১৫ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

সম্ভাবনাময় মিরসরাইয়ের পর্যটন শিল্প, প্রয়োজন উদ্যোগের

- ছবি : নয়া দিগন্ত

সম্ভাবনাময় চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের পর্যটন শিল্প। প্রয়োজনীয় উদ্যোগে গ্রহণ করা গেলে সরকার এ খাত থেকে কোটি কোটি রাজস্ব আদায় করতে পারবে। পাহাড়-সমুদ্র বেষ্টিত অপার সম্ভাবনাময় এই উপজেলার পর্যটন শিল্প। এখানে রয়েছে প্রাকৃতিক পাহাড়ি ঝরনা, লেক, সমুদ্র সৈকতসহ একাধিক পর্যটন স্পট।

প্রতি দিন এসব পর্যটন স্পটের সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন শত শত ভ্রমণপিপাসু। তবে পর্যটকদের জন্য নিরাপত্তা ও থাকার ভালো ব্যবস্থা না থাকায় সমস্যায় পড়তে হয় অনেককে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রাম উত্তর বনবিভাগের মিরসরাই রেঞ্জের গোভানিয়া বিট এলাকায় অবস্থিত মহামায়া সেচ প্রকল্প ও বোটানিক্যাল গার্ডেন এবং বড়তাকিয়া বিট এলাকার খৈয়াছড়া ঝরনা এলাকায় পর্যটন সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে সরকারের বনবিভাগ আলাদা দু’টি প্রকল্প হাতে নেয়। ২০১৭ সালে প্রস্তাবিত এ প্রকল্পে খৈয়াছড়া ঝরনার জন্য ছিল জীববৈচিত্র রক্ষা, প্রতিবেশ পুনরুদ্ধার ও পর্যটক টানতে ২৫ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প। আর মহামায়ার জন্য ছিল ঝুলন্ত সেতু, পর্যবেক্ষণ টাওয়ার, পিকনিক স্পট ও জীববৈচিত্র রক্ষার্থে ২৬ কোটি ৭০ লাখ টাকার প্রকল্প।

দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে এ দু’টি প্রকল্প প্রস্তাবনার মধ্যেই আটকে আছে। এ দু’টি জোনে মোট ৫০ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করার কথা থাকলেও দীর্ঘ পাঁচ বছর আমলাতান্ত্রিক জটে বিন্দুমাত্র অগ্রগতি হয়নি।

খৈয়াছড়া ঝরনায় পর্যটকদের জন্য পার্কিং নির্মাণ, যাতায়াতের জন্য স্থানীয় প্রতাপ নারায়ন সড়কে মাটির কাজ, পার্কের প্রাকৃতিক বিবরণ সংক্রান্ত জরিপ কাজ, দুই শ’ হেক্টর সাইকাস উদ্ভিদ বনায়ন, দুষ্প্রাপ্য বিপদাপন্ন দেশীয় প্রজাতির, ফলজ প্রজাতির, স্থানীয় প্রজাতি ও সৌন্দর্যবন্ধন বনায়ন ছয় শ’ হেক্টর। প্রচার ও প্রকাশনার উদ্যোগ গ্রহণ, আবাসিক ও ফাংশনাল ভবন নির্মাণ, যাতায়য়াতের সড়কে পাঁচটি আরসিসি বক্স কালভার্ট নির্মাণ, আরসিসি রিটেইনিং ওয়াল, গাইড ওয়াল, ঝরনায় যাতায়াতের সুবিধার্থে আরসিসি সড়ক ও সিঁড়ি নির্মাণ, পর্যটকদের ব্যবহারের জন্য পাঁচটি শৌচাগার ও ওয়াশরুম নির্মাণ, ঝরনা এলাকায় ময়লা-আবর্জনা অপসারণে পথে পথে ডাস্টবিন স্থাপন, পাহাড়ের পাদদেশে পায়ে হাটার পথ তৈরি, তিনতলা বিশিষ্ট পর্যবেক্ষণ টাওয়ার নির্মাণ, প্রধান ফটক ও টিকেট কাউন্টার নির্মাণ, তথ্য কেন্দ্র, আরসিসি বেঞ্চ, ছাতা বেঞ্চ, আরসিসি প্লাট ফরম, নিরাপত্তার জন্য আরসিসি বাউন্ডারি ওয়াল, পার্কিং ও সড়কের জন্য ১৫ ডিসিম্যাল জমি অধিগ্রহণ, স্টিল স্ট্রাকচার নির্মাণ, ফুল বাগান, সাইনবোর্ড স্থাপন, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে তিনটি গভীর নলকূপ স্থাপন, দুই কিলোমিটার এলাকায় বৈদ্যুতিক লাইন স্থাপন ও কেন্দ্রীয় পানি সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়ন রয়েছে প্রকল্পজুড়ে।

জানা গেছে, ২০১৪ সালের নাগাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পায় খৈয়াছরা ঝরনার রূপ লাবণ্য অবয়ব। সে থেকে দেশের নানা প্রান্ত থেকে পর্যটক আসা শুরু করে এখানে।

