মন্দা পুঁজিবাজার, লোকসান বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের
- বিশেষ সংবাদদাতা
- ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:০৫
- বিক্রির চাপ ৭২ শতাংশ, ক্রেতা মাত্র ২৮ শতাংশ
- ৭১.৫০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ারের দরপতন
- ক্রেতা নেই জ্বালানি, সেবা, ভ্রমণ, পেপার, পাট ও সিরামিক্স খাতে
পতনের গণ্ডি থেকে বের হতে পারছে না দেশের পুঁজিবাজার। দরপতনের কারণে বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পাল্লা ভারী হচ্ছে দিন দিন। অব্যাহত পতনে বিক্রির চাপে পড়ছে পুঁজিবাজার। সাড়ে ৭১ শতাংশ কোম্পানির শেয়ারের দরপতনে বিক্রির চাপ ৭২ শতাংশ পৌঁছেছে। তবে বেড়েছে ডিএসইর বাজারমূলধন। মন্দার কারণে বাজারে জ্বালানি, সিরামিক্স, পাট, পেপার, সেবা ও ভ্রমণ খাতের কোম্পাানির শেয়ার ক্রেতা নেই। টাকায় ও শেয়ার লেনদেন গত সপ্তাহের তুলনায় কমেছে। ব্লক মার্কেটের লেনদেনেও একই আভাস।
ডিএসইর তথ্য থেকে দেখা যায়, গতকাল সপ্তাহের শুরুতে মূল্যসূচকের উত্থানের মধ্য লেনদেনের সূচনা হয়। এ সময় বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারদর ঊর্ধ্বমুখী ছিল। তবে এটা শেষ পর্যন্ত স্থায়ী হয়নি। লেনদেন শুরুর প্রথম ঘণ্টায় অর্থাৎ বেলা ১১টা পর্যন্ত ডিএসইর প্রধান সূচক বা ‘ডিএসইএক্স’ ৯.৭৩ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করে ৫ হাজার ২৩১ পয়েন্টে। শরিয়াহ সূচক বা ‘ডিএসইএস’ ৫.১৯ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ১৭২ পয়েন্টে আর ‘ডিএস-৩০’ সূচক ৪.০৬ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৯৪২ পয়েন্ট হয়। প্রথম ঘণ্টায় ডিএসইতে মাত্র ৮০ কোটি ৪৬ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়। আগে যেখানে শত কোটি টাকার বেশি লেনদেন হতো।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইএক্স বৃহস্পতিবারের চেয়ে ২৫.১৬ পয়েন্ট আরো কমে ৫ হাজার ১৯৬.৪১ পয়েন্টে, ডিএসই-৩০ সূচক ৩.১২ পয়েন্ট কমে এক হাজার ৯৩৫.১৮ পয়েন্টে এবং ডিএসইএস শরিয়াহ সূচক ৫.২০ পয়েন্ট কমে এক হাজার ১৬২.১৬ পয়েন্টে নেমেছে। লেনদেন হওয়া ৩৯৩টি কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ৬৬টির বা ১১.৭৯ শতাংশের, দর কমেছে ২৮১টির বা ৭১.৫০ শতাংশের এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৪৬টি বা ১১.৭০ শতাংশের কোম্পানির শেয়ার। এ দিন মোট ৩৯৩টি কোম্পানির ১০ কোটি ৯৮ লাখ ৪৩ হাজার ৭০৪টি শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড লেনদেন হয়েছে। যার বাজারমূল্য ৩১২ কোটি ৯১ লাখ ৭৬ হাজার ৬৯৯ টাকা। বৃহস্পতিবার লেনদেন হয়েছিল ৩৩৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকার শেয়ার। ফলে লেনদেন কমেছে ২২ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। পতনেও বাজারমূলধন ০.২৫ শতাংশ বাড়ায় এখন ছয় লাখ ৬০ হাজার ৮৭৩ কোটি ৬০ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে।
লেনদেন, দরবৃদ্ধি ও পতনের শীর্ষ ১০ : ডিএসইর দেয়া তথ্য বলছে, গতকাল এ বাজারে টাকায় লেনদেনের ভিত্তিতে শীর্ষ ১০টি কোম্পানি হলোÑ ওরিয়ন ইনফিউশন, রবি আজিয়াটা, সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স, জিপিএইচ ইস্পাত, ড্রাগন সোয়েটার, বিএসসি, ফাইন ফুডস, জিপি, ওয়াইম্যাক্স ও বীকন ফার্মা। দরবৃদ্ধির শীর্ষ ১০টি কো¤পানি হলোÑ ড্যাফোডিল কম্পিউটারস, রূপালি লাইফ ইন্স্যুরেন্স, এশিয়াটিক ল্যাব, খান ব্রাদার্স পিপি, পপুলার লাইফ ফার্স্ট মি. ফা., স্টাইলক্র্যাফট, ইস্টল্যান্ড ইন্স্যুরেন্স ও এফবিএফ আইএফ, প্রাইম ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও জিপিএইচ ইস্পাত। আর দর পতনের শীর্ষ ১০টি কো¤পানি হলো- ম্যাকসন স্পিনিং, বে-লিজিং, মিথুন নিটিং, ফনিক্স ফাইন্যান্স, নিউ লাইন, মিরাকেল ইন্ডাস্ট্রিজ, ফ্যামিলি টেক্স, এটলাস বাংলা, মেঘনা সিমেন্ট ও খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং।
