১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

অব্যাহত মন্দায় বিক্রির চাপে পুঁজিবাজার

-

- চট্টগ্রামে ১০৮ কোটি টাকার বেচাকেনা
- সবচেয়ে বেশি বিক্রির চাপে ট্রাভেল খাতের শেয়ার

অব্যাহত দরপতন ও সূচক হারিয়ে যাচ্ছে দেশের পুঁজিবাজারে। লেনদেনের সূচনার চিত্রের সাথে সমাপ্তির চেহারা মিলছে না। যার কারণে বাজারে বিক্রির চাপ বাড়ছে। সঙ্কট ক্রেতার। এই পরিস্থিতিতে কোনো বিনিয়োগকারী শেয়ার কেনায় আগ্রহী না। মন্দায় বিক্রির চাপ ছিল ৬৩ শতাংশ। তবে ক্রেতা ছিল ২৬ শতাংশ। মন্দাবাজারেও তারল্য ফিরেছে ০.০৮ শতাংশ। তবে চট্টগ্রাম স্টকে লেনদেন শত কোটি টাকা অতিক্রম করেছে, যা অনেককে বিস্মিত করেছে। ডিএসইতে প্রথম দুই ঘণ্টায় ১৫ কোটি ৪৭ লাখ ২৭ হাজার ৭১৬টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড ৫৬১ কোটি ৩৯ লাখ টাকায় হাতবদল হয়েছে।
প্রাতিষ্ঠানিক বিশ্লেষক রয়েল ক্যাপিটালের পর্যালোচনা হলো, ডিএসইতে বিক্রেতা ছিল ৬৬ শতাংশ এবং ক্রেতা ছিল ২৬ শতাংশ। বেচাকেনায় ছিল না ৮ শতাংশ বিনিয়োগকারী। অন্য দিকে বিক্রেতা থাকলেও এন শ্রেণীর কোম্পানির শেয়ারের কোনো ক্রেতা ছিল না। সবচেয়ে বেশি বিক্রির চাপে ছিল ট্রাভেল খাতের শেয়ারগুলো। এ ছাড়া ব্যাংকিং, সিমেন্ট, প্রকৌশল, খাদ্য, পাট, ফার্মাসিউটিক্যালস ও বস্ত্র খাতের শেয়ারগুলো বিক্রির চাপে ছিল। বীমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, মিউচুয়াল ফান্ডের বিক্রেতার চাপ ছিল না। ১৯টি খাতের মধ্যে দর পতনে এক ডজন খাত। আর সাতটি খাত ছিল লাভে।
দিনের লেনদেনের তথ্য থেকে বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, ৩৯৩টি কোম্পানি লেনদেনে অংশ নিয়ে ডিএসইতে দাম বৃদ্ধিতে ছিল ১৩৫টি বা ৩৪.৩৫ শতাংশ। আর বিপরীতে দাম কমেছে ২২১টির বা ৫৬.২৩ শতাংশের এবং ৩৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এ দিকে দর পতনের মধ্যে ভালো মৌলভিত্তি সম্পন্ন এ শ্রেণীর কোম্পানি ছিল ১২২টি। দাম বাড়ার তালিকায় থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বীমা কোম্পানি রয়েছে ৫০টি। বিপরীতে বীমা খাতের আটটির শেয়ার দাম কমেছে। ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ২৯.৯৬ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৬৬৬.৭৬ পয়েন্টে নেমেছে। আর শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৮.৯৪ পয়েন্ট কমে এক হাজার ২৪১.৫৩ পয়েন্টে এবং ডিএসই-৩০ সূচক আরো ৮.৬২ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ১৭.৯৭ পয়েন্টে নেমে এসেছে। সব ক’টি মূল্যসূচক কমে যাওয়ার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও ১.৭ শতাংশ কমেছে। আর শেয়ার বিক্রি বড়েছে ৫ শতাংশ। ডিএসইতে ২৮ কোটি ৩ লাখ ৪৮ হাজার ৯৯৭টি শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ড ও বন্ড লেনদেন হয়েছে ৯৬৮ কোটি ২ লাখ ৬৪ হাজার টাকা বাজারদরে। যেখানে রোববার লেনদেন হয় ৯৮৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকার। সে হিসাবে লেনদেন কমেছে ১৭ কোটি ৮২ লাখ টাকা।
লেনদেনে সব থেকে বেশি অবদান রেখেছে ই-জেনারেশনের শেয়ার। কোম্পানিটির ৩৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এ ছাড়া এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিসের ৩৫ কোটি ৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ৩৩ কোটি ৯৬ লাখ টাকায় শেয়ার লেনদেন হয়েছে লাভেলো আইসক্রিম।
