আলমগীরের কোচিং সেন্টারে ভর্তি হলেই মিলত সরকারি চাকরির নিশ্চয়তা
- নওগাঁ প্রতিনিধি
- ১২ জুলাই ২০২৪, ০০:০৫
প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে সিআইডির হাতে গ্রেফতার হয়ে জেলহাজতে রয়েছেন ১৭ জন। এদের মধ্যে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সহকারী পরিচালক এস এম আলমগীর কবিরের গ্রামের বাড়ি নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার গয়ড়া সরদারপাড়া গ্রামে। ঢাকার মিরপুরে চাকরির কোচিং সেন্টার রয়েছে তার। বদলগাছীতে কোলাহাট বাজারে চাকরির জন্য প্রার্থীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা বাণিজ্যের কাজে শাখা কোচিং সেন্টার খুলেছিলেন তিনি। তার কোচিং সেন্টারে ভর্তি হয়ে এলাকার অন্তত ৯০ জন তরুণ ও যুবক বিভিন্ন সরকারি দফতরে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী পদে চাকরি পেয়েছেন। বদলগাছীতে কোলাহাট এলাকায় আলমগীরের প্রতিবেশী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়।
স্থানীয়রা জানায়, আলমগীরের বাবা আবুল কাশেম আগে দিনমজুর হিসেবে মানুষের জমিতে কৃষিশ্রমিক হিসেবে কাজ করেই জীবিকা নির্বাহ করতেন। তার ছেলে আলমগীর নওগাঁর বদলগাছীর কোলা স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় পাস করেন। পরবর্তী সময়ে মানুষের বাড়িতে জায়গির থেকে কুষ্টিয়ার একটি কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। এক যুগ আগে পিএসসিতে যোগদান করেন আলমগীর। পরবর্তী সময়ে পদোন্নতি পেয়ে তিনি পিএসসির সহকারী পরিচালক হন। কোলাহাট বাজারসংলগ্ন গয়ড়া সরদারপাড়া গ্রামে তার বৃদ্ধ বাবা ও মা থাকেন। চার ভাই-বোনের মধ্যে আলমগীর সবার বড়। ছোট ভাই এস এম হুমায়ুন কবির শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে গাড়িচালক হিসেবে চাকরি করেন এবং ছোট বোন মিনা আক্তার রাজশাহী জেলা ও দায়রা জজ আদালতে সাঁটলিপি মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরি করেন।
রাজধানীর মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনের সরকারি বাসভবনে পরিবার নিয়ে থাকেন আলমগীর কবির। মিরপুরে ‘জব কর্নার সাঁটলিপি অ্যান্ড কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট’ নামের একটি চাকরি প্রস্তুতি কোচিং সেন্টার পরিচালনা করেন তিনি। বছর দেড়েক ধরে কোচিং সেন্টার ব্যবসা নিয়ে আলমগীরকে এলাকায় বেশ সরব দেখছেন স্থানীয়রা। বদলগাছীর কোলাহাট বাজারে ২০২৩ সালের শুরুর দিকে মিরপুরে পরিচালিত জব কর্নার সাঁটলিপি অ্যান্ড কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট নামের কোচিং সেন্টারের একটি শাখা খোলেন। অবশ্য আট-নয় মাস চলার পর কোলাহাটের সেই কোচিং সেন্টারটির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
স্থানীয় বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, চাকরির লাইনঘাটের জন্য এলাকায় আলমগীরের খুব নামডাক আছিল। তার সাথে যোগাযোগ করে এলাকার অনেক বেকার ছেলেপেলে সরকারি অফিসে চাকরি পেয়েছে। নিজের এক ভাই সিক্স-সেভেন পাস, তাকে মন্ত্রণালয়ে ড্রাইভারের চাকরি পাইয়ে দিয়েছে। আরেক বোন জজকোর্টে চাকরি পেয়েছে। আলমগীরের সাথে লাইনঘাট করে শুধু কোলা ইউনিয়নে গত চার-পাঁচ বছরে ৮০-৯০ জন চাকরি পেয়েছে। এখন বুঝতে পারিচ্ছি সেই লাইনঘাট কিভাবে করত।
কোলা কলেজের প্রভাষক বেলাল হোসেন বলেন, কোলাহাট বাজার প্রত্যন্ত এলাকার একটা বাজার। এই বাজারে বছর দেড়েক আগে চাকরির প্রস্তুতির কোচিং সেন্টার গড়ে ওঠে। সেই কোচিং সেন্টারে পড়লে নাকি সরকারি অফিসে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর পদে চাকরি পাওয়া সহজ হবে। এলাকার অনেক বেকার তরুণ চাকরিও পেয়েছে। তাদের কেউ সচিবালয়ে কম্পিউটার অপারেটর, কেউ সাঁটলিপিকার, আবার অনেকে বিভিন্ন সরকারি দফতরে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর বিভিন্ন পদে চাকরি পেয়েছে। তাকে গ্রেফতারের পর এখন কিছুটা অনুমান করা যাচ্ছে, কী কারিশমায় এদের চাকরি হয়েছে।
আলমগীর কবিরের বাবা আবুল কাশেম (৭৫) ছেলের গ্রেফতারের বিষয়ে বলেন, শুনতেছি ছেলেকে নাকি পুলিশ গ্রেফতার করেছে। কী কারণে গ্রেফতার হয়েছে তা জানি না। ছেলে-মেয়ে, জামাই কেউ কিছু বলছে না। ছোট ছেলে ও মেয়েজামাই থানা-পুলিশের কাছে দৌড়াদৌড়ি করছে।
আলমগীরের প্রতিবেশী এস এম আবদুর রউফ বলেন, আলমগীর আমাদের গ্রামেই অন্তত ৪০-৫০ জন ছেলে-মেয়েকে চাকরি দিয়েছে। এখন সেগুলো সঠিক পথে না অন্যায় পথে চাকরি দিয়েছে এ বিষয়ে আমরা কিছু বলতে পারব না। যারা চাকরি পেয়েছে তারা টাকা-পয়সা দিয়ে দুর্নীতি করে চাকরি পেলে তো আর এখন স্বীকার করবে না। এখন হয়তো সরকারিভাবে তদন্ত করলে কে কে অন্যায়ভাবে চাকরি পেয়েছে তা বের হয়ে আসতে পারে।