় পরিবারের অপর সদস্যরা রাতে বাড়ি ফিরে একাধিকবার ডাকাডাকি করলেও কোনো সারা শব্দ না পেয়ে দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে সবাইকে অচেতন অবস্থায় দেখতে পান। পরে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যান। তবে ঘরের মূল্যবান জিনিসপত্র লুট বা চুরির বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেননি তিনি।
স্থানীয় আবুবকর ছিদ্দিক, নুরুন্নবী ও সালেহা বেগমসহ কয়েকজন বলেন, পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী খাবারের সাথে নেশা মেশানো হয়েছে বলে ধারণা করছেন তারা। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, খাবারের পরই সবাই আস্তে আস্তে অচেতন হয়ে পড়েন। যে একজন সুস্থ আছেন তিনি রাতের খাবার খুবই কম খেয়েছেন। সে কারণে তিনি পুরোপুরি অচেতন হননি।
কমলনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল অফিসার ডা: সোহেল রানা জানান, অচেতন অবস্থায় নিয়ে আসা শিশুসহ ৯ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তিনজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। অসুস্থদের খাবারের সাথে নেশা জাতীয় দ্রব্য খাওয়ানো হয়েছে বলে ধারণা করছেন তিনি।
কমলনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তহিদুল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে হাসপাতালে পুলিশ পাঠিয়েছেন। ঘটনার বিষয় তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।