২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

কবে শুরু হবে ভাঙা বাঁধের মেরামত কাজ, গোমতীর পানি বাড়লেই প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা

গোমতি নদী - ছবি : নয়া দিগন্ত

এক সময় কুমিল্লার দুঃখ নামে পরিচিত ছিল গোমতী নদী। কালের বিবর্তনে গোমতী নদী বুড়িচং ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলাবাসীর দুঃখে পরিণত হয়েছে। এই গোমতীর বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়ে স্মরণকালের বন্যায় রূপ নেয় বুড়িচং ব্রাহ্মণপাড়া দুই উপজেলায়।

গোমতী নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে সম্প্রতি ভয়াবহ বন্যার মুখোমুখি হয়েছে কুমিল্লার বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা। এতে দুই উপজেলায় ২ হাজার ১৩২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তবে এখনো ভেঙে যাওয়া বাঁধের সংস্কার কাজ শুরু না হওয়ায় গোমতী নদীর পানি বৃদ্ধি পেলে আবারো বন্যার মুখোমুখি হতে পারে বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া। এমনটাই মনে করছেন স্থানীয়রা। তবে কবে ভেঙে যাওয়া বাঁধের মেরামত কাজ শুরু হবে, তার প্রতীক্ষায় প্রহর গুনছে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষ। স্থানীয়দের দাবি, যত দ্রুত সম্ভব গোমতী নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের ওই ভাঙা অংশের মেরামত কাজ শুরু করা। এতে নতুন করে প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা থেকে কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবেন দুই উপজেলার বাসিন্দারা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, জেলার বুড়িচং উপজেলার বুড়বুড়িয়া এলাকা দিয়ে গত ২২ আগস্ট ভারি বৃষ্টি ও উজানের ঢলে গোমতী নদীর ১২০ মিটার প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছিল বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা। তবে বাঁধ ভাঙার ৪ সপ্তাহ পার হলেও এখনো দেখা যায়নি বাঁধ সংস্কারের কোনো উদ্যোগ। গত সপ্তাহ খানেক আগে ভাঙা বাঁধ দিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ বন্ধ হলেও এখনো অরক্ষিত আছে বাঁধের ভাঙা অংশ। এতে আবারো ভারি বৃষ্টি ও ভারতীয় পাহাড়ি ঢলে গোমতী নদীর পানি বৃদ্ধি পেলে পুনরায় বন্যায় প্লাবিত হওয়ায় শঙ্কায় রয়েছেন দুই উপজেলার বাসিন্দারা।

বুড়িচং উপজেলার মহিষমারা এলাকার বাসিন্দা আবু সালেক বলেন, বুড়বুড়িয়া দিয়ে গোমতী নদীর বাঁধ ভেঙে আমাদের অনেক বড় ক্ষতি হয়েছে। আমাদের ফসলি জমি, মাছের ঘের, ঘরবাড়িসহ রাস্তাঘাট ও অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে। ঘরবাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় আমরা ঘরে থাকতে পারিনি। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। কিন্তু এখনো গোমতীর ওই ভাঙা বাঁধ সংস্কার শুরু হয়নি। গত কয়েকদিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। দেশের কিছু এলাকায় বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এখন যদি গোমতী নদীর পানি আবার বাড়ে, তবে ওই ভাঙা বাঁধ দিয়ে সহজেই লোকালয়ে পানি ঢুকবে। এতে আবারো আমরা বন্যার মুখোমুখি হতে পারি। তাই ভাঙা ওই বাঁধ সংস্কার করা জরুরি।

বুড়িচং উপজেলার বুড়বুড়িয়ায় গোমতীর বাঁধ ভাঙ্গনে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সাংবাদিক গোলাম কিবরিয়া জানান, আমরা ভয়ে আছি। সম্প্রতি বন্যায় এলাকার এক ফসল নষ্ট হয়েছে। আবার যদি ভাঙা বাঁধ দিয়ে পানি আসে, তাহলে আবারো কৃষকদের ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। আমরা চাই অবিলম্বে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় এই বাঁধের মেরামত কাজ শুরু হোক।

বুড়িচং উপজেলা সদরের মৎস্য ব্যবসায়ী মো: সাইফুল ইসলাম রমজান বলেন, এই বছর এতো পানি হবে তা কখনো কল্পনা করতে পারিনি। হঠাৎ গোমতীর বাঁধ ভেঙ্গে এভাবে পুরো এলাকা প্লাবিত হয়ে যাবে, তা ভাবতেই পারিনি। তাই আমরা তেমন একটা প্রস্তত ছিলাম না। দ্রুত বন্যার পানি বেড়ে যাওয়ায় আমার অনেকগুলো পুকরের মাছ চলে যায়। ফলে আমার লাখ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। ভাঙ্গা বাঁধটি দ্রুত মেরামত করা প্রয়োজন। অন্যথায় বৃষ্টি বাদল হয়ে লোকালয়ে আবার পানি প্রবেশ করে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মালাপাড়া এলাকার বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, গোমতী নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে প্রথমে বুড়িচং উপজেলা প্লাবিত হয়। তার একদিন পরেই ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা বন্যার কবলে পড়ে। এতে পাকা ধানসহ অন্যান্য ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পানির তীব্র স্রোতে বাড়িঘর, বিভিন্ন সড়ক ও খামারিসহ গৃহস্থদের পুকুর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেক পরিবার বন্যার কবলে পড়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে। তবে এখনো গোমতী নদীর বাঁধের ওই ভাঙা অংশের মেরামত শুরু করা হয়নি। এখন যদি আবারো গোমতী নদীর পানি বাড়ে তবে আমরা আবারও ক্ষতির মুখে পড়ব। আমরা দ্রুত ওই ভাঙা বাঁধ মেরামতের দাবি জানাচ্ছি।

কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খান মো: ওয়ালিউজ্জামান বলেন, জেলার বুড়িচং উপজেলার বুড়বুড়িয়া এলাকার গোমতী নদীর বাঁধের ভাঙা অংশ মেরামতের কার্যক্রমের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। তবে বাঁধ ভেঙে যাওয়ার স্থান পুনর্নির্মাণ কাজের প্রক্রিয়া আমরা ইতোমধ্যে শুরু করেছি।

তিনি বলেন, শুকনো মৌসুম ছাড়া বাঁধ মেরামতে ভালোভাবে কাজ করা সম্ভব হয় না। তাই সংস্কার কাজ শেষ করতে কমপক্ষে চার মাস সময় লাগবে। তাছাড়া বর্তমানে বড় কোনো দুর্যোগ বা গোমতী নদীর পানি বাড়ার পূর্বাভাস নেই। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে বাঁধটির ভেঙে যাওয়া স্থান পুননির্মাণ কাজ সম্পন্ন করতে আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি।


আরো সংবাদ



premium cement