বন বিভাগের হিসেব মতে প্রতি দিন এখানে দুই হাজার পর্যটক যাতায়াত করেন। গত কয়েক বছরে তিনজন পর্যটক ঝরনা এলাকা থেকে পা ছিটকে নিচে পড়ে মারা যায়। ২০১৬ সালের শেষের দিকে ঢাকা থেকে আসা দুই পর্যটক পাহাড়ের চূড়ায় আটকে গেলে পরে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সকর্মীরা উদ্ধার করে। এছাড়া ঝরনা এলাকার পাহাড়ি নির্জন স্থানে কয়েকজন পর্যটক ছিনতাইয়ের শিকার হন। শ্লীলতাহানির শিকার হন কয়েকজন নারী পর্যটক।

এদিকে, ২০১০ সালের ২৯ ডিসেম্বর সেচ প্রকল্প হিসেবে উদ্বোধনের পর থেকে দেশের নানা প্রান্ত থেকে পর্যটক আসা শুরু করে মহামায়া লেক এলাকায়। এরপর সরকারের বনবিভাগ এখানে স্থাপন করে বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকো-পার্ক। গত কয়েক বছরের কিছু উন্নয়ন কাজ করেছে সরকারের এ বিভাগটি।

তবে পর্যটকদের জন্য বিশুদ্ধ খাবার পানি, ওয়াশরুম, পিকনিক সেট, আবকাশ যাপন নিরাপত্তার ব্যবস্থা না থাকায় নানামুখী সঙ্কট এখানে বিদ্ধমান।

খোঁজ নিয়ে আরো জানা গেছে, পাহাড় ও সমুদ্র বেষ্টিত এই উপজেলায় রয়েছে আট স্তর বিশিষ্ট খৈয়াছড়া ঝরনা, রূপসী ঝরনা, নাপিত্তাছড়া ঝরনা, মহামায়া ঝরনা, সোনাইছড়া ঝরনা, বোয়ালিয়া ঝরনা ও বাওয়াছড়া হরিনাকুন্ড ঝরনা, মহামায়া লেক, বাওয়াছরা লেক, মুহুরী প্রজেক্ট, ডোমখালী সমুদ্র সৈকত। অপার সৌন্দর্যমন্ডিত প্রকৃতির সাথে এখানকার মুখরিত জনপদ হয়ে উঠছে আরো মুখর।

প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শত শত ভ্রমণপিপাসু লোকজন ছুটে আসে। কিন্তু অবকাঠামো উন্নয়ন, যোগাযোগ ব্যবস্থা, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও থাকা-খাবারের সু ব্যবস্থা না থাকায় ভোগান্তির শিকার হতে হয় পর্যটকদের।

এদিকে, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে বিভিন্ন পর্যটন স্পটে দর্শনার্থী অনেকে কমে গেছে। এখনো বেশ কয়েকটি ঝরনায় ঠিকাদারের লোকজন দায়িত্ব পালন করতে পারছে না।

চট্টগ্রাম উত্তর বনবিভাগ বারৈয়াঢালা রেঞ্জের আওতাধীন ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরের জন্য এ ঝরনাসহ পাঁচটি ঝরনা ইজারা পেয়েছেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান শোমোশন লিমিটেড।

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা তন্ময় ইসলাম জানান, চলতি মৌসুমে আমাদের প্রতিষ্ঠান ভ্যাটসহ প্রায় ৪০ লাখ টাকা দিয়ে বারৈয়াঢালা রেঞ্জের আওতাধীন পাঁচটি ঝরনা ইজারা নিয়েছে। কিন্তু ভয়াবহ বন্যার কারণে অনেকদিন পর্যটক আসেনি। এখন আমাদের লোকজন দায়িত্ব পালন করতে পারছে না।

তরুণ উদ্যোক্তা রাসেল আরমান বলেন, ‘মিরসরাই উপজেলা পর্যটন সম্ভাবনাময় এলাকা। সরকার এসব পর্যটন স্পটে রাস্তাঘাটসহ অবকাঠামো উন্নয়ন করে তাহলে পর্যটক অনেক বেড়ে যাবে। আমি বিশ্বের অনেক দেশে গিয়েছি, ওখানকার পর্যটনকেন্দ্র থেকে আমার এলাকার পর্যটন স্পটগুলো অনেক সুন্দর। শুধু উদ্যোগে প্রয়োজন। এসব পর্যটন স্পট থেকে সরকার বছরের কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করতে পারবে।’

চট্টগ্রাম উত্তর করেরহাটের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মোহাম্মদ হারুন অব রশীদ বলেন, উপজেলার অন্যান্য পর্যটন স্পটের চেয়ে ‘মহামায়া ইকোপার্কে দৃশ্যমান অনেক কাজ হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে তথ্যকেন্দ্র নির্মাণ, পিকনিক স্পট নির্মাণ ও গেট নির্মাণ করা হয়েছে। আশা করছি, আগামী বছরের মধ্যে সব কাজ শেষ করা যাবে।’


আরো সংবাদ



premium cement