ডিএসইর ব্লক মার্কেটে গতকাল ৪১টি কোম্পানির ৬৯ লাখ ৫৫ হাজার ৫৫৮টি শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ড মোট ৩১ কোটি ৪১ লাখ ২৬ হাজার টাকায় হাতবদল হয়েছে। কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে ডিবিএইচ ফাইন্যান্সের। কোম্পানিটির ৫ কোটি ৪০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। সাত কোম্পানির মোট শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৯ কোটি ৯৯ লাখ টাকারও বেশি। আলহাজ টেক্সটাইলের ৪ কোটি ৩৫ লাখ ৫৫ হাজার টাকার এবং ২ কোটি ২৮ লাখ ৯৭ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে সেনা কল্যাণ ইন্স্যুরেন্সের।
আর চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সিএসই-৩০ সূচক ছাড়া সবই বেড়েছে। সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ৬.০৯ পয়েন্ট এবং সিএসসিএক্স ৫.২৮ পয়েন্ট। লেনদেন অংশ নেয়া ২৫২টি কোম্পানির মধ্যে ৮৫টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৩৭টির এবং ৩০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এক কোটি ৯৮ লাখ ৫৪৫টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড লেনদেন হয়েছে ১০৮ কোটি ৯০ লাখ ৬৪ হাজার ২৭৫ টাকায়। রোববার লেনদেন হয় ১৬ কোটি ৩৯ লাখ টাকার।
লাভেলো ও সাইফ পাওয়ারটেকের অস্বাভাবিক দর : এ দিকে ডিএসইর তথ্য বলছে, তালিকাভুক্ত কোম্পানি সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেডের শেয়ারদর অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধির কারণ জানে না খোদ কোম্পানিটি। তারা এমনই মন্তব্য ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে (ডিএসই) জানিয়েছে। গত ৩০ এপ্রিল কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ১৭ টাকা ৮০ পয়সা। আর গতকাল শেয়ারদর বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬ টাকা ৯০ পয়সা। অর্থাৎ মাত্র ৮ কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ারদর বেড়েছে ৯ টাকা ১০ পয়সা। এই দর বাড়াকে অস্বাভাবিক বলে মনে করছে ডিএসই কর্তৃপক্ষ।
তালিকাভুক্ত তৌফিকা ফুডস অ্যান্ড লাভেলো আইসক্রিম পিএলসির শেয়ারদর অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। গত সাড়ে তিন মাস একাধারে বেড়েই চলেছে কোম্পানিটির শেয়ারদর। এতে কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে ২৩৫ শতাংশের বেশি। তবে শেয়ারদর বাড়ার পেছনে কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই তালিকাভুক্ত এ কোম্পানির কাছে। সম্প্রতি কোম্পানিটির শেয়ারদর অস্বাভাবিকভাবে বাড়ার কারণ জানতে নোটিস পাঠায় ডিএসই। এর জবাবে কোম্পানিটি জানায় কোনো অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য ছাড়াই শেয়ার দর বাড়ছে। গত ২৯ জানুয়ারি লাভেলো আইসক্রিমের শেয়ারদর ছিল ২৯ টাকা ৮০ পয়সা। আর গতকাল কোম্পানিটির শেয়ারদর ১০০ টাকা ৩০ পয়সায় উন্নীত হয়। অর্থাৎ ৬৫ কার্যদিবস বা প্রায় সাড়ে তিন মাসে শেয়ারটির দর বেড়েছে ৭০ টাকা ৫০ পয়সা।


আরো সংবাদ



premium cement