‘চেয়ারটা পড়ে আছে কিন্তু আমার ভাই কবরে শুয়ে আছে’
- রবিন আহম্মেদ, পায়রা বন্দর (পটুয়াখালী)
- ২২ আগস্ট ২০২৪, ১০:৩৮
‘আমার ভাই যে চেয়ারটায় বইতো আমার পাশেই চেয়ারটা পড়ে আছে কিন্তু আমার ভাই কবরে শুয়ে আছে। মনে হইতেছে আমার পাশে এখনো ভাই বইয়া আছে। ও তো কোনো দোষ করে নাই ওরে ক্যান মারলো!’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত জামালের বড়ভাই আলমাছ ভূইয়া
গত ১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে বিজিবির গুলিতে নিহত হন ব্যবসায়ী জামাল। নারায়ণগঞ্জের জালকুড়ি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ফরজ আলী চেয়ারম্যান মার্কেটে তাদের পোল্ট্রি মুরগির দোকানে ওইদিন বিকেলে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। চিকিৎসার জন্য পাশের এক হাসপাতালে নেয়ার পথে মৃত্যু হয় তার।
জানা যায়, পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার মৌডুবী ইউনিয়নের খাসমহলের বাসিন্দা জামাল ভূইয়া। পরিবারের সবাই ডাকতেন শাহ জামাল বলে। মৃত হারুল ভূইয়া ও মেহের জান দম্পতির ছয় ছেলে-মেয়ের মধ্যে জামাল ভূইয়া ছিলেন সবার ছোট। ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে পরিবার ছেড়ে ঢাকায় পাড়ি জমান বছর দুই আগে। ভাগ্য বদলের চেষ্টায় বড় দুই ভাইয়ের সাথে নিজের সম্বলটুকুকে পুঁজি করে যোগ দেন পোল্ট্রি মুরগির ব্যবসায়। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। পরিবারের স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে এনেছেন ঠিকই কিন্তু নিজে ফিরলেন কফিনবন্দী হয়ে।
নিহত জামাল দু’ভাইয়ের সাথে দেখাশোনা করতেন পোল্ট্রি মুরগির ব্যবসা। এক ভাই গ্রামের বাড়িতে গেলে অপর দু’ভাই সামলাতেন ব্যবসা। কখনোই বন্ধ হয়ে থাকতো না তাদের দোকান। যার কারণে তিন ভাইয়ের ব্যবসা চলছিল বেশ ভালোভাবেই।
সাত মাসের অবুঝ শিশু আবদুল্লাহ যে বাবা হারিয়েছেন সে খবর হয়তো পৌঁছায়নি তার কাছে কিন্তু স্বামী হারানোর বেদনায় দিশেহারা জামালের স্ত্রী। অন্যদিকে ছেলে হারানোর শোকে মায়ের আহাজারি যেন থামছেই না। আদরের ছোট ছেলে জামালের স্মৃতি মনে করে অনবরত চলছে মা মেহেরজানের আর্তনাদ।
নিহত জামালের বড়ভাই আলমাছ ভূইয়ার সাথে কথা হলে তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘স্বৈরাচারী সরকার পতন হইছে, এ জাতি নতুন করে স্বাধীন দেশ পাইছে কিন্তু আমি তো আমার ভাইরে আর পামু না। আমি চিরদিনের জন্য আমার ভাইকে হারাইছি, কষ্টে আমার বুকটা হাইট্টা যায়।’
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা