২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

মূলধনী মুনাফা কর হ্রাসে গতি ফিরেছে পুঁজিবাজারে

-

- ১২ খাতের কোম্পানির শেয়ার বিক্রেতা ছিল না
- কেনার চাপ ৯২ শতাংশ এবং বিক্রেতা মাত্র ৮ শতাংশ

দিনের বেচাকেনার শেষ প্রান্তে এসে গতকাল দেশের পুঁজিবাজারের উত্থান হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে শেয়ার বিক্রি হতে অর্জিত মূলধনী মুনাফার ওপর কর হার কমানোর খবরে সোমবার শেষ বেলায় বাজার ঘুরে দাঁড়ায় এবং শেয়ার কেনার চাপ ৯২ শতাংশে উন্নীত হয়। কিন্তু ছিল না তেমন বিক্রেতা। ১২টি খাতের কোম্পানির শেয়ারের কোনো বিক্রেতা ছিল না। মাত্র ৮ শতাংশ ছিল শেয়ার বিক্রেতা। ফলে কেনার চাপ বেশি থাকায় শেয়ারের দর বেড়েছে ৬৪.৮৯ শতাংশ বা ২৫৭টি কোম্পানির। আর ডিএসইর বাজারমূলধন ০.৫৯ শতাংশ বেড়েছে।
দুই পুঁজিবাজারের গতকালের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, লেনদেনের প্রথম দিকে বাজারের অবস্থা নেতিবাচক ছিল। দুপুর ১২.৩৪টা পর্যন্ত আড়াই ঘণ্টারও বেশি সময়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ৫.৩৩ পয়েন্ট এবং ডিএসই-৩০ সূচক ৫০.১ পয়েন্ট পতনে ছিল। তখন বেশির ভাগ বা ১৭৮টি কোম্পানি দর পতনের কবলে ছিল। এ সময় ২৭৫ কোটি টাকার কিছু বেশি লেনদেন হয়। দিনশেষে বাজার ঘুরে দাঁড়ায়। ডিএসই ব্রড ইনডেক্স বা ডিএসইএক্স রোববারের চেয়ে সূচক ৬১.৬৪ পয়েন্ট বেড়ে এখন ৫ হাজার ২৫২.৫০ পয়েন্টে, ডিএসই-৩০ মূল্য সূচক ২২.১৬ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ৯৩৭.৫৯ পয়েন্টে এবং ডিএসইএস শরিয়াহ সূচক ১৫.২৫ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ১৬২.৪০ পয়েন্টে অবস্থান করছে। লেনদেনকৃত ৩৯৮টি কো¤পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ২৫৭টির বা ৬৪.৮৯ শতাংশের, কমেছে ১০৭টির বা ২৭.০২ শতাংশের এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩২টি কোম্পানির।
এ দিন লেনদেনে অংশ নেয়া ৩৯৬টি কো¤পানির ২২ কোটি ১৮ লাখ ১৮ হাজার ৬৮১টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড বেচাকেনা হয়েছে মোট ৫৬৫ কোটি ২৪ লাখ ৬৩ হাজার ৪৪০ টাকায়। যা রোববারের তুলনায় ১৩৪ কোটি টাকা বেশি। ওই দিন লেনদেন হয়েছিল ৪৩১ কোটি টাকার বেশি। এমনকি গতকাল শেয়ার লেনদেনও বেড়েছে প্রায় প্রায় চার কোটির বেশি। ডিএসইর বাজার মূলধন ০.৫৯ শতাংশ বেড়ে এখন ৬ লাখ ৬৭ হাজার ৯৬ কোটি ৪২ লাখ টাকায় উন্নীত হয়েছে। ব্লক মার্কেটে ১৩.৪ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যা মোট লেনদেনের ২.৩৮ শতাংশ। এসএমই বাজার সূচক (ডিএসএমইএক্স) ৫.৩৫ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ৩১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৯.৬ কোটি টাকার শেয়ার। যা আগের দিনের তুলনায় ২৪ শতাংশ বেশি।

বিক্রেতা ছিল না ২৪ কোম্পানির : ডিএসইর তথ্য বলছে, গতকাল বাজারটিতে আড়াই শতাধিক কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে। এর মধ্যে দুই ডজন কোম্পানি ছিল বিক্রেতা সঙ্কটে। কোম্পানিগুলো হলো- বিডি ফাইন্যান্স, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, ইস্টার্ন হাউজিং, এস্কয়ার নিট কম্পোজিট, গ্লোবাল হেভি কেমিকাল, লিনডে বিডি, মতিন স্পিনিং, মিডল্যান্ড ব্যাংক, মিথুন নিটিং, মনোস্পুল পেপার, নিউ লাইন ক্লোথিংস, ন্যাশনাল টি, পেপার প্রসেসিং, রহিমা ফুড ছাড়াও আরো ১০টি প্রতিষ্ঠান। এসব কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করার মতো বিনিয়োগকারী ছিল না।
টাকায় লেনদেন, দর বৃদ্ধি ও পতনে শীর্ষ ১০ : ডিএসইতে টাকায় লেনদেনের ভিত্তিতে শীর্ষ ১০টি কো¤পানি হলো : বিএসসি, ফারইস্ট নিটিং, ওরিয়ন ইনফিউশান, ইসলামী ব্যাংক, ইউনিক হোটেল, মিডল্যান্ড ব্যাংক, ওরিয়ন ফার্মা, জেনেক্স ইনফোসিস, ইবনে সিনা ও এশিয়াটিক ল্যাব। আর দর বৃদ্ধির শীর্ষ ১০টি কো¤পানি হলো : মনোস্পুল পেপার, ইস্টার্ন হাউজিং, গ্লোবাল হেভি কেমিক্যাল, রহিমা ফুড, পেপার প্রসেসিং, বিএসসি, আলিফ ইন্ডা:, মতিন স্পিনিং, মিডল্যান্ড ব্যাংক ও এস্কয়ার নিটিং।
অপর দিকে দর পতনে শীর্ষ ১০টি কো¤পানি হলো- ভ্যানগার্ড এএমএল, রূপালী ব্যাংক, ব্যালান্সড ফান্ড, আইএফআইএল ইসলামিক মি. ফা-১, এফবিএফ ইনকাম ফান্ড, জাহিন স্পিনিং, সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, এনসিসিবিএল মি. ফা-১, শ্যামপুর সুগার, এলআর গ্লোবাল মি. ফা-১, ফার্স্ট ফাইন্যান্স লি. ও আইসিবি এএমসিএল ২য় মি. ফা.।

