২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

বাঁশের সাঁকোই ভরসা ২১ গ্রামের মানুষের

- ছবি : নয়া দিগন্ত

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার চাতলপাড় ও ভলাকুট ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের মানুষের যাতায়াতের একমাত্র পথ একটি বাঁশের সাঁকো। সেই সাঁকো দিয়েই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়ত বেমালিয়া নদী পার হতে হয় এলাকাবাসীর। সাঁকোটি এতটাই ঝুঁকিপূর্ণ যে যেকোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। স্বাধীনতার পর থেকে এভাবেই ভোগান্তি নিয়ে পথ পাড়ি দিচ্ছেন এলাকার হাজার হাজার মানুষ।

উপজেলার চাতলপাড় ইউনিয়নের চাতলপাড় বাজার, চক বাজার ও ইউনিয়নের উত্তর পাশ দিয়ে মেঘনা নদী এবং ইউনিয়নের ভেতর দিয়ে বেমালিয়া নদী বয়ে গেছে। এর কারণে নাসিরনগর উপজেলা থেকে চাতলপাড়ের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম এ সাঁকো এখন ২১ গ্রামের মানুষের ভরসা। সাঁকোটি দিয়ে হেঁটে কোনো রকম পার হওয়া গেলেও কোনো যানবাহন কিংবা প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে পার হওয়া যায় না।

জানা গেছে, জেলার সদর ও উপজেলার দূর্গাপুর, বিলের পাড়, চাতলপাড়, রতনপুর, পতুইর, নিয়াজপুর, কাঠাল কান্দি, হাতপাড়া, কচুয়া, বীকিনগর, ফকিরদিয়া, ঘুজিয়াখাই, বড়নগর, ধানতুলিয়া ,ফুলকার কান্দি, খইড়লপুর কান্দি, ইছাপুর, তেলি কান্দি, জয়ধর কান্দি, মহিষবেড়, মোহাম্মদপুর, বাঘী, বালিখোলা, খাগালিয়া সোনাতোলা, কান্দিপাড়া,
ভলাকুট বাজারসহ ওই এলাকার ২১টি গ্রামের মানুষের উপজেলা সদরসহ জেলার অন্যান্য স্থানের সাথে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম বাঁশের তৈরি এ সাঁকোটি। বর্ষা এলে সাঁকোর বদলে নৌকা দিয়ে এ পথ পার হতে হয়। এছাড়াও শহরে যেতে হলে তিনটি সাঁকো পাড়ি দিয়ে যেতে হয় এলাকাবাসীর।

স্রোতের কারণে খেয়া দিয়ে পারাপার সম্ভব না দেখে খেয়া মাঝির উদ্যোগে ওই খালের ওপর দুই শ’ মিটার বাঁশের সাঁকোটি নির্মাণ করেন। বাঁশের সাঁকোর মালিককে জন প্রতি পাঁচ টাকা দিয়ে সাঁকো পার হতে হয়। নদীর দুই পাড়ে কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এদিকে স্থানীয়দের আক্ষেপ, বাঁশের সাঁকোটি পার হওয়ার সময় শিশু ও বৃদ্ধরা প্রায় পড়ে গিয়ে আহত হন।

এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শত শত শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করে। এই সাঁকোটির কারণে এলাকার উৎপাদিত খাদ্যশস্য, কৃষিপণ্যসহ বিভিন্ন কাঁচামাল বাজারজাতকরণ ও রোগীর জরুরি চিকিৎসার ক্ষেত্রে বড় ধরনের বিপদে পড়তে হয়। এতে ব্যাপক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এলাকার বাসিন্দাদের। নদীতে ব্রিজ না থাকায় শিক্ষা, চিকিৎসা ও ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন দিক থেকে পিছিয়ে রয়েছে এ অঞ্চলের মানুষ।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, ওই নদীর ওপর সেতু নির্মিত হলে পাল্টে যাবে দুই পাড়ের হাজারো মানুষের জীবনযাত্রা। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘নির্বাচনের সময় জনপ্রতিনিধিরা প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু নির্বাচন শেষ হলে তা আর বাস্তবায়ন করেন না। এখনো পর্যন্ত সেতু নির্মিত হয়নি। তাই এলাকাবাসীর বাধ্য হয়েই এ বাঁশের সাঁকো দিয়ে পার হতে হয়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, গ্রামের শতাধিক শিক্ষার্থী প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদরাসায় যাতায়াত করছে। এ সাঁকো পার হয়ে প্রতিদিন চাতলপাড় ডিগ্রী কলেজ, রতনপুর দাখিল মাদরাসা, কচুয়া দাখিল মাদরাসা, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ওয়াজউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সহস্রাধিক শিক্ষার্থীদের যাতায়াত করতে হয়।

স্থানীয় জসিম ফকির বলেন, ‘সেতুর অভাবে আমাদের জমি থেকে উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারজাত করতে খুব কষ্ট হয়।
ফলে বাধ্য হয়ে নৌকা দিয়ে কৃষিপণ্য নিতে হচ্ছে। এতে আমরা উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হই।’

তিনি আরো বলেন, এখানে সেতুর জন্য জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টরা কোনো উদ্যোগ নেননি। তাই সেতু নির্মাণের জন্য বর্তমান সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছে এলাকাবাসী।

স্থানীয় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তানভীর জানায়, বাঁশের সাঁকো পার হয়ে প্রতিদিন বিদ্যালয়ে যেতে ভয় করে। তারপরও যেতে হয়। বর্তমান সরকার আমাদের পড়ালেখার কথা চিন্তা করে এখানে যেন একটি সেতু করে দেন।

স্থানীয় বাসিন্দা আবুল কাসেম বলেন, নির্বাচনের আগে সকলেই ব্রিজ করে দেয়ার কথা বলেন। এমনকি আমাদের স্থানীয় সাবেক এমপি ছায়েদুল হক, সৈয়দ মুর্শেদ কামাল, মোজাম্মেল হক কাপ্তান মিয়া, বি এম সংগ্রাম, এস এ কে একরামুজ্জামান সুখন এমপি নির্বাচনের আগে এসে আমাদেরকে ব্রিজ করে দেয়ার ব্যাপারে আশ্বাস দিয়েছিলেন। তাদের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে কিন্তু ব্রিজ এখনো হলো না।

চাতলপাড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এখানে সেতু নির্মাণে আমাদের চেষ্টার কোনো কমতি নেই। স্থানীয় সরকার গ্রামের মানুষের দুর্ভোগের বিষয়টি গুরুত্ব দিচ্ছে। প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) মাধ্যমে সেতু নির্মাণের চেষ্টা করা হচ্ছে।

নাসিরনগর উপজেলা প্রকৌশলী মো: শাহা আলম দৈনিক নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘২০০ মিটারের চেয়ে বড় আকারের সেতু নির্মাণের জন্য আলাদা প্রকল্প প্রয়োজন। এই নদীর ওপর সেতু নির্মাণের প্রস্তাবনা ঢাকায় পাঠানো হবে। সেখান থেকে প্রক্রিয়া শেষে অনুমোদন হলে সেতু নিমার্ণের কাজ শুরু হতে পারে।’


আরো সংবাদ



premium cement