১৪ অক্টোবর ২০২৪, ২৯ আশ্বিন ১৪৩১, ১০ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

মাতামুহুরী নদীর বোবা কান্না

মাতামুহুরীর বুকে জেগে উঠেছে চর - ছবি : নয়া দিগন্ত

বাংলাদেশের নিজস্ব নদী মাতামুহুরীর উৎপত্তি বান্দরবানের আলীকদম উপজেলায়। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তবর্তী আলীকদমের গহীন অরণ্যে খরস্রোতা মাতামুহুরী নদীর উৎপত্তি হয়েছে। এ নদীর অবিমিশ্র সৌন্দর্যের রূপে মুগ্ধ হয়েছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রথম জেলা প্রশাসক ক্যাপ্টেন টিএইচ লুইন। ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দে তার লেখা গ্রন্থে এ নদীটির নান্দনিক বর্ণনা পাওয়া যায়।

এক সময় বর্ষাকাল শেষ হয়ে গেলেও মাতামুহুরীতে পানির জৌলুস থাকতো গ্রীষ্ম মৌসুমজুড়ে। এখন শুষ্ক মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই নদীর নানান বাঁকে জেগে ওঠেছে ধু-ধু বালুচর। নদীটির চিরচেনা রূপ বদলে যাচ্ছে। ক্ষীণ হয়ে আসা প্রবাহ জানান দিচ্ছে বার্ধক্য যেন ভর করছে এ স্রোতস্বিনীর বুকে! দুই দশকের ব্যবধানে নদীর নাব্যতা হ্রাস পেয়েছে আশংকাজনক। খরস্রোতা মাতামুহুরীর অবিরত বোবা কান্না উপলব্ধির যেন কেউ নেই!

এ নদীর ভূমিঢাল পশ্চিমমুখী। বঙ্গোপসাগর থেকে এ নদীর দৈর্ঘ্য ১১৮ কিলোমিটার। নদীটি পাহাড়ি উপজেলা আলীকদম ও লামা আর চকরিয়া উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পড়েছে বঙ্গোপসাগরে। নদীর প্রবাহ ঠিক রাখার জন্য তৎকালীন পূর্ব বেঙ্গল সরকার ১৮৭৮ সালে মাতামুহুরীর দুই পাশের এক লাখ প্রায় তিন হাজার একর বনভূমিকে সংরক্ষিত রিজার্ভ ফরেস্ট ঘোষণা করে। নাম দেয়া হয় ‘মাতামুহুরী রেঞ্জ’।

পার্বত্য ও সমতলের তিন উপজেলার জনজীবনকে নানানভাবে সমৃদ্ধ ও প্রভাবিত করা মাতামুহুরী নদীর নাব্য হ্রাসের কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন, নদীর ঢালে তামাক চাষ ও পাহাড় ন্যাড়া করে জুমচাষকে। নতুন করে যুক্ত হয়েছে নির্বিচার পাহাড় কেটে রাস্তা নির্মাণ। এছাড়াও রয়েছে পাথর উত্তোলন। এর বিরূপ প্রভাবে বর্ষায় বৃষ্টির সাথে পাহাড় ধসে মাটি ও বালি এসে ভরাট করে দিচ্ছে নদীর বুক।

নদীর নাব্যসঙ্কটে এককালের প্রমত্তা মাতামুহুরীর বুকে নৌ-যান চলাচল, কাঠ ও বাঁশ পরিবহনে এখন ভয়াবহ সঙ্কট দেখা দিয়েছে। নদীর গভীর জলাশয়গুলো ভরাট হয়ে গেছে। ফলে উধাও হয়েছে নানা প্রজাতির সুস্বাদু মাছ। জেলেদেরও আর দেখা মেলে না। নদীর ক্ষীণ প্রবাহের সাথে যেন এসব জেলের জীবনের গতিও থেমে গেছে!

মাতামুহুরী নদীর উৎপত্তিস্থল আলীকদম থেকে চকরিয়া পর্যন্ত ৩০টিরও অধিক কুম (গভীর পানি খাদ) ছিল। উল্লেখ্যযোগ্য কুমগুলো ভরে গেছে। এ নদীর বুকে চেলার কুম, বুজির কুম, জবদাইল্যার কুম, গোলকুম, মাছকুম, তুলা সিকদার কুম, ছোট বমুর কুম, চতরমল্লার কুম, কুরইল্যার কুম, কলইঙ্গার কুম, সাবেক বিলছড়ির কুম, তেইল্যার কুম, রেপারফাঁড়ির কুম, উনাছড়ির কুম, তাঞ্জার কুম, মল্লাইয়া পাড়ার কুম, চৈক্ষ্যং মুখের কুম, পাইল্লা পাড়ার কুম, মিজ্জিরির কুম, লামার হলইঙ্গার কুম, দুইখ্যা-সুইখ্যার কুম, সীতার কুম, ইয়াংছার কুম, ফাইতংয়ের কুম, চকরিয়ার ঘুইন্যার কুম, মোস্তাক মিয়ার কুম-এর অস্তিত্ব এখন বিলীন। এ প্রজন্মের অনেকেই এসব কুমের কথা জানে না। এ নদীর বিপন্নদশা কাটাতে হলে ড্রেজিং করা জরুরি।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) একজন পদস্থ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ড্রেজিং করার পূর্বে যেকোনো নদীর জরিপ দরকার পড়ে। তবে এখনো মাতামুহুরী সরকারিভাবে জরিপে আওতায় আসেনি। এ কারণে জরিপের আগে ড্রেজিং সম্ভব হবে না।


আরো সংবাদ



premium cement
আড়াইহাজারে নিখোঁজের ১ দিন পর শিশুর লাশ উদ্ধার গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেয়া কারো বিরুদ্ধে মামলা-গ্রেফতার-হয়রানি নয় ‘ঢাক-ঢোল পিটিয়ে নয়, নীরবে শহীদ পরিবারের খোঁজ রাখছেন তারেক রহমান’ যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সমন্বয় করে ইরানে হামলার প্রস্তুতি ইসরাইলের জামায়াতের আমিরের সাথে অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনারের সাক্ষাৎ এইচএসসির ফল প্রকাশ কাল, আগে রেজিস্ট্রেশনে সাথে সাথে রেজাল্ট আ’লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও তার ছেলে বিরুদ্ধে মামলা নতুন মামলায় গ্রেফতার সালমান-মামুন-পলকসহ ১৪ জন ড্রাফট থেকে বিদেশী নির্বাচনে মুন্সিয়ানা বরিশালের বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে বিপিএল ড্রাফট : বরিশালে মাহমুদউল্লাহ, সিলেটে মাশরাফী

সকল