ব্লক মার্কেটে ৩৬.৩৭ লাখ শেয়ার ট্রেড : এ দিকে গতকাল ডিএসইর ব্লক মার্কেটে ২৮টি কোম্পানির মোট ৩৬ লাখ ৩৭ হাজার ৭২২টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড হাতবদল হয়েছে মোট ১৩ কোটি ৪৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকায়। এর মধ্যে আট কোম্পানির শেয়ার সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বলে ডিএসইর তথ্যে জানা গেছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- মিডল্যান্ড ব্যাংক, ফাইন ফুডস, লাভেলো আইসক্রিম, ওরিয়ন ফার্মা, ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স, ডমিনেজ স্টিল, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক ও ওরিয়ন ইনফিউশন লিমিটেড। এই আট প্রতিষ্ঠানের মোট শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১১ কোটি ৭০ লাখ টাকারও বেশি। আর প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে মিডল্যান্ড ব্যাংকের শেয়ার। গতকাল ব্যাংকটির ৩ কোটি ৭৮ লাখ ৪৯ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ফাইন ফুডসের ৩ কোটি ৬৮ লাখ ৬৪ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। আর ১ লাখ ২২ লাখ ৭০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে লাভেলো আইসক্রিমের। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে- ওরিয়ন ফার্মার ৮৯ লাখ ৪৬ হাজার টাকার, ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্সের ৫২ হাজার টাকার, ডমিনেজ স্টিলের ৫০ লাখ ৪৮ হাজার টাকার, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ৫০ লাখ ৩৮ হাজার টাকার এবং ওরিয়ন ইনফিউশন লিমিটেডের ৩১ লাখ ৩৩ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
২৬.৭৮ লাখ শেয়ার কিনলেন দুই উদ্যোক্তা : ডিএসই জানায়, পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত দুই কোম্পানির দুই উদ্যোক্তা ২৬ লাখ ৭৮ হাজার শেয়ার ক্রয়সম্পন্ন হয়েছে। কোম্পানি দু’টি হলো : সাউথইস্ট ব্যাংক ও এনআরবিসি ব্যাংক। জানা গেছে, সাউথইস্ট ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালক জোসনা আরা কাশেম ১৩ লাখ শেয়ার এবং এনআরবিসি ব্যাংকের উদ্যোক্তা সরোয়ার জামান চৌধুরী ১৩ লাখ ৭৮ হাজার ১৩২টি শেয়ার ক্রয় সম্পন্ন করেছেন।

ছেলেকে ১.৪৯ কোটি শেয়ার দিলেন : এ দিকে তালিকাভুক্ত স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের পরিচালক জাহেদুল হক এক কোটি ৪৯ লাখ শেয়ার হস্তান্তর সম্পন্ন করেছেন বলে ঢাকা সটক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) তথ্য প্রকাশ করেছে। ডিএসইর তথ্যে জানা গেছে, ওই পরিচালক পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ১ কোটি ৪৯ লাখ ৫০ হাজার শেয়ার হস্তান্তর সম্পন্ন করেছেন। তিনি ছেলে লাফিজুল হককে উপহার হিসেবে শেয়ারগুলো হস্তান্তর করেছেন।
সিএসইতে লেনদেন অর্ধেকে নেমেছে : সূচক বৃদ্ধি ও বাজার ইতিবাচক পথে ফিরলেও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন রোববারের চেয়ে অর্ধেকে নেমেছে। সিএসই-৩০ সূচক ৯১.১৬ পয়েন্ট বেড়ে এখন ১২ হাজার ৯৫.৬০ পয়েন্টে, সিএসসিএক্স ৭৭.০৭ পয়েন্ট বেড়ে আট হাজার ৮৭৪.২০ পয়েন্টে এবং সিএএসপিআই ১২২.০২ পয়েন্ট ফিরে পেয়ে এখন ১৪ হাজার ৫৮৪.৯৩ পয়েন্টে উঠে এসেছে। লেনদেনে অংশ নেয়া ২১৪টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ১৪২টির বা ৬৩.৩৫ শতাংশের, পতনের শিকার হয়েছে ৫৬টি এবং দর পরিবর্তন হয়নি এমন কোম্পাানি হলো ১৬টি। ২৮ লাখ ৯৩ হাজার ৩৭১টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড হাতবদল হয়েছে মোট ৬ কোটি ৫৫ লাখ ৮৭ হাজার ৭১৬ টাকায়। এই লেনদেন আগের দিন রোববারের তুলনায় প্রায় ৬ কোটি টাকা কম। ওই দিন লেনদেন হয়েছিল ১২ কোটি ৯ লাখ টাকার বেশি।

 


আরো সংবাদ



premium cement