১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১ পৌষ ১৪৩০, ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

উত্থানেই পুঁজিবাজারে ৯১ শতাংশ ক্রেতা

-

- সূচকের উত্থানে লেনদেন কমলো
- আইসিবির অর্থপ্রাপ্তির খবরে সূচক বাড়ল

টানা ছয় দিন পতনের কব্জা থেকে বের হলো দেশের পুঁজিবাজার। ওই ছয় দিনে ডিএসইর প্রধান সূচক ১৩৩ পয়েন্ট হারিয়েছে। গতকাল দিনের শুরু থেকেই বাজারে ইতিবাচক অবস্থা বিরাজ করেছে। সূচকের উত্থানে বাজারে ক্রেতাদের ৯১ শতাংশ সরব উপস্থিতি। কিন্তু সঙ্কট ছিল বিক্রেতার। মাত্র ৯ শতাংশ বিনিয়োগকারী শেয়ার বিক্রির মানসিকতায় ছিলেন। রাষ্ট্রীয় সংস্থা আইসিবির অর্থপ্রাপ্তির খবরে সূচক বাড়লেও টাকায় বেচাকেনার পরিমাণ ৪৭ কোটি টাকা কমেছে। তবে এক দিনের উত্থানে তার অর্ধেক সূচক ফিরে এসেছে। এতে করে কিছুটা স্বস্তিতে রয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। ডিএসইর বাজারমূলধন ০.৫৪ শতাংশ বৃদ্ধিতে এখন আকার ছয় লাখ ৫৬ হাজার সাত কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে।

দিনের লেনদেনের তথ্য থেকে বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, ডিএসইতে লেনদেন শুরুর প্রথম দেড় ঘণ্টায় অর্থাৎ বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত প্রধান সূচক বা ‘ডিএসইএক্স’ ৪৩.৩৭ পয়েন্ট, শরিয়াহ সূচক বা ‘ডিএসইএস’ ৯.২১ পয়েন্ট আর ‘ডিএসই-৩০’ সূচক ১৩.৫৪ পয়েন্ট উত্থানে চলে আসে। ওই সময়ে ডিএসইতে মোট ৮১ কোটি ৩৮ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। অন্য দিকে প্রায় তিন ঘণ্টার লেনদেনে অর্থা ১২.৫৭টায় প্রধান সূচক ৫৮.৫৮ পয়েন্ট, শরিয়াহ সূচক ১৪.৩৭ পয়েন্ট এবং ডিএসই-৩০ সূচক ১৭.৯৪ পয়েন্ট ফিরে পায়। ওই সময়ে সর্বোচ্চ ২৫২টি কোম্পানি দর বৃদ্ধিতে ছিল। আর বেচাকেনা হয়েছিল ১৪৬ কোটি ৪৬ লাখ টাকায় পাঁচ কোটি ১৩ লাখ ৮৭ হাজার ১১২টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড।

আর দিনশেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স (ডিএসইএক্স) গত বৃহস্পতিবারের চেয়ে ৭৩.৪৩ পয়েন্ট বেড়ে এখন পাঁচ হাজার ১৭৮.৮৭ পয়েন্টে, ডিএসই-৩০ সূচক ২৬.৪২ পয়েন্ট বেড়ে এখন এক হাজার ৯০৮.৩২ পয়েন্টে এবং ডিএসইএস শরীয়াহ সূচক (ডিএসইএস) ১২.৪০ পয়েন্ট বেড়ে এখন এক হাজার ১৫২.৪৫ পয়েন্টে উঠে এসেছে। লেনদেনকৃত ৩৯০টি কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ২৩২টির বা ৫৯.৪৮ শতাংশের, দর পতনে ৮৯ টি বা ২২.৮২ শতাংশ এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৬৯টি কোম্পানির শেয়ার। মোট ৩৯০টি কোম্পানির ১০ কোটি ২৮ লাখ ৪৬ হাজার ৯৬৩টি শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডর লেনদেন হয়েছে ৩০৪ কোটি ১০ লাখ ২৪ হাজার ৬২৪ টাকা বাজারমূল্যে। যা গত বৃহস্পতিবারের তুলনায় ৪৭ কোটি টাকা কম। ওই দিন লেনদেন হয়েছিল ৩৫১ কোটি ৫০ লাখ টাকার।

টাকার লেনদেন, দর বৃদ্ধি ও পতনে শীর্ষ ১০ : ডিএসই’র দেয়া তথ্যানুযায়ী, গতকাল টাকায় লেনদেনের ভিত্তিতে শীর্ষ ১০টি কোম্পানি হলো : স্কয়ার ফার্মা, একমি ল্যাব:, ওয়াইম্যাক্স, এশিয়াটিক ল্যাব:, এনআরবি ব্যাংক, ইন্ট্র্যাকো রি-ফুয়েলিং, জিপি, অগ্নি সিস্টেম, ফাইন ফুডস ও ওরিয়ন ইনফিউশন। আর দর বৃদ্ধির শীর্ষ ১০টি কো¤পানি হলো : এওএল, সিএপিএম আইবিবিএল মি. ফা., একমি ল্যাব:, সোনারগাঁও টেক্সটাইল, ওরিয়ন ইনফিউশন, বীকন ফার্মা, ওয়াইম্যাক্স, ফাইন ফুডস, পিপলস ইন্স্যুরেন্স ও স্কয়ার ফার্মা। তবে দর পতনে শীর্ষে থাকা ১০টি কোম্পানি হলো : ড্রাগন সোয়েটার, ওয়াটা কেমিক্যাল, এইচআর টেক্স, ফ্যামিলি টেক্স, এক্সিম ব্যাংক ফার্স্ট মি. ফা., আল-হাজটেক্স, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, প্রগ্রেসিভ লাইভ, বিবিএস ক্যাবলস ও নরদার্ন ইন্স্যুরেন্স।