পতনে ব্লক মার্কেটেও লেনদেনে খরা : ডিএসইর ব্লক মার্কেটে গতকাল ১৮টি কোম্পানির ৯ লাখ ৫৭ হাজার ৪০৫টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড হাতবদল হয়েছে মোট চার কোটি ৮৫ লাখ ৯৪ হাজার টাকায়। এরমধ্যে পাঁচটি কোম্পানির শেয়ার সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মোট শেয়ার লেনদেন হয়েছে তিন কোটি ২৭ লাখ টাকারও বেশি। প্রতিষ্ঠানগুলো হলোÑ ফাইন ফুডস, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ, বেক্সিমকো ফার্মা, লাভেলো আইসক্রিম এবং মিডল্যান্ড ব্যাংক। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে ফাইন ফুডসের শেয়ার। কোম্পানিটির ৯৯ লাখ ৯০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের ৮২ লাখ ৯৪ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। আর ৬৭ লাখ ৩০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন করেছে বেক্সিমকো ফার্মা। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যেÑ লাভেলো আইসক্রিমের ৪৬ লাখ ৮৯ হাজার টাকার এবং মিডল্যান্ড ব্যাংক পিএলসির ৩০ লাখ ৬০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
প্রেফারেন্স শেয়ার ইস্যু করবে মীর আখতার : ডিএসইর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রেফারেন্স শেয়ার ইস্যুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রকৌশল খাতের কোম্পানি মীর আখতার হোসেন লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদ। কোম্পানিটি কিউমুলেটিভ, নন-পার্টিসিপেটিভ, ফুল্লি রিডেম্বল প্রেফারেন্স শেয়ার ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে কোম্পানিটি ২৫০ কোটি টাকা উত্তোলন করবে। উত্তোলিত অর্থ দিয়ে কোম্পানিটি ঋণ পরিশোধ করবে। কোম্পানির বিনিয়োগকারী এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অনুমোদনের পর এই শেয়ার ইস্যু করবে। এ জন্য বিশেষ সাধারণ সভার (ইজিএম) আহ্বান করেছে কোম্পানিটি। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি বেলা ১১টায় হাইব্রিড প্লাটফর্মে এই ইজিএম অনুষ্ঠিত হবে। এ জন্য রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪ জানুয়ারি।
সিএসইতে ১১৫ কোটি টাকার ট্রেড : এ দিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সবগুলো মূল্যসূচকেরও পতন হয়েছে তবে মন্দাবাজারে ১১৫ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়ছে গতকাল। সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ৫৪.৬৩ পয়েন্ট, সিএসই-৩০ সূচক ৪৪.৬৯ পয়েন্ট, সিএসসিক্স ২৪.৬৯ পয়েন্ট। লেনদেনে অংশ নেয়া ১৭৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪২টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১১০টির এবং ২৪টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। দুই কোটি ৬৫ লাখ ৫২ হাজার ৪৯০টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড লেনদেন হয়েছে ১৫ কোটি ৪০ লাখ ৪৭ হাজার ৭১৩ টাকায়। বৃহস্পতিবার লেনদেন হয় মাত্র ১৫ কোটি ৪০ লাখ টাকার। ফলে লেনদেন বেড়েছে ১০০ কোটি টাকার।
বিশ্লেষকের অভিমত : প্রাতিষ্ঠানিক বিশ্লেষক রয়্যাল ক্যাপিটাল বলছে, লেনেদেনের পাশাপাশি সূচকও কমেছে। গত দুই দিন বাজার কিছুটা স্তিমিত থাকলেও গতকাল প্রধান সূচক (ডিএসইএক্স) ২৫ পয়েন্ট কমে ৫১৯৬ পয়েন্টে শেষ হয়। অপর দিকে, বাজার লেনদেন ২২ কোটি টাকা কমে ৩১৩ কোটি টাকা হয়েছে। ডিএসইএক্স নিম্নমুখী ছিল। মূলধন আগের কার্যদিবসের তুলনায় ০.২৫ শতাংশ বেড়েছে। যেখানে ভলিউম ৮ শতাংশ বেড়েছে এবং টার্নওভার ৭ শতাংশ কমেছে। ১৯টি সেক্টরের মধ্যে দ্’ুটি সেক্টরের শেয়ারমূল্য বেড়েছে এবং ১৭ সেক্টরের শেয়ারমূল্য কমেছে। সারা দিন মিশ্র প্রতিক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গেলেও দিনশেষে নেতিবাচক মনোভাব নিয়ে বাজার শেষ হয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা