১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১ পৌষ ১৪৩০, ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

তজুমদ্দিনে হরিণের সাথে বনকর্মীর সখ্যতা

তজুমদ্দিনে হরিণের সাথে বনকর্মীর সখ্যতা - ছবি : নয়া দিগন্ত

কোনো কোনো বন্যপ্রাণি পোষা হয়ে মানুষের সাথে সখ্যতার দৃষ্টান্ত থাকলেও বনের হরিণ পোষা হয়ে মানুষের সাথে সখ্যতা হয়েছে এমন দৃষ্টান্ত বিরল। হরিণের সাথে বনকর্মীর সখ্যতা রীতিমত অবাক করে দিয়েছে। হরিণটি দিনরাত মানুষের সাথেই থাকে, হাটে-বাজারে যায়, ঘাস খাওয়ার পাশাপাশি মানুষের খাবারও খায়। বনকর্মীরা হরিণটির নাম দিয়েছেন শশী। নাম ধরে ডাকলেই সাড়া দেয় হরিণটি। এমন দৃষ্টান্ত সৃষ্টি হয়েছে দৌলতখান রেঞ্জের অধীন ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার শশীগঞ্জ বনবিটে আউটসোসিংয়ে নিয়োগ পাওয়া বনকর্মী নুরুল্লাহর সাথে।

আলাপকালে জানা যায়, প্রায় চার মাস আগে চরমোজাম্মেলে বন থেকে দলছুট হয়ে লোকালয়ে এসে একটি বাচ্চা প্রসব করে শিকারিদের ভয়ে বনে চলে যায় মা হরিণ। পরে স্থানীয়রা বন বিভাগের লোকজনকে খবর দিলে বনকর্মীদের একটি দল শশীগঞ্জ বিটের বিট কর্মকর্তা কাজী রোমেল হোসেন নেতৃত্বে চরে গিয়ে হরিণের বাচ্চাটি উদ্ধার করে শশীগঞ্জ বনবিটের আওতায় এনে লালন-পালন শুরু করেন নুরুল্লাহ সিকদার নামে এক বনকর্মী। প্রথমদিকে নুরুল্লাহ হরিণের শাবকটিকে দৈনিক দেড় লিটার গরুর দুধ খাওয়াতেন এবং রাতের বেলায় তার সাথে একই খাটে রাখতেন। এভাবে মা-বাবার পরম মমতায় লালন-পালন হওয়া হরিণ শাবকটি একপর্যায়ে নুরুল্লাহ সাথে ভাত, কলা-রুটি, বিস্কুটসহ যাবতীয় খাবার খাওয়া শুরু করায় দুধ খাওয়ানো বন্ধ করে ভাতের মার (ফেন) খাওয়ানো শুরু হয়।
নুরুল্লাহর সাথে হরিণ শাবকটির এমন সখ্যতা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ স্থানীয়দের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। প্রতিদিন স্থানীয় লোকজন তাদের এমন বিরল সখ্যতা দেখতে ভীড় জমাচ্ছে শশীগঞ্জ বনবিট অফিসে।

স্থানীয় দলীল লেখক খোকন দাস (৪৫) বলেন, বনকর্মী নুরুল্লাহর সাথে একদিনের উদ্ধার হওয়া হরিণের বাচ্চাটির যে সখ্যতা গড়ে উঠছে তা সত্যিই বিরল। প্রতিদিনই হরিণ ও মানুষের এমন সখ্যতা দেখতে একাবাসী ফরেস্ট অফিসে ভীড় জমাচ্ছে। হরিণের সাথে মানুষের এমন সখ্যতা সমাজে একটি বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন।

বনকর্মী নুরুল্লাহ সিকদার বলেন, ‘হরিণটি এখন আমাকে ছাড়া কিছুই বুঝে না। হরিণের বাচ্চাটি সারাক্ষণ আমার সাথে থাকায় মানুষের খাবার ভাত, মাছ, তাজা তরকারিসহ সব খায়।’

তিনি আরো বলেন, ‘সরকারি নিয়মানুযায়ী হরিণ শাবকটি বনে, চিড়িয়াখানা অথবা সাফারি পার্কে অবমুক্ত করতে হবে। তখন হয়তো সময়িক কষ্ট হবে। তারপরও সরকারি আইন মানতেই হবে।’

জানতে চাইলে দৌলতখান রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো: সাইফুল ইসলাম জানান, ‘হরিণের বাচ্চাটি দীর্ঘদিন আমাদের কর্মীরা লালন-পালন করায় মানুষের সাথে মিশে গেছে। তাই এটি বনে অবমুক্ত করলে শিকারির কবলে পড়ার ঝুঁকি থাকে। এ কারণে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী হরিণটির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’


আরো সংবাদ



premium cement