ব্লøক মার্কেটে লেনদেন বেড়েছে : ডিএসইর ব্লক মার্কেটে গতকাল ২০টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের ২২ লাখ ২৬ হাজার ৭৯টি শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড হাতবদল হয়েছে মোট ১৬ কোটি ৫৬ লাখ ৮৭ হাজার টাকায়। এর মধ্যে পাঁচ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে। এই পাঁচ প্রতিষ্ঠানের মোট শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৩ কোটি ৭৭ লাখ টাকারও বেশি। আর প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- ওরিয়ন ইনফিউশন, এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স, রেনাটা লিমিটেড, লাভেলো আইসক্রিম এবং ঢাকা ডাইং অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে ওরিয়ন ইনফিউশনের। কোম্পানিটির সাত কোটি ৪৬ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্সের তিন কোটি ৯৬ লাখ ২৬ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। আর এক কোটি ৩৩ লাখ ৮৬ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন করেছে রেনাটা লিমিটেড। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে লাভেলো আইসক্রিমের ৮২ লাখ দুই হাজার টাকার এবং ঢাকা ডাইং অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেডের ৬৫ লাখ ১৭ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।

সিএসইতে সূচক বাড়ল সেঞ্চুরিতে : এ দিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সবগুলো সূচকই ইতিবাচক পথে ফিরেছে। তবে দু’টি সূচক সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে পয়েন্ট ফিরে পেল। সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ১২৯.৮৫ পয়েন্ট। আর সিএসই-৫০ সূচক ১৫.৪৬ পয়েন্ট, সিএসই-৩০ সূচক ২০৯.০৭ পয়েন্ট এবং সিএসসিএক্স বেড়েছে ৮৭.৩২ পয়েন্ট। লেনদেনে অংশ নেয়া ১৬৬টি কোম্পানির মধ্যে ৮৭টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৪৭টির এবং ৩২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। পঁচিশ লাখ ৪০ হাজার ৩২৮টি শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড লেনদেন হয়েছে পাঁচ কোটি ৭০ লাখ ১৮ হাজার ৩৭৬ টাকায়। গত বৃহস্পতিবার লেনদেন হয় চার কোটি ২৭ লাখ টাকা। ফলে লেনদেন বেড়েছে এক কোটি ৪৩ লাখ টাকা। বাজার মূলধন এখন ছয় লাখ ৯০ হাজার ৬০৪ কোটি ৮৯ লাখ টাকায় অবস্থান করছে।

প্রায় ১৬ লাখ শেয়ার হস্তান্তরের ঘোষণা : পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত পেপার প্রসেসিংয়ের দুই উদ্যোক্তা পরিচালক মোস্তফা জামাল মহিউদ্দিন ও মোস্তফা কামাল মহিউদ্দিন মোট ১৫ লাখ ৯৫ হাজার শেয়ার হস্তান্তরের ঘোষণা দিয়েছেন বলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) তথ্য প্রকাশ করেছে। কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালক মোস্তফা জামাল মহিউদ্দিন তার স্ত্রী আফরোজা বেগমের কাছে দুই লাখ ৯৫ হাজার শেয়ার এবং উদ্যোক্তা পরিচালক মোস্তফা কামাল মহিউদ্দিন তার ছেলে মোস্তফা আজাদ মহিউদ্দিনের কাছে ছয় লাখ ৫০ হাজার ও স্ত্রী দিলারা মোস্তফার কাছে ছয় লাখ ৫০ হাজার শেয়ার হস্তান্তর করবেন। আগামী ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে শেয়ারগুলো উপহার হিসেবে হস্তান্তর করবেন দুই উদ্যোক্তা পরিচালক।

বিশ্লেষকের বিশ্লেষণ : রয়্যাল ক্যাপিটাল ফিন্যান্সিয়াল পোর্টালের বিশ্লেষণে দেখা যায়, ডিএসইর বাজারের প্রধান সূচক (ডিএসইএক্স) ৭৩ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ১৭৯ পয়েন্টে শেষ হয়। অপর দিকে বাজার লেনদেন ৪৭ কোটি টাকা কমে ৩০৪ কোটি টাকা হয়েছে। ডিএসইএক্স ঊর্ধ্বমুখী ছিল। মূলধন গত দিনের তুলনায় ০.৫৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। যেখানে ভলিউম ৯ শতাংশ এবং টার্নওভার ১৪ শতাংশ কমেছে। ১৯ টি সেক্টরের মধ্যে ১৮টি সেক্টরের শেয়ার মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে এবং মাত্র একটি সেক্টরের শেয়ার মূল্য হ্রাস পেয়েছে। এসএমই বাজার সূচক (ডিএসএমইএক্স) ৪.৬৫ পয়েন্ট কমে এক হাজার ১০৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর লেনদেন হয়েছে ৬.৫ কোটি টাকা। যা গত দিনের তুলনায় ৫৯ শতাংশ কম।

 

 

 

 


আরো সংবাদ



premium cement